ত্রাণ নেই বন্যার্তদের, গলাবাজি করছেন মন্ত্রী-এমপিরা : রিজভী

  21-07-2019 02:03PM

পিএনএস ডেস্ক :দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় সর্বস্ব হারিয়ে ত্রাণের আশায় লাখ লাখ মানুষ যখন হাহাকার করছে তখন করুণ এই পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা ঢাকায় বসে গলাবাজি করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

রবিবার (২১ জুলাই) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, ‘বন্যায় ভাসছে গোটা দেশ। মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। সর্বস্ব হারিয়ে পথে নেমেছে হাজার হাজার পরিবার। দেশে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নতুন করে আরও পাঁচটি জেলায় পানি প্রবেশ করেছে। নিরাপদ আশ্রয় ও শুকনো খাবারের সন্ধানে ছুটছে বানভাসি মানুষ। কোথাও ত্রাণের গাড়ি কিংবা নৌকার সংবাদ শুনলেই ছুটছে বন্যার্তরা। কিন্তু সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা দুর্গত মানুষের কোনও খোঁজখবর না নিয়ে ঢাকায় বসে শুধু গলাবাজিই করে যাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে চারদিনে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে তিন জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জামালপুরে ৪, শেরপুরে ৪, গাইবান্ধায় ২ জন রয়েছে। সহায়-সম্পদ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন বন্যার্তরা। অনেকেই পরিবারসহ ডিঙি নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ছোট ছোট নৌকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে কাটকে অনেকের দিনরাত।’

সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এখনও ত্রাণ পৌঁছেনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারের যে উদ্যোগ প্রয়োজন সেটা আমরা লক্ষ্য করছি না। সরকারের চরম উদাসীনতা প্রমাণ করে জনগণের প্রতি তাদের ন্যূনতম কোনও দায়বদ্ধতা নেই। তারা জনবিদ্বেষী।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘সরকারের দায়িত্ব বন্যা কবলিত মানুষকে রক্ষা করা। যেটা সরকার করছে না। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। এই লক্ষ্যে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আহ্বায়ক করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।’

রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশে ভোটারবিহীন অন্ধকারে নির্বাচিত সরকার দুর্নীতিকে পুরোমাত্রায় প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করে ফেলেছে। সামাজিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে সরকারের ‘টপ টু বটম’ ব্যস্ত লুটপাট-ঘুষ-দুর্নীতিতে। চারদিকে চলছে দুর্নীতির উৎসবের আতশবাজী। সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে দেশ। আইনের শাসন ও সুশাসন এখন ইতিহাসের পান্ডুলিপিতে অবস্থান করছে। দুর্নীতির বিরূপ প্রভাবে অগ্রগতি থমকে গেছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন নিয়মে পরিণত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপাতভাবে আইনের শাসন, সুশাসন ও জবাবদিহিতার অভাব এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে দুর্নীতি ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। নির্বিঘ্নে নিরাপদে প্রশাসনের সহায়তায় রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণের কণ্ঠস্বর, গণমানুষের প্রাণপ্রিয় আপসহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ফরমায়েশী মিথ্যা প্রতিহিংসার মামলায় কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে গত দেড় বছর ধরে।’

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর জিঘাংসার শিকার বেগম খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনাই বেগম খালেদা জিয়ার জামিনে বাধা দিচ্ছেন। তাঁকে বন্দি রেখে লুণ্ঠন-দুঃশাসনে দেশকে রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে জনধিকৃত সরকার।’

রিজভী বলেন, ‘দেশে যখন দুর্নীতির মহামারি চলছে তখন সরকারের রাঘব-বোয়ালদের দুর্নীতির ‘ইনডেমনিটি প্রতিষ্ঠান’ দুর্নীতি দমন কমিশন ও এর চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি করতে উৎসাহ দিয়ে বলছেন-‘সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি করলে অপরাধ হবে না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরল বিশ্বাসে কৃতকর্ম কোনও অপরাধ নয়।’ এর আগে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খেতে বলেছিলেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যে দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে তিনি কী নৈতিক বার্তা দিয়েছিলেন, সেই উত্তর তো এখনও পাওয়া যায়নি। যখন দেশে প্রশাসনিক স্তরে অতি উচ্চ মাত্রার দুর্নীতির সংস্কৃতি বিরাজমান, এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ফাইল যেতেও টেবিলের নিচে আর্থিক লেনদেন করতে হয়, তখন মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের কাছে এই ‘উৎসাহ বার্তা’ দেয়া হচ্ছে যে, সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি করলে কিছু হবে না। ফলে টেবিলের ওপর দিয়েই এখন ঘুষের লেনদেন চলবে। তাতে কোন অসুবিধা নেই।’

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজেই যদি ‘সরল দুর্নীতির’ অভিনব বাণী জনগণকে শোনান, তাহলে দুর্নীতির জোয়ারে দেশ তো ভেসে যাবেই। এখন থেকে ‘সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি’র সাফল্যের মৌতাতে বুঁদ হয়ে থাকবে সরকারি কর্মকর্তারা। পক্ষপাতদুষ্টতার গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত দুদক চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যটি অপশাসনেরই একটি বিপজ্জনক বার্তা।’

রিজভী আরও বলেন, ‘দুদক চেয়ারম্যান গতকাল নিজেই স্বীকার করেছেন, মন্ত্রী-এমপিসহ রাঘব বোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা ৭০ ভাগ দুর্নীতির মামলা দিচ্ছেন পুঁটিমাছের বিরুদ্ধে। মূলত: দুর্নীতি দমনের নামে মুখোশপরা এই দুদক বিরোধীদল দমনে নিষ্ঠুর প্রতিশোধের খেলায় ব্যস্ত।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন