‘সরকার চিকিৎসা নিয়ে জনগণের সাথে ধাপ্পাবাজি করছে’

  19-06-2020 01:08PM


পিএনএস ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সরকারের বারবার একইরকম প্রতিশ্রুতিকে ‘কাজীর গরু কেতাবেই থাকছে, গোয়ালে নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কে কাটছে মানুষের দিন। মানুষ বিপর্যস্ত ও আতঙ্কিত। করোনা ভীতিতে আচ্ছন্ন দেশের জনগণ। মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে প্রতিদিন। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল অবস্থায় জনমনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ও করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা সারাবিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে। ল্যাবে নমুনার স্তুপ জমা হয়ে আছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের বর্তমান দুর্দশায় প্রমাণিত হয়েছে, এই সরকার জনগণের সাথে বছরের পর বছর ধরে ধাপ্পাবাজী করেছে।

তিনি বলেন, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৭টি জেলাতেই ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিট নেই। করোনা ভাইরাসের এই মহামারীর সময়ে মানুষের জীবনের বিনিময়ে স্বাস্থ্যখাতের বিপন্ন ও ভঙ্গুর ছবি প্রকাশ হয়ে পড়েছে। ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর দেশের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মরহুম মোহাম্মদ নাসিম জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, চলতি মাসেই অর্থাৎ ২০১৪ সালের নভেম্বর মাস থেকেই জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও হৃদরোগীদের জন্য বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্র (সিসিইউ) এর কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। মোহাম্মদ নাসিমের প্রতিশ্রুতির ঠিক ছয় বছর পর ২০২০ সালে এসেও আওয়ামী সরকারের মুখে সেই একই কথা। একই প্রতিশ্রুতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বলেছেন, 'প্রতিটি জেলা হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) স্থাপন করা হবে'। আওয়ামী সরকারের বারবার একইরকম প্রতিশ্রুতি ‘কাজীর গরু কেতাবেই থাকছে, গোয়ালে নেই’-এর মতো।

রিজভী বলেন, আমরা যখনই আওয়ামী লীগের দুর্নীতি-দুরাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছি, আমাদের পেছনে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে র্যা ব-পুলিশ। উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে নির্দয় নিষ্ঠুরভাবে, আর অপবাদ দেয়ার জন্য গণমাধ্যমকে বাধ্য করা হচ্ছে রক্তচক্ষু প্রদর্শন করে। বিরোধী দল, স্বাধীন চিন্তা ও মতের মানুষদেরকে হেনস্তা আর হয়রানির গতি এই করোনাকালেও আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে, এই সরকারের হাতে মানুষের জানমাল নিরাপদ নয়।

তিনি বলেন, দেশের গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে গত একদশক ক্ষমতাসীন সরকার জনগণকে কথিত উন্নয়নের গল্প শুনিয়েছে। অথচ, নির্মম বাস্তবতা হলো, উন্নয়নের শ্লোগানের আড়ালে গত একদশকে দেশে দুর্নীতির-অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া আর কিছুই হয়নি। এই করোনার প্রকোপের মধ্যেও সরকার দুর্নীতির সংবাদ আড়াল করার জন্য প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমের সাংবাদিকদেরকে ডেকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানী করছে। বিরোধী দল ও গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ওপর তাদের প্রণীত সকল কালাকানুন নির্বিচারে প্রয়োগ করছে। কেউ আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা আর দুর্নীতির কথা মনে করিয়ে দিলে তাকে তাড়াহুড়ো করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গুম করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করার কারণে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজনকে চাকুরীচ্যুৎ করা হয়েছে। বিএনপি এবং ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো ‘ব্ল্যাক ল’ প্রয়োগের মাধ্যমে গুম, মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতার এখন এই ভয়াল করোনা ভাইরাসের তান্ডবের মধ্যেও নিত্য দিনের ঘটনা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দুর্নীতি এবং দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে মন্তব্যকারীদের দ্রুততার সাথে যেভাবে পাকড়াও করা হচ্ছে সেভাবে যদি দুদক ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দুর্নীতির বিপক্ষে এ ধরণের পদক্ষেপ নিতো তাহলে দেশে আজ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এতটা বেহাল অবস্থা থাকতো না। দুদক হচ্ছে একটা নির্লজ্জ দলকানা প্রতিষ্ঠান। আর যদি বলা হয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্তব্য করার জন্য নয় বরং একজন মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মন্তব্য করার কারণেই আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হওয়ার পরও উল্লিখিত দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাহলেও দেশের জনগণ সাক্ষী, মৃত মানুষের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, মৃত মানুষকে অপবাদ দেয়া, এমনকি কবরে হামলা করার মতো অশোভন, অধার্মিক এবং নোংরা কাজটি ক্ষমতাসীন দলের লোকজনরাই করে আসছে। এই শিক্ষকরা স্বাস্থ্যখাতের যে লুটপাটের কথা, যে ব্যর্থতার কথা এবং সত্যগুলো প্রকাশ করেছেন তা আজ হাটে-ঘাটে মানুষের মুখে মুখে। বাস্তবতা মানুষকে প্রতিবাদী করে তুলছে। কি ভয়াবহ বিপদজনক পরিস্থিতি দেশে তৈরী হয়েছে যে, মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে না। সরকারের চরম ব্যর্থতার কথাও বলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কালাকানুন করে মানুষের সত্য প্রকাশের কন্ঠ বাজেয়াপ্ত করে দিয়েছে সরকার। সরকারের সীমাহীন জুলুম, মামলার কারনে সারাদেশের মানুষ মজলুমে পরিণত হয়েছে। তবে অচিরেই ঐক্যবদ্ধ মজলুমের আওয়াজ এই নিশিরাতের সরকারের চরম পরিণতি ডেকে আনবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন