জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতারা সরকারকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিল

  23-09-2018 10:57AM


পিএনএস ডেস্ক: জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সমাবেশে যোগ দিয়ে জাতীয় নেতারা মুক্তির বার্তা নিয়ে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলমতনির্বিশেষে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার এই সমাবেশ থেকে আগামী পয়লা অক্টোবর থেকে সারা দেশে সভা-সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে গতকাল শনিবার এই নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া, খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি এবং নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণের দাবি করা হয় সমাবেশ থেকে। এ সময় সারা দেশে ঐক্যপ্রক্রিয়ার কমিটি গঠনের কথাও জানানো হয় সমাবেশের ঘোষণাপত্রে।

ঐক্যপ্রক্রিয়ার আহ্বায়ক গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা: এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ড. আবদুল মঈন খান, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আমির আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, ২০ দলীয় জোট নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবীব লিংকন প্রমুখ। তেল গ্যাস বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ অনুষ্ঠানে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন ঐক্যপ্রক্রিয়ার সদস্যসচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, সরকার আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেবে।

গণদাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডপর্যায়ে মুক্তি-সংগ্রামের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, শ্রেণিপেশা ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ কমিটি গঠন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ গণজাগরণের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয় ঘোষণাপত্রে।

এতে বলা হয়, ন্যায়বিচারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে অগ্রাহ্য, ব্যাহত ও অকার্যকর করে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রছাত্রীসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা যাবে না।

সমাবেশে ড. কামাল বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আপনারা এসেছেন হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আকাক্সক্ষা নিয়ে। আপনারা এসেছেন লুণ্ঠিত ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে। আপনারা এসেছেন আমাদের এ দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন নিয়ে।

তিনি বলেন, আমাদের সবার প্রত্যাশা, সুখী-সমৃদ্ধ, উদার গণতান্ত্রিক ও বহু মতের বাংলাদেশ। এখন দেশে অপশাসন ও দুঃশাসন চলছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে প্রতিনিয়ত হয়রানি ও অপদস্থ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্রের জন্য অনেক সংগ্রাম করে জয়ী হয়েছে, আবার হোঁচট খেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

দেশবাসীর উদ্দেশে ড. কামাল বলেন, আমরা শুধু ক্ষমতার রাজনীতি করি না। আমরা জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়াই আমাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। আমরা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই। আপনারা জানেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ইতিহাস যেমন আছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করার ইতিহাসও আছে।

প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশে উন্নয়নের নামে অবাধ লুটপাট চলছে। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হচ্ছে। মেগা প্রকল্পের নামে জনগণের টাকা অপচয় করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা ও স্বর্ণ গচ্ছিত রাখাও নিরাপদ নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধনীর সংখ্যা বাড়ার যে প্রবণতা তাতে বাংলাদেশের নাম সবার আগে- এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। এ থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈষম্যের একটা ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। এখানে ধনী আরো ধনী হচ্ছে, গরিব আরো গরিব হচ্ছে, মধ্যবিত্তরা টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। বহির্বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে। তাই জনশক্তি রফতানিতে ধস নেমেছে। প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছেন না।
ড. কামাল বলেন, আমরা জনগণের ভোটাধিকারসহ মৌলিক অধিকার মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। জনগণ তাতে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। মৌলিক বিষয়ে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে। এখন সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার সময় এসেছে।

তিনি সমবেত জনতাকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলুন। মুক্তির বার্তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করুন। অতীতে জনগণের বিজয়কে কেউ ঠেকাতে পারেনি; ভবিষ্যতেও পারবে না, ইনশা আল্লাহ।

পিএনএস/আনোয়ার


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন