খুলনায় সিটি নির্বাচনে সরকার-ইসির অযোগ্যতা প্রমাণ হয়েছে: ফখরুল

  16-05-2018 03:23AM

পিএনএস ডেস্ক:খুলনা সিটি করপোরশন নির্বাচনে আবারও বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অযোগ্যতা প্রমাণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। দলীয় সরকারের পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচন কখনও সম্ভব নয়।’

সরকার পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিএনপির কর্মীদের কেন্দ্রের আশেপাশে দাঁড়াতে দেয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘ধানের শীষের পোলিং এজেন্টেদের মারধর করে বের করে দিয়েছে। ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজেরাই নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছে। ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছে। এই হলো আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু ও চমৎকার নির্বাচন। এ সরকারের অধিনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে সরকারে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। নাহলে কোনো অবস্থাতেই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব না।’

মঙ্গলবার (১৫ মে) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। খুলনা সিটি নির্বাচনে আবারও প্রমাণ হলো এ সরকার ও ইসির অধীনে কোনও নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। তাই আমাদের ও জনগণের দাবি নির্বাচনের আগে সঙসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশণ পুনর্গঠন করতে হবে। এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সোনা মোতায়েন করতে হবে। নাহলে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজ খুলনায় সেনা মোতায়েম থাকলে ফলাফলফল যাই হোক ভোট ব্যবস্থা এমন হতো না। বিরোধী দল সুন্দরভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমকে সরকার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। সেটা প্রমাণ হয়েছে যখন আমরা ওখান থেকে খবর পাচ্ছি এক ধরনের, সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে এক ধরনের, এবং অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রচার হয়েছে আবার ভিন্নভাবে। আসলে তারা আসল ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচার করতে দেয়নি।’

বিএনপি এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘আজ যখন সংবাদ এলো দুপুর ১টার পর একের পর এক কেন্দ্র দখল হয়েছে তখন সিইসিকে ফোন করি, বলি খুলনা নির্বাচনে অনিয়মের কথা। তিনি আমাকে বলেন, আপনারা রাজনৈতিক দল দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিন। কোথাও কোনো অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি। আমি যখন বললাম আমি আপনাকে সোর্স বলছি তখন সিইসি নুরুল হুদা বলেন, কোনো টিভি চ্যানেলে দেখায়নি। তখন আমি সংবাদমাধ্যমগুলোর নাম বললে তিনি বলেন আমি দেখছি। এখনও তিনি দেখছেন। এর আগে গাজীপুরের সিটি নির্বাচনে আবদুল্লাহ আল নোমানকে আটকের বিষয়ে জানালে তিনি তখনও বলেছেন আমি দেখছি। তিনি শুধুই দেখছেন।’

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার পুলিশকে বিরোধী দলের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বেশির ভাগ জায়গায় পুলিশ দায়িত্ব নিয়ে বিরোধী দলের ওপর ছড়াও হচ্ছে। এটা কখনও একটা জাতির জন্য ভালো কিছু ভয়ে আনবে না। কিন্তু এখন দেখি পুলিশ নুজেরা উদ্যোগী হয়ে একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলকে প্রটেক্ট করছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যিনি নিরপেক্ষ সরকারের জন্য আন্দোলন করেছেন তিনিই ক্ষমতায় এসে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা বাতিল করেছেন। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনেছে যাতে একদলীয় ভোট করে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের যে দোহায় দেয়া হয় সেখানেও বলা ছিলো জাতির স্বার্থে ২ টি নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার। কিন্তু সেটিও তারা মানে নি। সরকার পুরোপুরি নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। এমনকি সাবেক সিইসি শামসুল হুদা ও কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন নিজেই বলেছে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়। দেশে এখন একটা ফ্যাসিবাদ চলছে, কোনো স্বাভাবিক অবস্থা নেই। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাধীন ভাবে চালাতে পারছে না। বারবারই আমরা সরকারকে বলছি আসুন আলোচনা করুন, কিভাবে একটা সুষ্ঠুতা ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যায় সেটির পথ বের করি। কিন্তু সরকার এসবে কর্ণপাত করছে না। গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করে আছে। কিন্তু সাময়িক এভাবে থাকা গেলেও বেশিদিন এভাবে ক্ষমতা দখল করো থাকা যায় না।’

বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অনেক বেশি অসুস্থ, কিন্তু সরকার এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা বার বার সরকারকে বলছি বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তাকে মুক্তি দিন। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে দেশে কনো নির্বাচন হবে না। কারণ দেশের প্রধান নেত্রীকে মুক্তি না দিকে কিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? তাই নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হলে আগে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রমুখ।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন