গ্রাম্য ইসমাইল থেকে ঢাকার সম্রাট, অতঃপর...!

  06-10-2019 09:37PM

পিএনএস ডেস্ক : তার নাম ইসমাইল হোসেন চৌধুরী। সম্রাট তার খেতাব। চালচলনও সম্রাটের মতোই তার। অভিযোগ রয়েছে চাঁদাবাজি থেকে টেণ্ডারবাজি এমনকি ক্যাসিনো কাণ্ড সবখানেই তার পদচারণা। শত শত নেতা-কর্মী-সমর্থকে বেষ্টিত থাকেন তিনি। রাজধানীর আন্ডারওয়ার্ল্ডে নাকি তার একচ্ছত্র দাপট। ঢাকার অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করেন এমন অনেকে ‘ডন’ তাকে গুরু মানেন।

সম্রাটের পৈত্রিক নিবাস ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের পূর্ব সাহেবনগর গ্রামে। তার পিতার নাম ফায়েজ উদ্দীন চৌধুরী। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার বড় সম্রাট। সাধারণত, ফেনীতে নিজের এলাকায় বিপুল সংখ্যক কর্মীদের নিয়ে সফর করেন সম্রাট। এছাড়া স্থানীয়ভাবে আর্থিক সহযোগীতা; বিশেষ করে স্থানীয় মসজিদ ও মাদরাসার বড় ‘দানবীর’ হিসেবে খ্যাতি রয়েছে তার।

রাজনীতিতে প্রবেশ

সম্রাট রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ১৯৯০ সালে। তখন অবিভক্ত ঢাকা ছাত্রলীগের একজন নেতা ছিলেন তিনি। সেসময় দেশজুড়ে চলছিল এরশাদবিরোধী আন্দোলন। সম্রাট রাজধানীর রমনা অঞ্চলে আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। একারণে তখন তাকে নির্যাতনসহ জেলও খাটতে হয় তাকে।

১৯৯১ সালে এরাশাদের পতনের পর ক্ষমতায় আসে বিএনপি সরকার। সে আমলে সম্রাটের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি যুবলীগের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিতি পান। ১/১১'এর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সময় সম্রাট যুবলীগের প্রথমসারির নেতা ছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসে। এরপর থেকেই রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশীল হতে থাকেন সম্রাট। দলীয়ভাবে পদোন্নতিও হয় তার। আওয়ামী লীগের বড় বড় সব অনুষ্ঠানে পরিচিত মুখ হিসেবে উপস্থিত থাকতেন সম্রাট। দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কর্মীদের নিয়ে শোডাউনও করতে দেখা যায় তাকে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সম্রাটের নেতৃত্বাধীন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগকে সেরা ঘোষণা করেন যুবলীগ বর্তমান সভাপতি মো. ওমর ফারুক।

সম্রাটের ওপর শেখ হাসিনার অসন্তোষ

২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যুবলীগের বেশকয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা। এসময় সম্রাটের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

সম্রাটের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও একটি দাতব্য সংস্থার ভবন নির্মাণের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে সেদিন ঢাকা দক্ষিণের যুবলীগ কমিটি ভেঙে দেওয়ারও নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ প্রধান। এঘটনার সময় যুবলীগের সভাপতি মো. ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ উপস্থিত ছিলেন।

'ক্যাসিনো সম্রাট'?

চলতি মাসের ১৯ তারিখ ঢাকায় অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন দক্ষিণ যুবলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া। চার মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ব্যবসায় খালেদের ‘গুরু’ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে সম্রাটের। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে সম্রাটকে ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে উল্লেখও করা হয়েছে।

সম্রাট একজন পেশাদার জুয়াড়ি এবং একারণে সিঙ্গাপুরে তার যাতায়াত আছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে। মাসের এক-তৃতীয়াংশ সময় তিনি জুয়া খেলতে সিঙ্গাপুরে কাটান বলে নানা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। সেখানের মারিনা বে স্যান্ডস ক্যাসিনোতে সম্রাট একজন বিশিষ্ট জুয়াড়ি বলে জানা গেছে। সিঙ্গাপুরে পৌঁছালে বিমানবন্দর থেকে সম্রাটকে বিলাসবহুল লিমুজিন গাড়িতে করে তাকে ওই ক্যাসিনোতে নিয়ে যাওয়া হয়। সিঙ্গাপুরে সফরের সময় আরমান ও মোমিনুল হক মোমিনসহ যুবলীগের একাধিক নেতা সম্রাটের সঙ্গ দেন বলেও অভিযোগ আছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ঢাকার বেশকয়েকটি ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা চলে সম্রাটের ইশারায়। সেখান থেকে নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করেন তার সহযোগীরা। একাজ চালিয়ে যেতে প্রভাবশালীদের টাকা দিয়েও হাত করতেন তিনি।

অবশেষে ধরা

সম্রাটকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। আজ রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার বলেন, ক্যসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে আজ রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভোর ৫টার দিকে অভিযান চালানো হয়। এ সময় চৌদ্দগ্রাম থানার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর চৌধুরী বাড়ি থেকে সহযোগী আরমানসহ সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন