গোয়েন্দা তথ্যে বাদ পড়বেন বিতর্কিতরা

  18-09-2019 09:00AM


পিএনএস ডেস্ক: টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের নানা খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে, কিন্তু তার পরও সরকারের পক্ষে জনসমর্থন সে মাত্রায় বাড়েনি। ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীর বেপরোয়া সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারিসহ নানা দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে, সরকার হয়ে পড়ছে বিতর্কিত। এসব কারণে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বিতর্কিত নেতাদের বাদ দেওয়া হবে। আর যাঁরা নতুন আসবেন, তাঁদের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য ইতিবাচক হতে হবে। আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো থেকেও বাদ পড়বেন অভিযুক্ত ও বিতর্কিতরা। জাতীয় সম্মেলনে দলকে সরকার থেকে পৃথক করা হবে। ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অন্তত এক ডজন নেতা এসব কথা জানিয়েছেন।

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোয় দলের প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে মূলত সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুসরণ করা হয়েছিল। বিভিন্ন সময় সংস্থাগুলো মাঠপর্যায়ে ব্যাপক ভিত্তিতে খোঁজখবর নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। প্রার্থী নির্বাচনের আগে সব প্রতিবেদন মূল্যায়ন করা হয়। মন্ত্রিসভা গঠনের আগেও গোয়েন্দা তথ্য মিলিয়ে দেখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে নেতা নির্বাচনে এবারই প্রথম গোয়েন্দা তথ্যকে ভিত্তি হিসেবে নেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দলের ভেতর শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে।’ এর আগে গত সোমবার ঢাকার মতিঝিলে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী তথ্য সংগ্রহ করেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব সেল রয়েছে। দলের যত বড় নেতাই হোক অনিয়ম দুর্নীতি করে কেউ ছাড় পাবেন না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দলীয় যেসব নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গেছে তাঁরা কেউ ছাড় পাবেন না।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘নেতা নির্বাচনের আগে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিষয়ে নিশ্চয় খোঁজখবর নেবেন। এটা খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের কাঁধেই নেতৃত্ব আসবে।’

গণভবন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে (কেন্দ্রীয় কমিটি) ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে। বিগত তিন বছরে যাঁদের কর্মকাণ্ড সন্তোষজনক নয় তাঁদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে। তরুণ মেধাবী এবং সরকারের তিন মেয়াদে বঞ্চিত নেতাদের অনেককে স্থান দেওয়া হবে কমিটিতে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে নিয়মিত কেন্দ্রীয় নেতাদের কর্মকাণ্ড, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কার্যক্রমের খোঁজ রাখছেন। গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোতে সহযোগী একাধিক সংগঠনের প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে অনেক নেতিবাচক তথ্য উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর বেশ কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে সংগঠনের কমিটি করতে গিয়ে অর্থনৈতিক লেনদেনের কথা গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ব্যর্থতা আওয়ামী লীগ সভাপতির নজরে এসেছে। এসব নেতাকে আগামী জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে।

বিগত উপজেলা নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রীয় নেতা বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দিয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কে তথ্য রয়েছে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে। এসব নেতাকে তিনি এবার বিদায় করবেন। দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে কিন্তু সভাপতিমণ্ডলীতে রয়েছেন এমন একজন নেতাকে ইতিমধ্যে হাইকমান্ডের নেতিবাচক মনোভাব জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই নেতা এই বার্তা পেয়ে দলীয় কর্মসূচিতে প্রায়ই অনুপস্থিত থাকছেন। আবার দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতাকে ডেকে তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য ভর্ত্সনা করেছেন। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে এসবের প্রতিফলন থাকবে বলে জানা গেছে।

গত শনিবার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর আগামী জাতীয় সম্মেলন নিয়ে বড় ধরনের তৎপরতা শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগে। গত রবিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সারা দেশে তৃণমূল নেতাদের কাউন্সিলের বিষয়টি জানিয়ে তৃণমূলের সম্মেলন আয়োজনের তাগাদা দিয়েছেন। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূল সম্মেলন শেষ করতে তিনি সময় বেঁধে দেন। আজ বুধবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় আগামী জাতীয় সম্মেলনের নানা বিষয়ে আলোচনা হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে সামনের দিনগুলোতে আমরা ব্যাপক কার্যক্রম চালাব। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সন্ত্রাস, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছেন তা আমাদের দলের জন্য একটি ভালো বার্তা। উনার এ অবস্থান অব্যাহত থাকবে।’

চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘কাউন্সিল সামনে রেখে আমাদের জোরালো তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। আমরা বিভিন্ন জেলার সম্মেলনের জন্য টিম করে দিচ্ছি। যেসব জেলা ও উপজেলা কমিটি দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ সেগুলোর সম্মেলন দ্রুত করে ফেলা হবে।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে (আজ অনুষ্ঠিত হবে) আগামী কাউন্সিল সামনে রেখে আমাদের সাংগঠনিক কর্মতৎপরতার নানা কৌশল ঠিক হবে। এরই মধ্যে আমরা কাউন্সিলের কাজ শুরু করে দিয়েছি। এখন ব্যাপকভাবে তৎপরতা শুরু হবে।’

ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘গত জুলাইয়ে ময়মনসিংহ বিভাগের জেলা, উপজেলা পর্যায়ের নেতারা, দলীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বিভাগীয় প্রতিনিধিসভা করেছি। শিগগিরই আমরা জেলা ও উপজেলায় সাংগঠনিক সফর শুরু করব। যেসব জেলা ও উপজেলা কমিটি দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ রয়ে গেছে সেগুলোর সম্মেলন আগে করব।’

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক নেতা জানান, সম্মেলন উপলক্ষে বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা তৎপর হয়েছেন। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগের জেলা ও মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে খুলনায় একটি প্রতিনিধিসভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে জেলা ও উপজেলা সম্মেলনের নানা বিষয় চূড়ান্ত করা হবে।

আগামী শুক্রবার বিকেল ৫টায় চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সাংগঠনিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনায় বসবেন। সেখান থেকে সম্মেলন উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা সম্মেলন শেষ করার বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে। সূত্র: কালের কণ্ঠ

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন