যে তিন শর্তে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যে রাজি ড. কামাল!

  19-08-2018 11:07AM

পিএনএস ডেস্ক : জাতীয় স্বার্থে বিএনপির সঙ্গে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যজোট গড়ে তুলতে রাজি আছেন। তবে বিএনপি তিনটি শর্ত পূরণ করলেই এই ঐ. ক্য প্রক্রিয়ায় তিনি থাকবেন বলে মত দিয়েছেন। এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় আরো থাকছে 'তৃতীয় ধারা' হিসেবে দাবি করা আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য।

বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের উদ্দেশ্যে এরই মধ্যে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে গণফোরাম প্রতিনিধি দলের কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। গণফোরামের পক্ষ থেকে সাত দফা লিখিত প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে। ড. কামালের দেওয়া তিনটি শর্ত নিয়ে আলোচনার চলছে বিএনপির নীতি নির্ধারণ পর্যায়ে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানায়নি সংসদের বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বৃহত্তম দলটি।

ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার আগে বিএনপিকে ড. কামাল হোসেন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে। তার প্রথম শর্তই হলো, জামায়াতে ইসলামী থাকলে তিনি সেই জোটে থাকবেন না । দ্বিতীয় শর্ত হলো, বিএনপিকে তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তির আন্দোলন দলীয়ভাবেই এগিয়ে নিতে হবে। দুইবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রশ্নে জোটের সমর্থন থাকতে পারে। কিন্তু খালেদা জিয়ার মুক্তিতে জোটগতভাবে কোনো কর্মসূচি দেওয়ার দাবি তোলা যাবে না। তৃতীয় শর্তটি হলো, লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার লড়াইটা বিএনপিকে একাই চালিয়ে যেতে হবে। জোটগতভাবে তাকে দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হবে না।

গণফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর সরকারবিরোধী জোট গঠনে সায় দিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ভোটাধিকার রক্ষায় সব দলের অংশগ্রহণে আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনে আপত্তি নেই তার। তবে বিএনপিকে শর্তগুলো মেনে চলতে হবে।

বিএনপির সঙ্গে ঐক্যে ড. কামাল হোসেনের দেওয়া তিনটি শর্ত ব্যাখা করে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন,প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে জামায়াতে ইসলামী কোথাও থাকলে কোনোভাবেই আমরা (গণফোরাম ও সমমনা দলগুলো) কোনো রকম ঐক্যজোটে যাবো না। আমাদের এই প্রথম শর্তটা বিএনপিকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ড. কামাল হোসেনের দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, জোটগতভাবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করা যাবে না। বিএনপি নিজেদের মতো করে তাদের দলের প্রধানের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার থাকতে পারে, প্রয়োজনে আইনি লড়াইও অব্যাহত রাখতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেনকে জড়ানো যাবে না। আইনী লড়াই বা রাজপথের আন্দোলন বিএনপিকে দলীয়ভাবেই করতে হবে।

গণফোরামের এই নেতা বলেন, একাধিক মামলায় সাজা পেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। স্বাভাবিকভাবেই বিএনপি তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করতে চাইবে। বিএনপি চাইলে দলগতভাবে তারেক রহমানের প্রসঙ্গটি সামনে আনতে পারে। কিন্তু এর সঙ্গে জোটের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। অর্থাৎ জোটগতভাবে তারেক রহমানকে দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া যাবে না। এটা হচ্ছে আমাদের তৃতীয় শর্ত।

সুব্রত চৌধুরী বলেন,, বিএনপি তিন শীর্ষ নেতা আমাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। আমরা আমাদের কথা বলেছি, তারাও তাদের কথা বলেছে। আশা করি, যোগ-বিয়োগ করে আমরা একটি ঐকমত্যে পৌঁছুতে পারব।

তৃতীয় ধারার দলগুলো নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেনের পরামর্শকেই তারা প্রাধান্য দিচ্ছেন। দেশের সংবিধান প্রণেতা ও অভিজ্ঞ এ আইনজীবীর পরামর্শেই এরই মধ্যে সমমনা দলগুলো পক্ষ থেকে বিএনপি নেতাদের সাত দফা প্রস্তাবনা লিখিতভাবে দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে সংবিধানকে সমুন্নত রেখেই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। ক্ষমতায় এসে স্থানীয় সরকারসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে, স্বাধীনতাবিরোধী ও ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে বাইরে রাখা, নির্বাচন কমিশনকে আরও স্বাধীন এবং শক্তিশালী করা, না ভোটের বিধান যুক্ত করাসহ নির্বাচনী ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার করতে হবে।

সাত দফার মধ্যে আরও রয়েছে, জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা, সংবিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ করতে হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারার বিধান যুক্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখা, স্বাধীন ও শক্তিশালী করা, মন্ত্রী-এমপি-আমলাসহ সবার সম্পদের হিসাব প্রকাশ ইত্যাদি।

মূলত: ড. কামাল হোসেনের তিনটি শর্ত ও সাত দফায় ঐক্যমতের ওপর নির্ভর করছে তৃতীয় ধারার আরো বেশ কয়েকটি দলের বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া।দলগুলো হলো - বি চৌধুরীর বিকল্পধারা, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, কাদের সিদ্দিকী কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যসহ ফরোয়ার্ড ব্লক ও সোনার বাংলা পার্টি নামে আরো দুটি রাজনৈতিক দল।

এদিকে বিএনপির কোনো নেতাই ড. কামাল হোসেনের দেওয়া প্রধান তিনটি শর্তের ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। তবে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে আন্দোলনে নামার লক্ষ্যে সাত দফা প্রস্তাবনা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বিএনপি। দলীয় ফোরামে বিষয়গুলো আলোচনার পর ওই সাত দফা প্রস্তাবনায় বিএনপি কিছু সংশোধনী এনেছে । এসব বিষয় নিয়ে ড. কামাল হোসেনের গণফেরাম ও অন্যদলগুলো সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্যের সমন্বয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও নজরুল ইসলাম খান।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন