চার সিটি নির্বাচন: নানা চিন্তা বিএনপিতে

  22-06-2018 02:24AM


পিএনএস ডেস্ক: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের শেষ পরীক্ষা হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। খুলনা সিটি নির্বাচনে পুলিশের গ্রেপ্তার-হয়রানি, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বিস্তার ও ভোট জালিয়াতির কারণে পাল্টে গিয়েছিল পরিবেশ ও ফলাফল। সে নির্বাচনের পর বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলটির সকল স্তরে। কয়েকদিন ধরে গাজীপুরে বিএনপি নেতাকর্মীসহ দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তদের গ্রেপ্তার-হয়রানির পর নতুন করে ভাবছে বিএনপি। সোমবার দলের স্থায়ী কমিটি ও বুধবার জোটের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনাও করেছেন নেতারা। সে প্রেক্ষিতে গাজীপুরে খুলনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে পরবর্তী সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি নির্বাচন থেকে সরে আসতে পারে বিএনপি।

এ জন্য ওই তিন সিটি নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রাপ্তদের কাছে প্রত্যাহারের সই রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল বিকাল ৫টায় সাক্ষাৎকার পর্ব শুরু হয়। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলের মনোনয়ন বোর্ডের মুখোমুখি হন। বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যসহ দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, রাজশাহীতে একজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় প্রার্থিতা চূড়ান্তকরণে কোনো ঝামেলা নেই। সিলেটে একাধিক নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও সার্বিক বিচারে সবার থেকে এগিয়ে আছেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ফলে সিলেটেও প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। তবে বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রার্থী বদলের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে প্রতিটি সিটি করপোরেশনের বিএনপি দলীয় মেয়ররা জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। দলের নেতাকর্মীদের আগলে রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন বরিশালের বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয় নেতাকর্মীদের। সবমিলিয়ে সাক্ষাৎকার পর্বে সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে বরিশাল সিটিতে মনোনয়ন চূড়ান্তের বিষয়টি। তবে এখনই সেটা ঘোষণা দেবে না বিএনপি। প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার শেষে দলের নীতিনির্ধারকসহ জোটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে চূড়ান্ত প্রার্থিতা ঘোষণা করা হবে।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাজশাহীর একক প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ সিলেটে ৬ জন ও বরিশালে ৮ জন নেতা সংগৃহীত মনোনয়নপত্র জমা দেন। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাজশাহীর বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু মনোনয়নপত্র জমা দেন। দুপুরে নয়াপল্টনে নিজেই মনোনয়নপত্র জমা দেন বরিশালের মেয়র আহসান হাবিব কামাল। গুলশান অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আর নয়াপল্টনে মনোনয়নপত্র জমা দেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, সহ-সভাপতি প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, মহানগর নেতা আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকি ও ছালাহউদ্দিন রিমন। এরপর বরিশাল বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ মনোনয়নপত্র জমা দেন। দুপুরের পর বরিশাল সিটিতে বিএনপির মনোনয়নপত্র জমা দেন দক্ষিণ জেলা সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহীন, জিয়া উদ্দিন শিকদার, ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আফরোজা খানম নাসরিন, সাবেক ছাত্রনেতা আলী হায়দার বাবুল। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময়ে প্রার্থীরা জামানত হিসেবে প্রত্যেকেই ২৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। বরিশাল সিটিতে যুবদল নেতা আকন্দ বিপ্লব মনোনয়নপত্র কিনলেও তা জমা দেননি। এদিকে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০শে জুলাই রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ২৮শে জুন। ৯ই জুলাই পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৫ই জুন একই দিনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আরিফুল হক, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও আহসান হাবিব কামাল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন