জনগণকে ধীরে ধীরে রাস্তায় আনার চেষ্টা চলছে

  12-07-2019 11:01AM


পিএনএস ডেস্ক: একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক বিপর্যয়ের পর হতাশায় ন্যুব্জ হয়ে পড়া বিএনপি ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। গত দুই মেয়াদে সরকারের ‘নিপীড়নমূলক আচরণ’ বিবেচনায় এনে পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন রোডম্যাপে পথ চলতে চায় দলটি। এই পথ দীর্ঘ হলেও মাথা ঠাণ্ডাই রাখতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের চিন্তা অনুযায়ী- আগামীতে আন্দোলনের ধরনে পরিবর্তন আসবে। দলের নেতৃত্বকেও শক্তিশালী কাঠামো দেয়া হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আন্দোলনের আগে দেখতে হবে তাদের সংগঠন ঠিক আছে কি না। পরিস্থিতি অনুকূল কি না। কারণ বিএনপির ২৬ লাখ নেতাকর্মী আসামি। ১ লাখ মামলা। ১ হাজারের ওপরে নেতাকর্মী জেলে আছেন। এই পরিস্থিতিতে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে চলবে না। অনেকে নব্বইয়ের আন্দোলনের কথা বলেন। কিন্তু ১৯৯০ আর ২০১৯ এক না, এটা মাথায় রাখতে হবে। সে সময় এমন ভয়াবহ সরকার ছিল না। চরম নির্যাতনকারী সরকার ছিল না। তখন নির্বিচারে গুম, খুন, গুলি হতো না।
হতাশা কাটিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে বিএনপি নানামুখী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। দেশজুড়ে সমাবেশের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। নতুন নেতৃত্ব দিয়ে পুনর্গঠন করা হচ্ছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি। দীর্ঘ দিন ধরে মামলা-হামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন করে এখন প্রাণের সঞ্চার করতে চায় হাইকমান্ড।

পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে দলের জাতীয় কাউন্সিল করতে চায় বিএনপি। তবে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ ঠিক হয়নি। কাউন্সিলের আগে তাদের মূল কাজ হচ্ছে জেলা কমিটিগুলো হালনাগাদ করা। এগুলো প্রায় শেষের দিকে। পুরোপুরি সম্পন্ন হলেই কাউন্সিলের প্রস্তুতি শুরু হবে। এগুলো শেষ হলে কাউন্সিলের প্রস্তুতি এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা যাবে।

জানা গেছে, ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এরই মধ্যে ৩৩টির বেশি জেলার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি ৪৮টি জেলার কাজ দ্রুত সময়ে শেষ করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। বেশ কয়েকটি জেলার নতুন কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষ। শিগগিরই তা ঘোষণা করা হবে। জেলা কমিটিগুলোকে দ্রুত উপজেলা ও পৌর কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ দিকে চলতি মাস থেকেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মাঠের কর্মসূচি বেগবান করতে চায় বিএনপি। এর অংশ হিসেবে ধারাবাহিকভাবে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ হবে। বিগত সময়ে হরতাল অবরোধের কর্মসূচি দিয়ে বিপর্যয় বেড়ে যাওয়ায় এবার ওই ধরনের কোনো কর্মসূচি না দিয়েই সফলতা পেতে চায় দলটি। আন্দোলনের সাথে যাতে সরাসরি জনগণ সম্পৃক্ত হয় সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পরবর্তী ছক সাজানো হচ্ছে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, ঢাকাসহ সারা দেশে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুর আন্দোলনে রাজপথ উত্তপ্ত করা সাধারণ মানুষের সরব উপস্থিতি নিশ্চিত করে গণ-অভ্যুত্থান ঘটানোই দলটির পরবর্তী পরিকল্পনা। এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক প্রস্তুতি দ্রুত এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর আন্দোলনের ধরনের পরিবর্তন আনার বিষযটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দলের সিনিয়র নেতাদের মতে, একসময় সরকারকে চাপে ফেলার আন্দোলন হিসেবে শুধু হরতাল অবরোধকেই ভাবা হতো। কিন্তু সময় পরিবর্তন হয়েছে। সাধারণ মানুষ আর ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মসূচি চায় না। তবে অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে চায়। কিন্তু পরিকল্পিত কোনো কর্মসূচি, কার্যকরী দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্বের ঘাটতির কারণে আন্দোলন সফল হচ্ছে না। তাই জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জনগণ যাতে সম্পৃক্ত হয় তেমন নতুন ধরনের কর্মসূচি দেবে বিএনপি।
জানা গেছে, সম্প্রতি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপির দুর্বল কর্মসূচি দলের অনেক নেতাকর্মীই ভালোভাবে নেননি। মধ্যসারির কয়েকজন নেতা সিনিয়র নেতাদের সরাসরি বলেছে, এই ইস্যুতে বিএনপির কঠোর কর্মসূচি দেয়া উচিত ছিল। বিএনপির কর্মসূচির সাথে সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত হতো। জবাবে সিনিয়র নেতারা তাদের জানিয়েছেন এ ব্যাপারে বড় ধরনের কর্মসূচি দেয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন দলের হাইকমান্ডও। কিন্তু আন্দোলনের জন্য সংগঠন গুছিয়ে আনার একেবারে শেষ পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কর্মসূচিতে যাওয়া ঠিক হবে না বিবেচনায় দুর্বল কর্মসূচির মাধ্যমে দলের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। তবে এই ইস্যুতে কার্যকরী বড় ধরনের কর্মসূচি দেয়ার কথা এখনো ভাবা হচ্ছে।

আসন্ন কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করাই বিএনপির প্রধান লক্ষ্য। এ জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির সাথে জনসম্পৃক্ত ইস্যুগুলোকে সামনে রেখেই আন্দোলন শুরু হবে। এর মধ্যে নিরাপদ সড়ক, গুম-খুন-ধর্ষণ নির্মূলে ব্যবস্থা নেয়ার দাবির পাশাপাশি গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দাম, নগরীতে যানজট, জলজটের বিষয়গুলো আসবে।

বিএনপির ভবিষ্যৎ আন্দোলন সম্পর্কে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলন ছাড়া অবস্থার পরিবর্তন হবে না। তবে যেই আন্দোলনে ফল পাওয়া যাবে না তেমন কর্মসূচিতে বিএনপি যেতে চায় না। আন্দোলনে সফল হতে হলে মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ জন্য দীর্ঘ ক্ষোভ বঞ্চনার বিরুদ্ধে মানুষকে রাস্তায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন