মতপ্রকাশের কারণে পিটিয়ে হত্যা ‘সংবিধানের ওপরে আঘাত’: ড. কামাল

  10-10-2019 12:57PM

পিএনএস ডেস্ক:মতপ্রকাশের কারণে পিটিয়ে হত্যা করা ‘সংবিধানের ওপরে আঘাত’ বলে মন্তব্য করে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘সংবিধানে আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। যে কেউ তার মতপ্রকাশ করতেই পারেন।’

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে মাওলানা আকরাম খাঁ হলে গণফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘তদন্ত করে সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটন করতে হবে। এটা কোনও দলীয় বক্তব্য নয়। ১৬ কোটি মানুষের একজন হিসেবে আমি এই দাবি জানাচ্ছি।’

এসময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি আমরা কোনদিনই চাই না। তবে স্বাধীন ছাত্র রাজনীতি থাকতে পারে।’

আবরার হত্যাকাণ্ডে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বিচার বিভাগীয় হতে পারে, সঙ্গে অন্যরাও থাকতে পারে।’

দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে আপনার দলের সংসদ সদস্য পদত্যাগ করবে কি না জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, ‘সেটা দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

একই প্রশ্নের উত্তরে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমি বারবার সংসদে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি, এখনও করছি এবং আমাদের সংসদ নেত্রীর বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছি যে, আপনি শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের বিচার করুন।’

মোকাব্বির বলেন, ‘দেশের শীর্ষ ১২ জন দুর্নীতিবাজকে যদি যুদ্ধাপরাধীদের মতো আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করা হয় তারপরে যদি দেশের দুর্নীতির হার ৫০ শতাংশ কমে না যায় তাহলে আমাদের দলীয় প্রধানের অনুমতি নিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করবো।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের দুর্বৃত্তায়িত নেতা-কর্মী এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, তারা আজ ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের মতো আচরণ করছে। হলে হলে টর্চার সেল। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজের হোস্টেলগুলোতেও রয়েছে টর্চার সেল। টার্গেটে থাকা শিক্ষার্থীকে টর্চার করার আগে দেয়া হয় বিরোধী কোনও সংগঠনের তকমা। এটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক, রাজনৈতিক ভণ্ডামি ও কৌশলী প্রতারণা।’

তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেশ আজ ধ্বংসের মুখোমুখি। জনগণের মালিকানা জোরপূর্বক ছিনতাই করে ক্ষমতা দখলের কারণে আজ গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে যেতে বসেছে। সুশাসন ও জবাবদিহিতা নেই। শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক ন্যূনতম ব্যবস্থার পরিবর্তে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ক্ষমতা যেখানে কেন্দ্রীভূত দুর্নীতির মহাউৎসব সেখানে দৃশ্যমান। বর্তমান ভিন্নমত দমন, মিথ্যা মামলা, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা, সভা-সমাবেশ করতে দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা -নিষেধ, নিবর্তনমূলক আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরির মাধ্যমে সরকার প্রকাশ্যে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘এই ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় লুটপাট, ধর্ষণ, কালো টাকা, অর্থ পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য প্রকট হয়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। সরকারি ছত্রছায়ায় গুটিকয়েক চক্র ব্যাংক লুট করছে, টেন্ডারবাজি করছে, আর্থিক ভাগাভাগি নিয়ে খুনখারাপি চালাচ্ছে। দেশে আজ ক্যাসিনো সংস্কৃতি চলছে। মানুষের জীবনের কোনও নিরাপত্তা নেই। সর্বত্রই চলছে অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খলতা এবং ব্যাপক দুর্নীতি।’

সুব্রত চৌধুরী আরও বলেন, ‘এ অবস্থা থেকে দেশবাসী পরিত্রাণ পেতে চায়। আসুন, দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত, ভণ্ড, গণবিরোধী ও কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করি। দেশে কার্যকর গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ি।’

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজবাহ উদ্দিন, মহসীন রশিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিন আহমেদ আফসারি, মোস্তাক আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারি হামিম প্রমুখ।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন