আন্দোলনের কৌশলে পরিবর্তন আনছে বিএনপি

  09-12-2019 08:38PM

পিএনএস ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রায় দুবছর ধরে কারাবন্দি। এরই মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে গেল। দলীয় প্রধানকে ছাড়াই প্রথম কোনো নির্বাচনে অংশ নিল বিএনপি। এই নির্বাচনে ভয়াবহ ভোট ডাকাতির অভিযোগ ছিল বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। কিন্তু নতুন নির্বাচন দাবিতে কার্যত কোনো আন্দোলন কর্মসূচি দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি জোট। এ নিয়ে কেন্দ্র ও তৃণমূলে ক্ষোভের অন্ত নেই।

শুধু তাই নয়, গত ১০ বছরে বিএনপি জোট চোখে পড়ার মতো সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলন করতে পারেনি। সবশেষ দুই-তিন বছরে বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতেও ব্যর্থ হয়েছে। এসব নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ডসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা প্রশ্নবানে জর্জরিত হচ্ছে।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থাও জটিল। এভাবে চার দেয়ালে দীর্ঘদিন ধরে জীবনযাপন, দলীয় চেয়ারপারসনের জীবনশঙ্কাও করছেন দলটির নেতারা। দুদিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তো স্পষ্টই বলেছেন– এ মুহূর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা না গেলে তার জীবনশঙ্কা রয়েছে। চিকিৎসকদের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেছেন– বেশ কিছু জটিল রোগে খালেদা জিয়া ভুগছেন। তার হাত-পা বাঁকা হয়ে গেছে, সোজা করতে পারছেন না। দিন দিন মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে বিএনপির শীর্ষ নেত্রী।

এমতাবস্থায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে নামা ছাড়া পথ দেখছেন না বিএনপি নেতারা। তৃণমূল থেকেও আন্দোলনের চাপ রয়েছে কেন্দ্রে। এমতাবস্থায় আন্দোলনের ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করার কথা ভাবছে বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এই তথ্য জানা গেছে।

দলীয় সূত্র জানায়, দলের করণীয় নিয়ে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে হাইকমান্ড যোগাযোগ করলে তারা দুটি প্রস্তাব দেন। এক. খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে কেন্দ্রীয় নেতাসহ জেলা নেতাদের একযোগে কারাবরণ।

দুই. এক দফা আন্দোলন, যা সফল করতে একযোগে সারা দেশের নেতাকর্মীরা রাজপথে নামবেন। এ দুই প্রস্তাব নিয়ে নীতিনির্ধারকরা গত বুধ ও বৃহস্পতিবার গুলশান কার্যালয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। সেখানে তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এক দফা আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন হাইকমান্ড। আন্দোলন সফল করতে মধ্যম সারির কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্বও দেয়া হয়েছে। তারা সারা দেশের জেলা, মহানগরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। আর বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সরাসরি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশনা দিচ্ছেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, ১২ ডিসেম্বর চেয়ারপারসনের জামিনের রায়ের শুনানির পর আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। খালেদা জিয়ার জামিনের রায় নেতিবাচক হলে সরকার পতনে এক দফায় যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে হাইকমান্ডের।

যেমনটি বলেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তার ভাষায়, আমরা যদি দেখি বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার জামিন হয়নি, তা হলে এ দেশে এক দফার আন্দোলন হবে। তা হবে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের আন্দোলন। তবে এ নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে দলটি। এর অংশ হিসেবে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করছে। গত দুদিন ধরে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন। এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতেও রাজধানীতে ব্যাপক শোডাউন করবে বিএনপি।

এ লক্ষ্যে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার চিন্তাভাবনা আছে। রাজপথের যে কোনো আন্দোলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের শরিকদের পাশে রাখবে দলটি।

বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজপথের আন্দোলন ধাপে ধাপে জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। হরতাল বা অবরোধ নয়, আপাতত ইস্যুভিত্তিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠ দখলের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি সারা দেশে পালনের জন্য কঠোর বার্তা পাঠানো হয়েছে। নেতাকর্মীরা রাজপথে নামছে কিনা তার প্রমাণ হিসেবে মিছিলের ছবি– এমনকি ভিডিওকেন্দ্রে পাঠাতে বলা হয়েছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে তা বাস্তবায়নও শুরু করেছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে যুবদল। আজ সারা দেশে স্বেচ্ছাসেবক দল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে র্যা লি করবে বিএনপি। ১৭ ডিসেম্বর ঢাকায় ব্যাপক শোডাউন করবে তারা। ওই দিন বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে র্যা লি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিকে সামনে রেখে বড় ধরনের মহাসমাবেশ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। ঐক্যফ্রন্টকে সঙ্গে নিয়েই এ কর্মসূচি পালন করা হতে পারে।

২৯ অথবা ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সমাবেশ করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এতে ব্যাপক শোডাউনের মাধ্যমে রাজপথে তাদের উপস্থিতি জানান দিতে চাচ্ছেন।

জানতে চাইলে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, এ মুহূর্তে সবার নজর আদালতের দিকে। বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি। সেদিন কি রায় হয় তার ওপর কর্মসূচির কৌশল অনেকটা নির্ভর করছে। ১২ ডিসেম্বরের পর ঐক্যফ্রন্ট তাদের কর্মকৌশল চূড়ান্ত করবে বলে জানান এই নেতা।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডে মানুষ অতিষ্ঠ। তারা দিন দিন ফুঁসে উঠছে। এ সরকারের দুঃশাসন থেকে তারা মুক্তি চায়। বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। তারা শুধু ডাকের অপেক্ষায়। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া শুধু বিএনপি নয়, জনগণের নেত্রী। গণতন্ত্র রক্ষায় আপসহীন নেত্রী। তাকে কারাগারে রেখে দেশে কখনও গণতন্ত্র টেকসই হবে না। তাই গণতন্ত্রের স্বার্থেই জনগণ তার মুক্তি চায়। আশা করি আদালতে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন। না হলে রাজপথেই ফয়সালা হবে।

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এক দফা আন্দোলন ছাড়া আর বিকল্প নেই। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসাবিহীন রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে, তা জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে আমরা মেনে নিতে পারি না। এখানে আমাদের ঝুঁকি নিতেই হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ মুহূর্তে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন করতেই হবে। আর গণতন্ত্রের অন্যতম নেত্রী খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হলে তার কারামুক্তির বিকল্প নেই। আমরা আশা করি আদালতে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার আদালতে তার জামিন শুনানি আছে। সরকার যদি আদালতকে ব্যবহার করে তার জামিন আটকে দেন, তা হলে রাজপথেই এর সমাধান হবে। মানুষ তখন বর্তমান সরকার পতনের আন্দোলনকে বেছে নিতে বাধ্য হবে।- যুগান্তর

পিএনএস-জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন