নরসিংদী-৩ আওয়ামী লীগে কোন্দল পুনরুদ্ধারে বিএনপি

  06-12-2018 10:55PM

পিএনএস,নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে নেমেছেন দুইজন। বেশ কিছুদিন ধরেই নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ চালাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। অংশ নিচ্ছেন দলীয় এবং সামাজিক নানা কর্মসূচিতে। মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতাকে ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় রাজনীতিতে কোন্দল বাড়ছে। প্রকাশ্যেই এই দুই নেতা একে অন্যকে নিয়ে সমালোচনা ও বিষোদ্গার করে চলেছেন।

এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে হারানো এই আসনে আবারও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ধানের শীষের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের একাধিক নেতা। নরসিংদী শিবপুর উপজেলা একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসনটিও নরসিংদীর অন্যান্য আসনের মতো এক সময় বিএনপির দুর্গ' হিসেবে পরিচিত ছিল। বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়া দীর্ঘকাল এ আসনের এমপি ছিলেন। বর্তমানে এ আসনের এমপি কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহনকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন- বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও কেন্দ্রীয় গণশিক্ষা সম্পাদক এড, মোঃ সানা উল্লাহ মিয়া, জেলা বিএনপির সহসভাপতি সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মনজুর এলাহী।

বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে এমপি পদে বিজয়ী হয়েছেন।পরে সংস্কারবাদী হিসেবে দল থেকে তাকে বহিস্কার করা হলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহনের কাছে পরাজিত হন মান্নান ভূঁইয়া। তার পরাজয়ের পর এ আসনে বিএনপির শক্ত অবস্থানে ধস নামে। গত নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান মোহন। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তাকে হারিয়ে দেন বর্তমান এমপি সিরাজুল মোল্লা। এর পর থেকে দলীয় মনোনয়ন ঘিরে এই দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরাজমান। তাদের অনুসারীদের মধ্যেও এ নিয়ে রয়েছে স্পষ্ট বিভাজন। এবার একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে শিবপুরে আওয়ামী লীগে দুইটি বলয় তৈরি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। নরসিংদীর শিবপুরে আওয়ামী লীগের দেয়া মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশও করেছে মনোনয়ন বঞ্চিত নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার অনুসারীরা। এ নিয়ে অবশ্য খুব বেশি মাথাব্যথা নেই এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার। দশম জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত ১৬ এমপির মধ্যে যারা আওয়ামী লীগে ফিরেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন এমপি সিরাজুল ইসলামও। স্থানীয় ভাবেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে।

স্থানীয়ভাবে একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার পরও সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, এবারও বিজয়ী হবেন। এমপি হয়ে এলাকার উন্নয়ন করেছি, ভোটারদের উন্নয়ন করেছি। শিবপুরের জনগণ আবারও আমাকে তাদের ভোট দেবেন এটা আমার বিশ্বাস। কিন্তু কোনো ভাবেই তাকে ছাড় দিতে নারাজ শিবপুরের তিন নেতা।

তাদের মধ্যে একজন শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ খান, তিনি বলেন, বর্তমান এমপি বিএনপি-জামায়াতের ভোটে নির্বাচিত হন। গত সাড়ে তিন বছরে তিনি কোনো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে মূল্যায়ন করেননি। প্রধানমন্ত্রী সাবেক এমপি মোহনকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমরা তার পক্ষেই কাজ করব। শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম রাখিল বলেন, বর্তমান এমপির সঙ্গে স্থানীয় যুবলীগ বাদে আওয়ামী লীগের আর কেউ নেই। শিবপুর আওয়ামী লীগের আরেক আলোচিত নেতা মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৯, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করেছেন। আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও জেলা কমিটির প্রভাবশালী এ নেতা নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক এমপি মোহনের ওপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে বলেই তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। পর পর দুই মেয়াদে দলীয় এমপি না থাকায় স্থানীয়ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শিবপুর বিএনপির রাজনীতি। দীর্ঘকাল ধরে দলটির স্থানীয় রাজনীতি দুই ধারায় বিভক্ত।

এর পরও অনেকটা নিরাপদ অবস্থানে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী এড,মোঃ সানা উল্লাহ মিয়া। শিবপুর বিএনপি'র নেতা তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার বলেন, দলীয় প্রধান ও দলের নীতি - নির্ধারকরা যাকে মনোনয়ন দিবেন আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো। এদিকে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর এলাহীকে বিএনপি থেকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান একাংশের নেতা-কর্মীরা। যে কারও বিরুদ্ধে তিনি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন বলে দাবি তার অনুসারীদের।

বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, এ আসনের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব রয়েছে সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার অনুসারীদের গড়ে তোলা মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের। যদিও বিএনপির সঙ্গে মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের চরম বিরোধ চলছে। এর অবসান না হলে বিএনপির জয় অসম্ভব। বিএনপির সঙ্গে মিল হবে কি-না, জানতে চাইলে, শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম মৃধা বলেন, বিএনপির সঙ্গে এখন আর মিল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ পরিষদ সম্পর্কে সানা উল্লাহ মিয়া বলেন, পরিষদের সদস্যরাও বিএনপির ভোটার। তারা আলাদা কেউ নন। এরই মধ্যে অনেকে দলে ফিরেছেন। তারাও ধানের শীষে ভোট দেবেন।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন