সিটি নির্বাচনের ‘মুখোশ’ খোলার লক্ষ্য বিএনপির

  04-07-2018 09:45AM


পিএনএস ডেস্ক: কৌশলগত কারণে সিটি নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনের ফলাফল কী হবে, তা দলটির অনুমিতই। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় এসব নির্বাচন ঘিরে সরকারি দলের অনিয়ম ও ইসির ব্যর্থতা তুলে ধরার মাধ্যমে তাদের ‘মুখোশ’ খুলে দেয়াই এক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য বলে দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন।

খুলনা ও গাজীপুরে পরাজয়ের পর বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। প্রতিটি নির্বাচনে ফল ছিনতাই হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ দলটির একটি অংশ হাইকমান্ডের এমন সিদ্ধান্তের সাথে একমত হতে পারছে না। তাদের বক্তব্য- জেনেশুনে কেন দল আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কিন্তু এই হারের মধ্যেই রাজনৈতিক সাফল্য দেখছে দলটির শীর্ষ মহল। তাদের যুক্তি হচ্ছে- খোলা চোখে হার দেখা গেলেও এর মধ্যে দলীয় কৌশল রয়েছে। ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দলটির নেতারা বলেছেন, আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। অক্টোবরে ঘোষণা করা হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। জাতীয় ওই নির্বাচন ঘিরে আন্দোলনসহ বিস্তর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তারা।

নেতারা বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হয় না। কিন্তু নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের ফলে সরকারের নানা অনিয়ম ও নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় সেটিই বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব অনিয়ম ও ব্যর্থতা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে কাজে লাগানো হবে। একইসাথে সাংগঠনিক প্রচারণায়ও তা ব্যাপকভাবে তুলে ধরা হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপি আন্দোলনের অংশ হিসেবেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছে। সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত। কিন্তুসরকারি দল বেপরোয়া। তাদের নির্লজ্জ, গণবিরোধী চরিত্র উন্মোচনের জন্য এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এতে নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা এবং সরকারি দলের প্রতি তাদের পপাতিত্বও প্রমাণিত হচ্ছে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে সরকারের জন্য পরীা। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না, জনগণকে সেটা বোঝাতেই বিএনপি বাকি সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছে।

নির্বাচন ঘিরে নানা অনিয়মে ক্ষুব্ধ দলটির একটি অংশ অবশ্য মনে করছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে সরকার যেভাবে নির্বাচনগুলোতে একতরফা প্রভাব বিস্তার করে আসছে, তাতে জনগণ যা বুঝার বুঝে গেছে। এখন প্রয়োজন কঠোর আন্দোলন। দেশের মানুষকে বুঝাতে হবে যে এই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপে হবে না। এটা খুলনা ও গাজীপুরে প্রমাণিত হয়েছে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ােভ প্রকাশ করেই এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সরকারের মুখোশ উন্মোচিত করার কী আছে? ওরা তো দিন-দুপুরেই ভোট ডাকাতি ও কেন্দ্র দখল করে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বিরত রাখছেন। তাহলে কেনই বা আমরা গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পর পরবর্তী সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছি? আমার মনে হয় এ ব্যাপারে নতুন করে ভেবে দেখা এবং পরবর্তী আন্দোলন প্রশ্নে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনা উচিত।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে নানা অনিয়মের সচিত্র তথ্য উপাত্ত শুরু থেকেই সংগ্রহ করছে তারা। এসব অনিয়ম দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে তুলে ধরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে না করার দাবিকে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাবে বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচনে নানা অনিয়মের পরও অংশ নেয়ার মূল কারণ, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয় না- এ কথা প্রমাণ করা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, এর একটি আগাম বার্তা দেশ-বিদেশেও পৌঁছে দেয়া।

দলটির একাধিক নেতা বলছেন, খুলনা, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়াসহ নানা বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্য-ভিডিও সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, মিশন প্রধানদের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

বিএনপির নেতারা বলেছেন, নির্বাচনগুলোতে যেসব অনিয়ম হচ্ছে, সে সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিফহাল কূটনীতিকেরা। তারাও হতাশ-ক্ষুব্ধ। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। ভারতও জানিয়েছে, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন তারা সুষ্ঠু দেখতে চায়। সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরাও নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের আগে বিভিন্ন মহলের এই উদ্বেগকে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে কাজে লাগাতে চায়।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন