বিএনপির শঙ্কা ২১ আগস্ট মামলার রায় নিয়ে

  20-09-2018 02:37PM


পিএনএস ডেস্ক: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ন্যায়বিচার হওয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপি বলছে, সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে ধ্বংস করার সকল ষড়যন্ত্র সম্পন্ন করেছে সরকার। বন্দুকের নলের মুখে দেশ ত্যাগ ও পদত্যাগে বাধ্য হওয়া প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার বইতে উল্লেখ করেছেন কিভাবে তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে, কিভাবে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে বিচার বিভাগকে সরকার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন।

তিনি বলেন, এসকে সিনহা তার আত্মজীবনী বইয়ে পরিষ্কার উল্লেখ করেছেন, তিনি সরকারের চাপে ও হুমকির মুখে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। বিচারপতি সিনহা তার ‘এ ব্রোকেন ড্রিম’ বইয়ে পরিষ্কার বলেছেন, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের মুখে তিনি দেশ ছেড়েছেন এবং তার পরিবারকে জিম্মি করে বিদেশে থাকাকালীন অবস্থায় তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। বিবিসির রিপোর্টসহ দেশের কিছু গণমাধ্যমে আজকে তা প্রকাশ পেয়েছে।

রিজভী বলেন, এসকে সিনহার বক্তব্যে আরো পরিষ্কার হলো বন্দুকের নলের মুখে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েই সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় রায় দিয়ে কারাবন্দি করে এক নম্বর মিশন কার্যকর করার পর এখন দুই নম্বর মিশন কার্যকর করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্টের মামলায় আগামী ১০ অক্টোবর রায় দেয়া হবে। দীর্ঘ ১৪ বছর ঝুলন্ত রাখার পর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা সুপরিকল্পিত নীলনকশারই অংশ।

তিনি বলেন, রায় প্রকাশের আগেই সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা নানা ধরণের বক্তব্য রাখছেন। বলছেন- এই রায় প্রকাশিত হওয়ার পর বিএনপি বিপাকে পড়বে। তার মানে সরকার জানে কি রায় হতে যাচ্ছে অথবা সরকারই ২১ আগস্ট মামলার রায় লিখে দিচ্ছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা নিয়ে ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখা হবে কি না তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ওই সময়ে যাদের কম বয়স ছিল এখন তারা প্রাপ্তবয়স্ক, তাদের জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই- আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দফতর সম্পাদক জনাব শহীদুল ইসলাম মিলন স্বাক্ষরিত একটি আবেদনে ২১ আগস্ট ২০০৪ মুক্তাঙ্গনে সভা করার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। পুলিশের নিকট প্রেরিত আবেদনের ভিত্তিতে ২১ আগস্ট ২০০৪ মুক্তাঙ্গনে সভার জন্য ১৯ আগস্ট ২০০৪ পুলিশ লিখিত অনুমতি দেয়। ২১ আগস্ট জনসভার জন্য মুক্তাঙ্গনের আশেপাশে যথারীতি ব্যাপক পুলিশ নিয়োগ করা হয়। বেলা ১টায় সভাস্থল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে স্থানান্তরিত করা হয়। এতে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা হতবাক হয়। আকস্মিক সভাস্থল পরিবর্তনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ২০০ফিট X ৫০ ফিট এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুলিশ ডেপ্লয়মেন্ট হওয়ার আগেই।

রিজভী বলেন, বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মতিঝিল থানায় মামলা রজু হওয়ার পর তদন্তভার অর্পণ করা হয় সিআইডির ওপর। দুই বছর তদন্ত চলার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি আতিকুর রহমান ও তদারককারী কর্মকর্তা এসপি রুহুল আমিন জনৈক জজ মিয়াসহ তার আরো কয়েক সহযোগীকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করে মামলাটি চার্জশিট দেয়ার মানসে অনুমতি প্রার্থনা করে তদানীন্তন ‘জাতীয় মনিটরিং সেল’ কর্তৃপক্ষের কাছে- যার প্রধান ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। কিন্তু সিআইডির সেই তদন্ত মনিটরিং সেলের কাছে সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় উল্লিখিত আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের অনুমতি না দিয়ে আরও সুনির্দিষ্ট ও ভিত্তিমূলক সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহপূর্বক তদন্ত নিষ্পত্তি করার জন্য মনিটরিং সেল সিআইডি কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেয়। অতঃপর পরামর্শ মোতাবেক সেই তদন্ত অব্যাহত থাকাকালীন বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষ হয়।

রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর আন্দোলনের ফসল মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তথাকথিত জরুরি সরকার বিএনপিকে দমন-পীড়ণে উঠেপড়ে লাগে। তারা সিআইডির পূর্ববর্তী তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে নতুন কর্মকর্তা হিসেবে এএসপি ফজলুল কবিরকে দায়িত্ব দেয়। তদন্তে ২২ জন আসামিকে অভিযুক্ত করে দেড় বছর শত চেষ্টা করেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ আরো অনেককে আসামি হিসেবে মামলায় জড়িত করতে পারেনি।

তিনি বলেন, আদালত চার্জশিট একসেপ্ট করে বিচার কার্যক্রম শুরু করে ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সাক্ষীরা কেউই তারেক রহমানসহ অন্য কারো নাম বলেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মামলাটি পুনঃতদন্তের নামে বিচারিক আদালত হতে আগস্ট ২০০৯ এ ফিরিয়ে এনে তা পুনঃতদন্তের ভার দেয়া হয় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত এসপি কাহার আকন্দকে, যিনি বেশ কয়েক বছর আগেই স্বাভাবিক নিয়মে অবসর গ্রহণের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে নিজেকে যুক্ত করে ফেলেন, এমনকি তার নিজ এলাকা কিশোরগঞ্জ-কটিয়াদি থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রার্থনা করেন।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রাপ্তির পর আলোচ্য মামলাটির তদন্তকালীনই বিশেষ বিবেচনায় তাকে পরপর দুটি পদোন্নতি দিয়ে এসপি পদে উন্নীত করা হয়। যিনি এখনো অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে বাংলাদেশে সরকারি চাকরির ইতিহাসে সর্বোচ্চ বয়োঃবৃদ্ধ চাকরিজীবী হিসেবে রেকর্ড গড়েন। কাহার আকন্দ অতঃপর আরো প্রায় দুই বছর তদন্ত করে গত জুলাই ২০১১-তে পূর্ববর্তী ২২ জনের সাথে ৩০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে সর্বমোট ৫২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দেয়। যার মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ কিছু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সেই সময়ে পুলিশ বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তাবৃন্দ যারা কাহার আকন্দের কাছে ওই সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। আক্রোশবশতই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মামলায় অন্যায়ভাবে তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের কোনো কীর্তি নেই, যা আছে সবই অপকীর্তি। এইসব অপকীর্তি ঢাকতেই আওয়ামী সরকার জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে নানাভাবে চক্রান্তের প্রকাশ ঘটাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের মুখ বন্ধ করতে, গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে ফেলতে গতকাল ভোটারবিহীন সংসদে পাশ হলো বির্তকিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। সরকারের লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেই এই কালো আইন করা হয়েছে। গণমাধ্যমে অথবা যেকোনো মাধ্যমইে যাতে দুর্নীতির কোনো খবর প্রকাশিত না হয়, অথবা প্রকাশ করতে না পারেন সেজন্যই এই ন্যাক্কারজনক কালো আইন তৈরী করা হলো।

রিজভী বলেন, এই কালো আইনে মানুষের সকল বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধের বিস্তার লাভ করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এটি সংবিধানবিরোধী একটি আইন। কারণ এ আইনে সংবিধানের মূল চেতনা বিশেষ করে মুক্ত চিন্তা, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে দেশের মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ল। কারণ আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এখন বিনা ওয়ারেন্টে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের অফিস ঢুকে তল্লাশীর নামে তাণ্ডব চালাতে পারবে, কম্পিউটারসহ সকল কিছু সীজ করতে পারবে, যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে। সাধারণ মানুষও এই কালো আইনের থাবা থেকে রেহাই পাবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামক এই কালো আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা সংবিধান পরিপন্থী। এই আইন বাকশালেরই প্রেতাত্মা। এই কালাকানুনের বিরুদ্ধে দেশবাসীসহ সকল গণমাধ্যমের কর্মী, মুক্ত চিন্তার মানুষদের রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে তালিকা করে আজগুবি সংবাদ প্রকাশ করছে কিছু গণমাধ্যম। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেশব্যাপী সংসদীয় এলাকায় বিএনপির নামে ভুয়া প্রার্থী তালিকা ছাপানো হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণরুপে একটি চক্রান্ত এবং সরকারের বিভিন্ন এজেন্সিরাই মিথ্যা তালিকা প্রকাশে কাজ করছে। আমি দলের পক্ষ থেকে এধরণের বানোয়াট সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ থেকে বিরত থাকার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলকে অন্যায়ভাবে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আমি সোহেলকে রিমান্ডে নেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তার রিমান্ড বাতিল, সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বাসভবনে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ন্যাক্কারজনক তান্ডব চালানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। এছাড়া জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলীর বাসভবনে পুলিশের তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

রিজভী বলেন, গতকাল মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় আদালতে হাজিরা শেষে ফেরার পথে নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফয়সাল আলম আবুল এবং জেলা ছাত্রদল সভাপতি কামরুল ইসলামসহ সাতজন নেতাকর্মীকে তুলে নিয়ে গিয়ে কোনো হদিস দিচ্ছে না পুলিশ। আমি তাদেরকে আটক ও আটকের বিষয়ে পুলিশের অস্বীকারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের অবস্থান নিশ্চিতের জন্য জোর দাবি করছি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন