পেছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই: ফখরুল

  04-11-2019 10:07PM

পিএনএস ডেস্ক : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। এদেশের মানুষের মন থেকে তারা হারিয়ে গেছে। দেশের প্রতিটি মানুষ দোয়া করছেন, কবে এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি পাবেন। তাই আর পেছনে দিকে ফিরে তাকানোর সময় নেই।

সোমবার যশোরে বিএনপির প্রয়াত স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

‘যশোর জেলা বিএনপিরর উদ্যোগে জেলা পারিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত স্মরণ সভা’ অনুষ্ঠিত হয়।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, মিথ্যা মামলায় আমাদের নেত্রীকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। সারাদেশে এই আওয়ামী সরকারের নির্যাতনের ফলে ২৬ লক্ষ মানুষ আসামী। পাঁচশ’র উপরে আমাদের নেতাকর্মী গুম হয়েছে। সেই নির্যাতনের কথাতো আমরা ভুলতে পারি না। এই একটা ভয়াবহ দুঃশাসনের পাথর আমাদের উপর চেপে বসেছে। এই পাথরকে আমাদেরই সড়াতে হবে। অন্য কেউ এসে এটা সড়িয়ে দেবে না। বাংলাদেশের মানুষকেই এবং বিএনপিকেই এই পাথরকে সড়াতে হবে। আমরা একটা কথা আজ পরিস্কার করে বলতে চাই, এই সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। সেটি পৃথিবীর কোন রাজনৈতিক ইতিহাসে নেই। জবরদস্তি আর বন্দুকের নল দিয়ে টিকে থাকা যায় না। এই দেশের মানুষের মন থেকে তারা হারিয়ে গেছে। দেশের প্রতিটি মানুষ দোয়া করছেন কবে এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি পাবেন। তাই আর পেছনে দিকে ফিরে তাকানোর সময় নেই।

তিনি বলেন, দেশ আজ দূর্নীতিতে ভরে গেছে। দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা শেষ হয়ে গেছে। শেয়ার মার্কেট শেষ হয়ে গেছে। দেশে মেগা লুট হচ্ছে। এটাতো সরকারের লোকেরাই স্বীকার করে নিয়েছে দুর্নীতির কথা। নিজেরাই এখন নিজেদের দুর্নীতি বের করে শুদ্ধ অভিযান পরিচালনা করছে। দেশে মানুষ যানে আসল দুর্নীতিবাজ কারা? কাদের নির্দেশে দেশে দুর্নীতি হচ্ছে। এই চুনোপুটি ধরে মানুষকে আপনারা বোকা বানাতে পারবেন না। মানুষ আপনাদের ভাল করেই চেনে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাইরে না থাকায় দেশে আজ স্বাধীনতা নয় মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া আজ নেই বলে ফেনী নদীর পানি অবলীলায় চলে যায়। কিন্তু তিস্তা নদীর পানি আমরা পাই না। তিনি নেই বলে ভারতের রাডার বসানো হয়। কিন্তু এটা দিয়ে কি হচ্ছে সেটা আমরা জানি না। তিনি নেই বলেই এলজি গ্যাস আমদানি করে প্রতিবেশী দেশে রপ্তানি করার আমরা সিদ্ধান্ত নেই। তিনি নেই বলেই আজ আমার দেশের স্বাধীনতানেই। বাক স্বাধীনতা নেই। সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা নেই। কেউ কোন কথা বলতে পারে না।

তরিকুল ইসলামের প্রতি স্মৃতি চারণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদর মধ্যে তরিকুল ইসলাম একজন। তিনি সারাদেশের মানুষের কাছে একজন বরেন্য নেতা। তরিকুল ভাইয়ের জানাজায় আমি আসতে পারিনি। উনার কবরে মাটি দিতে পারিনি। এটা আমার সারা জীবনের দুঃখ। আমরা এক সাথেই রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু করেছিলাম। স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে, একটা সুষ্ঠু সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্যে আমরা তরিকুল ইসলামের সহযোগী ছিলাম। আমি মধ্যে দিয়ে রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে সড়েছিলাম। কিন্তু তিনি সারাটাজীবন রাজনীতির মধ্যে ছিলেন। তিনি আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। যার সবকিছুতেই ছিল রাজনীতি। সত্যিকার অর্থে একজন অনুকরনীয় নেতা ছিলেন তরিকুল ইসলাম। তিনি অকুতোভয়ে সত্যা কথা বলতে এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে কখনোই দ্বিধায় ছিলেন না। কিন্তু শেষ বয়সে অসুস্থ শরীরে এসে তাকে বিভিন্ন মামলার হাজিরা দিতে যশোর-ঢাকা যশোর ছুটোছুটি করতে হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, একজনের মুত্যুর স্মরণ সভা করতে এসে আরেকজনরে মৃত্যুর সংবাদ শুনলাম। আমাদের আরেক সহযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা মারা গেছেন। এ যেন এক মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়ে গেছে। এই সরকার আসার পর থেকে বিগত বারো বছরে অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ণে আমাদের একেকজন প্রজ্ঞাবান নেতা চলে যাচ্ছেন। এই চলে যাওয়ার মধ্য দিয়েই আমাদের নতুন স্বপ্ন দেখতে হবে। এই চলে যাওয়ার মধ্যদিয়ে তাদের পথ অনুসরণ করে আগামীর সূর্যকে উঠতে দেখতে হবে।

সভায় নেকাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জনগণ আমাদের পাশে আছে। কিন্তু আমাদের উপলব্ধি করতে হবে জনগণ আমাদের যেভাবে চায় সেইভাবে তারা আমাদেরকে পাশে পাই কিনা? যদি না পায় তাহলে আমাদের জনগণের পাশে থাকার সেই সিদ্ধান্তটা নিতে হবে। শহীদ জিয়ার ডাকে জনগণ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। তখনো কিন্তু আদালত ছিল সুতরাং ওই যে আদালত যে তখন ৭০ এর নির্বাচনের ফলাফল মানল না তার জন্য আদালত কিন্তু ইয়াহিয়া খানকে বলে নাই এটা বেআইনি, ক্ষমতা হস্তান্তর করো। সুতরাং আজকের আদালত আদালতের জায়গায় নেই। আজকের আদালত প্রধানমন্ত্রীর কব্জার মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী চাইলে কারো মুক্তি হয়, না চাইলে মুক্তি হয় না।

দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্পষ্টবাদী হওয়া একজন রাজনীতিবিদের জন্য খুব কঠিন। কারন একজন রাজনীতিবীদ স্পষ্টবাদী হলে তার শত্রু বাড়ে। তবে তিনি এসবের তোয়াক্কা করেতেন না। মরহুম তরিকুল ইসলাম এই গুনের অধিকারি ছিলেন। এর চাইতে বড় গুন মানুষের হতে পারেনা। মানুষিকভাবে বিএনপিকে এগিয়ে নিতে হলে বিত্তের দুর্বিত্তায়নমূলক রাজনীতি পরিহার করে তরিকুল ইসলামের পথে হাটতে হবে।

তরিকুল ইসলামের স্ত্রী ও যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নারগিস বেগমের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারি হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পিএনএস/মো. শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন