নতুন মেরুকরণ পর্যবেক্ষণে আ’লীগ

  24-09-2018 08:25AM


পিএনএস ডেস্ক: বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সরকারবিরোধীদের নতুন এ রাজনৈতিক মেরুকরণ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকতে পারে তা নিয়ে নানা বিচার-বিশ্লেষণ করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিয়ে সদ্যগঠিত এ মোর্চাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার কর্মপদ্ধতি ও কৌশল নির্ধারণে কাজ চলছে দল ও সরকারের শীর্ষপর্যায়ে। ঐক্যপ্রক্রিয়ার গতিবিধি দেখে সেসব কৌশল প্রয়োগ করা হতে পরে। তবে তার অংশ হিসেবে শুরুতেই ঐক্যপ্রক্রিয়ার উদ্যোক্তা ও শীর্ষ নেতাদের কঠোর সমালোচনার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। আর, সরকারবিরোধী আন্দোলন জমে উঠলে রাজনীতির বাইরে প্রশাসনিকভাবেও দমন করা হতে পারে তাদের। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্রগুলো জানায়, যুক্তফ্রন্টের পর জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া গঠন গভীরভাবে মনিটরিং করছিল সরকার। শুরুতেই ঐক্যপ্রক্রিয়ার কর্মসূচিতে বাধা দানের সিদ্ধান্ত থাকলেও নির্বাচনের এই আগ মুহূর্তে কঠোর সমালোচনা ও চাপের কথা মাথায় রেখে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে সরকার। মাঝপাথে ঐক্যপ্রক্রিয়ার সাথে বিএনপির যোগ দেয়া নিয়ে টানাপড়েনের খবরে বেশ আশ্বস্ত হন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ঐক্যপ্রক্রিয়ার প্রাথমিক অনুষ্ঠানে এর অন্যতম উদ্যোক্তা বিকল্পধারা সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা: এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর অনুপস্থিতি আরো আশাবাদী করে তোলে ক্ষমতাসীনদের। তবে শেষ পর্যন্ত শনিবার ঐক্যপ্রক্রিয়ার অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের সরব উপস্থিতি এবং একপর্যায়ে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর অংশগ্রহণে খানিকটা হতাশ হন তারা। অনুষ্ঠান থেকে জাতীয় নেতাদের ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচির ঘোষণাও খানিকটা ভাবিয়ে তোলে ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকদের। শনিবার বিকেল থেকেই আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন ফোরামের আলোচনায় স্থান পায় জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া ইস্যুটি।

জানা গেছে, ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতাদের গতিবিধির ওপর গভীরভাবে নজর রাখছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। বিভিন্ন সরকারি সংস্থারও কড়া নজরদারি রয়েছে তাদের ওপর। ঐক্যপ্রক্রিয়ার কর্মসূচি দেখে সরকারের করণীয় ঠিক করা হলেও আপাতত জাতীয় নেতাদের কঠোর সমালোচনার দিকে মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। এসব নেতাকে জনবিচ্ছিন্ন, ওয়ান-ইলভেনের কুশীলব এবং পাকিস্তানের দালাল বলেও চরিত্র হনন করছেন আওয়ামী লীগ ও সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা।

জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, ‘নেতায়- নেতায় ঐক্য, এটা জাতীয়তাবাদী ঐক্য। শেখ হাসিনা, আইআরআই জরিপে এসেছে ৬৬ শতাংশ জনপ্রিয়। ৬৬ শতাংশ জনপ্রিয়তাকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হয় না। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কোনো জাতীয় ঐক্য হবে না। হবে জাতীয়তাবাদী-সাম্প্রদায়িক ঐক্য। বাংলাদেশের জনগণের কাছে এই ঐক্যের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো বড় স্থানে জাতীয় ঐক্যের সভা করার মতো মতা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশের নামে তারা ৩০ দল মিলে মিটিং করেছে। আমাদের পথসভার বাইরে যত লোক দাঁড়িয়ে আছে সেখানে তত লোকও ছিল না। সে জন্য তারা বড় জায়গায় যান না। তারা পল্টনে ঢুকে যায়, নাট্যমঞ্চে ঢুকে যায়। বড় জায়গায় গেলে লোক সমাগম হবে না এই ভয়ে তারা যায় না। তারা বড় জায়গায় সমাবেশ করে না।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দেউলিয়া কিছু নেতার সাথে গিয়ে বিএনপি ঐক্য করেছে। তারা যে কত বড় দেউলিয়া এর মাধ্যমে তার প্রমাণ হয়ে গেছে। এ দেশের মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ আছে। তাই সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার মতো আগামী নির্বাচনে এসব রাজনৈতিক দেউলিয়াদেরও স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।’

ঐক্যপ্রক্রিয়ার আরেক উদ্যোক্তা ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করে জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, অবশেষে এই নামকরা উকিলের মক্কেল হলো বিএনপি-জামায়াত। বিএনপি ও ড. কামাল হোসেনের দাবি এক এবং অভিন্ন। জাতীয় ঐক্যের অজুহাতে ড. কামাল হোসেন গণতন্ত্রের বুলি কণ্ঠে নিয়ে খালেদা উদ্ধার ও বিএনপি-জামায়াত রার জন্য মাঠে নেমেছেন। উন্নয়ন ও শান্তি বজায় রাখতে শেখ হাসিনার সাথে থাকার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশের সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেনকে পাকিস্তানের লোক আখ্যা দিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ‘ড. কামালের কথা-কাজের মিল নেই। তার ভূমিকা সবসময় রহস্যজনক। তিনি কে? এটিই এখন প্রশ্ন জাগে সবার মধ্যে। ড. কামাল হোসেন আসলে পাকিস্তানেরই লোক।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা আলাপকালে জানান, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়াকে শুরুতে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়া না হলেও শনিবারের নাগরিক সমাবেশের পর তার গুরুত্ব বেড়েছে। সে জন্য সরকার গভীরভাবে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। ভবিষ্যতে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখে তা মোকাবেলার কৌশল নির্ধারণ করা হবে। তবে তার আগে এসব জনবিচ্ছিন্ন নেতার মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করা হবে। তাদের অতীত ইতিহাস তুলে ধরা হবে জনগণের কাছে।

এক নেতা বলেন, বিএনপি ছাড়া জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার এসব নেতার জনভিত্তি কী আছে তা সবারই জানা। এর মধ্যে কোনো নেতা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্যপদে নির্বাচন করেও জিতে আসতে পারবেন কি না সন্দেহ আছে। রাজনীতির মূল ¯্রােতের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করলে কী হয় অতীতে বারবার সেটা প্রমাণ হয়েছে। তবুও নির্বাচনের খুব একটা সময় বাকি নেই। সে জন্য রাজনীতির নতুন এ মেরুকরণ কোন দিকে যায় তা আমরা নজরে রাখছি। সূত্র: নয়া দিগন্ত

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন