নতুন নির্বাচনই প্রধান লক্ষ্য বিএনপি জোটের

  15-01-2019 08:33AM


পিএনএস ডেস্ক: সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করাই এখন প্রধান লক্ষ্য বিএনপি ও তার মিত্রদের। সে লক্ষ্য নিয়ে শিগগিরই কাজ শুরু করবে দলগুলো। তবে তারা আপাতত সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলনে যাবে না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি নির্বাচনে সরকারের কৌশল সম্পর্কে আগাম ধারণা না পাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করবেন নেতারা। বিএনপিসহ সংশ্লিষ্ট দলগুলোর কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ৮ জানুয়ারি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম স্টিয়ারিং সভা শেষে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘৩০ ডিসেম্বর সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। এ অবস্থায় বাংলাদেশের জনগণ নির্দলীয় সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে ফের একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি করছে।’

বিএনপির একটি সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার দুপুরে নাইকো দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দেওয়ার সময় আদালতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং কয়েকজন আইনজীবী নেতার সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলেছেন খালেদা জিয়া।

সংক্ষিপ্ত সময়ের ওই আলাপে তিনি নেতাদের দোষারোপের রাজনীতি না করে ঐক্যবদ্ধ থেকে সংকট মোকাবেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। খালেদা জিয়া বলেছেন, কারো কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে দল ও জোট ঐক্যবদ্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনের নির্বাচন দেশবাসী মেনে নেয়নি। আমরা তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন নির্বাচনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন সব সময়ই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশনায় এ দল টিকে থাকবে এবং সংকট উত্তরণে সক্ষম হব।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর দেশে কী হয়েছে সেটি আমরা কেন, দেশের সকলেই দেখেছে। একে কি নির্বাচন বলবেন? জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মূল দাবি হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর দেশে যেহেতু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন আদায় করা।’ তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এই নির্বাচন আদায়ের জন্য বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়েছে। যেমন—আগামী ২৮ জানুয়ারি এ বিষয়ে করণীয় কী তা জানতে জাতীয় সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। প্রেস ক্লাবের অডিটরিয়ামে এ সংলাপে ফ্রন্ট তাদের করণীয় সম্পর্কে আরো স্বচ্ছ ধারণা নেবে।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই যে নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না। ৩০ ডিসেম্বর তো সে নির্বাচন হয়নি।’

জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয়নি, হয়েছে প্রহসন। তাই আমরা আগামী তিন মাসের মধ্যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য পুনর্নির্বাচন দাবি করি।’ পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কর্মসূচি তিনটি ছিল, সেটি আমরা পালন করছি। তবে আগামী দিনে মাঠের কর্মসূচির কোনো বিকল্প নেই।’

ফ্রন্টের সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৫ জানুয়ারি স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম সভায় তিনটি কর্মসূচি নির্ধারণ করেছিল। কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতীয় সংলাপ, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে দ্রুত মামলা করা এবং নির্বাচনের সময় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা পরিদর্শন, বিশেষ করে সিলেটের বালাগঞ্জে যাওয়া, যেখানে ঐক্যফ্রন্টের একজন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে ২৮ জানুয়ারি। জেলা সফরের অংশ হিসেবে স্টিয়ারিং কমিটির নেতারা গতকাল সোমবার সিলেটের বালাগঞ্জে গেছেন। আরো কয়েকটি জেলায় যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। আর ট্রাইব্যুনালে মামলার বিষয়ে বেশ অগ্রগতি হয়েছে।

জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন বলেন, ‘৩০০ আসনের তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করা বেশ সময়সাপেক্ষ। এর পরও আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। এর বেশ অগ্রগতিও হয়েছে।’

ঐক্যফ্রন্টের মিডিয়া কমিটির প্রধান সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু জানান, বেশ কিছু আসনের তথ্য সংগ্রহের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বাকিদেরও দ্রুত তা শেষ করার অনুরোধ করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি এবং পরবর্তী করণীয় ফ্রন্টের অফিস থেকে সমন্বয় করা হচ্ছে।

পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ফ্রন্টের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার কথা ভাবছেন নেতারা। সেটি অনানুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি নেতাদেরও জানানো হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের পরিধি বাড়াতে বাম জোট ও কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনমত নিজেদের পক্ষে আনা এবং আইনি বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন এবং মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদেশ সফরে যেতে পারেন। তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করতে আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সফরও শুরু হবে চলতি মাসের শেষ দিকে বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে।

এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশন ডাকারও তাগিদ দিচ্ছেন কেউ কেউ। যদিও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা লাগবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন