আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আতঙ্ক তৈরি করাই সরকারের উদ্দেশ্য: রিজভী

  22-05-2018 03:04PM


পিএনএস ডেস্ক: আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আতঙ্ক তৈরি করাই সরকারের উদ্দেশ্য মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, পবিত্র মাহে রমজানেও পোশাকে ও সাদাপোশাকে পুলিশ তল্লাশির নামে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হয়রানি চলছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি, গ্রেফতার কিংবা জেল গেটে গ্রেফতার চলছেই।

তিনি বলেন, গতরাতে সেহরীর কিছুক্ষণ আগে নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর রাজধানীর বনানীর সিলেট হাউসের বাসায় ডিবি পরিচয়ে পুলিশের তল্লাশীর নামে তান্ডব চালায়। জোরে জোরে দরজায় ধাক্কা দিয়ে ইলয়াস আলীর অসুস্থ স্ত্রীকে দরজা খোলার জন্য বলে। আতঙ্কিত হয়ে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা আমাকেসহ বিএনপির নেতৃবৃন্দকে ফোনে আকুতি জানাতে থাকে। পরে ইলিয়াস আলীর বাসার সামনে গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে ইলিয়াস আলীর বাসার বাইরে অবস্থান নেয়া ডিবি পুলিশ পরিচয় ব্যক্তিরা চলে যায়। বিরোধী দলের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরির জন্যই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমি সরকারি সাদা পোশাকধারী বাহিনীর কাপুরুষচিত সন্ত্রাসী ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এছাড়া সিটি নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের কাজ করার নির্দেশ দেয়া মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে মোড়লগিরি করছেন বলে রিজভী মন্তব্য করেন।

আজ মঙ্গলবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কবীর মুরাদ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মো: মুনির হোসেন, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যার নামে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানুষ হত্যা প্রাত্যহিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যা মানবধিকারের পরিপন্থী ও আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। মানবধিকারের এ রক্তাক্ত মূর্তি দেশবাসীর মধ্যে ভয়ের শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। এ অনাচারের সরকারি প্রশাসনের মানবতার অধঃপতন আরো নিচের দিকে নামছে। গত দুদিন আগেও আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। বেআইনিভাবে মানুষ হত্যার অধিকার কারো নেই। গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়। বেআইনি মৃত্যুদ- অপরাধ দমনের মানদন্ড হতে পারে না। গতরাতেও চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী, নেত্রকোনা, দিনাজপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১০জনকে ক্রসফায়ার দেয়া হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করেছিলাম এর পেছনে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সেটি এখন ফুটে ওঠতে শুরু করেছে। আসলে মাদক নির্মূলের নামে বিচারবর্হিভূত হত্যার যে হিড়িক চলছে এর গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হচ্ছে মাদকবিরোধীদের নির্মূল করতে যেয়ে টার্গেট করে বিরোধী দলের তরুণ নেতা-কর্মীদের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করে মেরে ফেলা। গতরাতে নেত্রকোনায় কথিত ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে ছাত্রদলের সদস্য আমজাদ হোসেনকে।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আতঙ্ক তৈরি করাই সরকারের উদ্দেশ্য। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচনের সুখবর আওয়ামী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে নেই। মানুষকে ভয় পাইয়ে দেয়ার নতুন প্রকল্প। সুদূরপ্রসারী নীল নকশা। এ রমজান মাসে কর্দমাক্ত খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে জনজীবনে নাভিশ্বাস এবং আইনশৃঙ্খলার করুণ পরিণতিতে দেশের বেহাল অবস্থা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই দৃষ্টি ফেরানোর কৌশলে লিপ্ত রয়েছে কি না সে প্রশ্নই জনমনে উঁকি দিয়েছে।

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে নই আমরা। অপরাধিদের গ্রেফতার করুন, আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করুন, আইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করুন। দেশের প্রচলিত আইনেই তো মাদক প্রতিরোধ সম্ভব। কিন্তু তা না করে সারাদেশে বন্দুকের অপব্যবহারে মানুষ হত্যা কোনো সভ্য সমাজের কাম্য হতে পারে না। আবার মাদক বিরোধী অভিযানের নামে কাদেরকে ধরা হচ্ছে, মাদকের গডফাদারদের নয়, চুনোপুঁটিদের। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত সাড়ে ৯ বছরে মাদকে ছেয়ে গেছে দেশ। গোটা যুবসমাজকে ধ্বংস করতে পরিকল্পিতভাবে মাদকের বিস্তার ঘটানো হয়েছে। এর পেছনে দায়ী ব্যক্তিরা হলেন সরকার দলীয় এমপি বদির মতো রাঘব বোয়ালরা। যারা মাদক ব্যবসার মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা আবার তাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করতে দেখা গেছে। গণমাধ্যমে তো ধারাবাহিকভাবে জেলাওয়ারী রাঘব বোয়ালদের নাম প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি পুলিশের কিছু উচ্চ পর্যায়ের লোকেরাও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, সেগুলো গণমাধ্যমে এসেছে।

রিজভী বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে নানা চ্যানেলে মাদক এসে ঢুকছে বাংলাদেশে। এ চ্যানেলগুলোর উৎসমুখ বন্ধ করতে পারেনি কেন সরকার? মাদকের আসল গডফাদারদের ধরছেন না কেনো? সেখানেই আপনাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যায়। এখন জনগণ সব সময় আতঙ্কের শিহরণ অনুভব করছে। গুম খুনের কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী জনসমাজের চারপাশে আতঙ্ক ছড়ানো সেই সব চিহ্নিত কর্মকর্তাদের দিয়েই বেআইনিভাবে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। আমি আবারো ক্রসফায়ারের নামে বেআইনি হত্যা বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি। সকল বিচার বহির্ভূত হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। একই সঙ্গে দেশী-বিদেশী সকল মানবধিকার সংগঠন, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজকে গুম, খুন ও বেআইনি বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সাহেব বাজার সিটি করপোশেনের মার্কেটে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি ব্যানার ঝুলিয়েছিলেন কিন্তু পুলিশ সরকারি দলের নির্দেশে বর্তমান মেয়রের শুভেচ্ছা ব্যানারটি খুলে ফেলে। এ ব্যাপারে রাজশাহীর মেয়র পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলে পুলিশ বরং আওয়ামী ক্যাডারের মতোই আচরণ করে এবং বেআইনিভাবে বর্তমান মেয়রের ব্যানারটি খুলে ফেলার কাজটির পক্ষে অবস্থান নেয়। বর্তমান শেখ হাসিনার মনার্কীর শাসনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিয়াল বাহিনীর মতো কাজ করছে। এ কাজ একটি জনপ্রতিনিধির সঙ্গে চরম অবজ্ঞা।

রিজভী আরো বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে গাজীপুরের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় গাজীপুর এলাকার সংসদ সদস্য ও সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির উদ্দেশে তিনি এ নির্দেশ দেন। যা আজ সকল গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। যা নির্বাচন আচরণ বিধির সুস্পষ্ট লংঘন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নির্বাচন কমিশনকেও প্রভাবিত করবে। অবৈধ ক্ষমতা পেয়ে প্রধানমন্ত্রী আইনকানুনও মানতে রাজি নন। এখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে মোড়লগিরি করছেন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন