‘ভারতে থেকে আট বছরে এক বালতি পানিও আনতে পারেনি সরকার’

  24-05-2018 12:52PM

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকতে সার্বভৌমত্বকে ক্ষয়িষ্ণু করে ভারতকে সব কিছু উজাড় করে দিয়ে যাচ্ছেন বিনিময়ে কিছুই পাননি। বিগত আটটি বছর ধরে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়ে আসছে যে, তারা ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করতে যাচ্ছে। বন্ধুত্বের এত দহরম মহরম অথচ শেখ হাসিনা ভারত থেকে এক বালতি পানিও আনতে পারেননি আট বছরে। কিন্তু বছর যায় বছর আসে আর বাংলাদেশ অবৈধ সরকার শুধু একতরফাভাবে ভারতকে সবকিছু দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য পানির হিস্যা বুঝে পাচ্ছে না।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন। এছাড়া মাদক ব্যবসার চেয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যা ভয়ঙ্কর অপরাধ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, আগামীকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো ভারত সফরে যাবেন। সেখানে তিনি একটি ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন ও একটি ডি-লিট ডিগ্রি গ্রহণ করবেন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়েও আলোচনা হতে পারে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। কিন্তু শেখ হাসিনার এবারের সফরেও বাংলাদেশের মানুষের বহু প্রতিক্ষিত তিস্তা চুক্তির বিষয়ে কোনো এজেন্ডা নেই। গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বহুল প্রত্যাশিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে অগ্রগতির কোনো তথ্য জানাতে পারেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রধানমন্ত্রী কেবলই পরদেশের কাছে সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে পারিশ্রমিক হিসেবে পেয়েছেন শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকা। তিনি জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার বিদ্যাটাই ভাল করে রপ্ত করেছেন।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, এবিএম মোশাররফ হোসেন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ।

রুহুল কবির রিজভী লিখিত বক্তব্যে বলেন, জগন্নাথ বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ফয়সাল আহমেদ সজলকে গত দুইদিন ধরে খুঁজে পাওয়া পাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই তাকে তুলে নিয়ে গেছে বলে তার সহকর্মীরা আশঙ্কা করছে। আমাদেরও বিশ্বাস এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি আওয়ামী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। সেই পুরনো কায়দায় বিরোধী দল নিধনের হাতিয়ার হিসেবে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে। কারণ সে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার বিরোধী আন্দোলনের একজন তরুণ নেতা। রাজপথের সাহসী সৈনিক। বেছে বেছে বিরোধী দলের তরুণ নেতা-কর্মীদের যেভাবে তুলে নেয়া হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে অথবা বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হচ্ছে তারই ধারাবাহিক শিকার হলো এই মেধাবী ছাত্র নেতা সজল। এ ঘটনায় দেশব্যাপি গভীর উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও ভয় আরো ঘণীভূত হলো।

তিনি বলেন, প্রায় ৪৮ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও তার খোঁজ না পাওয়ায় তার পরিবার, সহকর্মীসহ আমরা চরম উৎকণ্ঠিত। এটি যেন সেই ইলিয়াস আলী, চৌধুরি আলম, সাইফুল ইসলাম হিরুসহ দেশব্যাপি অসংখ্য গুমেরই নতুন চিত্র। একের পর এক এই ঘটনা মর্মস্পর্শী, অবিশ্বাস্য ও জীবন প্রবাহ রুদ্ধ করে দেওয়ার মতোই অভিঘাত। বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম খুনের প্রতিযোগিতায় মূলত বিরোধী দল নিধনই হচ্ছে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য এজেন্ডা। এমন পরিস্থিতিতে সজলের নিখোঁজের ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং একই সূত্রে গাঁথা। এই রক্ত হিম করা ঘটনা বিরোধীদলসহ দেশের সাধারণ মানুষকে আবারো নতুন করে গভীর দুশ্চিন্তার মধ্যে পতিত করলো।

রিজভী জানান, গতরাতেও মাদক নির্মূলের নামে বিচারবহির্ভূতভাবে ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমগুলো, সোস্যাল মিডিয়াসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো বেআইনি মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে তুমুল সমালোচনা করলেও এখনো থামছে না বিচারবহির্ভূত হত্যা। গতকাল বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে মাদক ব্যবসার চেয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যা ভয়ঙ্কর অপরাধ। আমরাও চাই দেশ থেকে মাদক নির্মূল হোক, মাদকের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক কিন্তু বিচারবহির্ভূতভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা নয়। কিন্তু প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের ধরা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, গতকালও সরকারের শরীক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বলেছেন, মাদক স¤্রাটরা সংসদেই আছে তাদের ধরে বিচার করুণ। গণমাধ্যমেও মাদকের গডফাদারদের তালিকা প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু তাদের ধরা হচ্ছে না। মানুষ হত্যা করে কোনোদিন মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। এর পিছনে সরকারের অসৎ উদ্দশ্য আছে। আমরা শুরু থেকেই বলেই আসছি মাদক নির্মূল সরকারের উদ্দেশ্য নয়। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দল নিধনের জন্যই মাদক বিরোধী অভিযানের নামে দেশজুড়ে বিচারবহির্ভূত মানুষ খুনের জোরেশোরে ধুমধাম চলছে।

বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, বেআইনি হত্যার মাধ্যমে দেশবাসীকে আতঙ্কিত করার ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে তা হলো একটি রক্তাক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষ ভয় পাইয়ে দেওয়া যাতে তারা অবৈধ সরকারের অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহসী না হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো আরেকটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করাই তাদের নীল নকশা। সুতরাং ওই নির্বাচনের পূর্বে যদি মাঠ সমতলের বদলে রক্তাক্ত থাকে তাহলে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আসতে সাহসী হবে না। মূলত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আসন্ন নির্বাচনের পরিবেশ অনিশ্চিত করে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার জন্যই বাংলাদেশের জনপদের পর জনপদ রক্তাক্ত করা হচ্ছে। সজলকে গুম করা সরকারের একটি সিগন্যাল। এ ঘটনা সামনে এক ভয়ঙ্কর নৈরাজ্যের আভাসই ফুটে উঠেছে।

রিজভী বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে নিখোঁজ ছাত্রনেতা ফয়সাল আহমেদ সজলের সন্ধান দাবি করছি। অবিলম্বে তাকে জনসম্মুখে উপস্থিত করাসহ তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। সরকারের শত অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দেশে-বিদেশে সর্বত্র আজ জোরালোভাবে ধিকৃত হচ্ছে বর্তমান সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নারকীয় ঘটনা। সরকারের উম্মত্ত প্রতিহিংসায় আটক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আন্দোলনে জনতার মিছিল চারদিক থেকে নিঃশব্দে পায়ে ধেয়ে আসছে। এ মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে, বিজয় না হওয়া পর্যন্ত।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন