‘আমাদের বলে দেওয়া হোক নির্বাচনে যাওয়ার দরকার নেই’

  15-11-2018 09:43AM





পিএনএস ডেস্ক: ‘মামলা দিয়ে কোর্টের মাধ্যমে আমাদের আটকে রাখা হচ্ছে। তাহলে আমাদের বলে দেওয়া হোক নির্বাচনে যাওয়ার দরকার নেই। একদিকে মামলা চলবে, অন্যদিকে তারা নির্বাচন করবে এটা তো হতে পারে না’—নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ কথা বলেছেন। গতকাল বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ-৯-এর আদালতে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল।

এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের জাবেদা নকল সরবরাহ করা হয়েছে। গতকাল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর পেশকার মোকাররম হোসেনের সরবরাহ করা রায়ের জাবেদা নকল খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বুঝে নেন। গত ২৯ অক্টোবর এই মামলার রায়ে বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান রায়ে খালেদা জিয়াসহ চারজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেন।

রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে নাইকো মামলার শুনানি শুরু হয় গতকাল দুপুর ১২টার পর। এর কিছু আগে কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক মাহমুদুল কবীর এজলাসে ওঠার পর শুনানি শুরু হয়। শুনানির একপর্যায়ে খালেদা জিয়া প্রশ্ন রাখেন, ‘আমার মামলাগুলো কেন এত দ্রুত বিচার করা হচ্ছে? কয়টা মামলা দ্রুত বিচারে নিষ্পত্তি করা হয়?

সেভেন মার্ডার (নারায়ণগঞ্জ) কি দ্রুত বিচার আইনে হয়েছে?’ তিনি বলেন, বর্তমান রাজনীতির সঙ্গে সব কিছু চলছে। নাইকো মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।

একপর্যায়ে খালেদা জিয়া নির্বাচনের পর অভিযোগ গঠনের পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করার জন্য বিচারককে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আমার নেতাকর্মীরা ব্যস্ত থাকবে। কেউ আসতে পারবে না। এ কারণে নির্বাচনের পর শুনানির দিন ধার্য করা হোক।’ পরে আদালত আগামী ৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করে ওই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি ঘোষণা করেন।

বিগত এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক। চার্জশিটের অন্য আসামিরা হলেন সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন। আসামিপক্ষ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে হাইকোর্ট ওই বছরের ৯ জুলাই এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন এবং মামলা কেন বাতিল করা হবে না তা জানাতে রুল জারি করেন। প্রায় সাত বছর পর ২০১৫ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি করেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। পরে ওই বছরের ডিসেম্বরে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ তাঁকে জামিন দেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। এরপর খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দীন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। গত ৩০ অক্টোবর এই মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। তার আগের দিন ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত খালেদা জিয়াসহ চারজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে দশ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আরো ছয় মাস কারাভোগ করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়। এই মামলার অপর তিন আসামি হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় খালেদাকে সাজা দেওয়া হয়। আর্থিক ক্ষতির ব্যাপারে সহযোগিতার দায়ে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় হারিছ, জিয়াউল ও মনিরুলকে দণ্ড দেওয়া হয়।

রায় ঘোষণার পর গত ৩০ অক্টোবর জাবেদা নকল সরবরাহ করার জন্য আবেদন করেন খালেদার আইনজীবীরা। গতকাল নকল হাতে পাওয়ার পর খালেদার আরেক আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, নকলের কপি পাওয়ার পর এখন হাইকোর্টে আপিল করা হবে। আজ অথবা পরের কার্যদিবসে আপিল করা হবে। সূত্র: কালের কণ্ঠ

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন