কাউন্সিলর পদ হারাতে পারেন ইরফান সেলিম!

  27-10-2020 01:39PM

পিএনএস ডেস্ক:অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখার দায়ে ঢাকা-৭ আসনের সাংদস হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে দুই মামলায় ৬ মাস করে ১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ইরফান ও তার সহযোগীদের হাতে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা মারধরের শিকার হওয়ার জের ধরে সোমবার (২৬ অক্টোবর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা নাগাদ পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাটে হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ওই দুজনকে গ্রেপ্তারের পর এই দণ্ড দেওয়া হয়।

ইরফানকে কাউন্সিলর পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে কি-না জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ বলেন, ইরফান সেলিম বা যে কোনো কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক এমন সাজা প্রদানের অভিযোগ সিটি করপোরেশন কতৃক লিখিত আকারে মন্ত্রণালয় পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হাজী সেলিমের বাসার নিচে সোমবার সন্ধ্যায় র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার দায়ে ছয় মাস এবং মাদক রাখা ও সেবনের দায়ে ছয় মাস করে মোট এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। এ ছাড়া তার কক্ষ থেকে লাইসেন্স বিহীন বিদেশি অস্ত্র, একটি একনলা বন্দুক, একটি ব্রিফ কেইস, মদ ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হবে।

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু অবৈধ জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দেহরক্ষী মো. জাহিদের কাছ থেকে ৪০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের ৩৮ থেকে ৪০টি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে থাকে।

আশিক বিল্লাহ বলেন, এ ছাড়া আমরা তাদের কাছ থেকে গুলি, হ্যান্ডকাফ, একটি ড্রোন এবং কন্ট্রোল রুম থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি ভেরি হাই সিকিউরিটি সেট (ভিএইচএস) উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এটা ওয়াকিটকির একটি আধুনিক সংস্করণ। এ ছাড়া ওই বাসায় টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সোয়ারিঘাটের দেবদাস লেনে হাজী সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। অভিযান শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই চতুর্থ তলা থেকে ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানান র‌্যাব কর্মকর্তারা। অভিযানে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমও উপস্থিত ছিলেন। অভিযানকালে ওই বাড়িটিকে ঘিরে শত শত মানুষ জড়ো হয়। সাদা রঙের নয়তলা বিশিষ্ট ওই ভবনে হাজী সেলিম নিজে এবং তার ছেলেরা থাকেন। হাজি সেলিমের তিন ছেলে। তার মেজ ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম থাকেন পঞ্চম তলায়। চতুর্থ তলায় থাকেন ইরফান সেলিমের স্ত্রী, বাড়ির দ্বিতীয় তলায় হাজি সেলিম এবং ষষ্ঠ তলায় থাকেন বড় ছেলে সুলাইমান সেলিম। ছোট ছেলে আশিক সেলিম অস্ট্রেলিয়ায় পড়ালেখা করেন। বাকি তলাগুলো ভাড়া দেওয়া রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান, এছাড়া ওই বাসায় একটি ড্রোন, রাউটার, একটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার বা ভিপিএস পাওয়া গেছে। এই ভিপিএস দিয়ে মূলত তার পুরো নেটওয়ার্কে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতো, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ট্র্যাক করতে না পারে। সাধারণত ভিপিএস ব্যবহারের অনুমোদন পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থা। বিটিআরসি এই অনুমোদন দেয়। তবে হাজী সেলিম কোনও অনুমোদন নেননি।

রোববার রাতে ধানমণ্ডি এলাকায় হাজী সেলিমের গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদকে মারধরের ঘটনায় সোমবার একটি মামলা হয় থানায়। তাতে ইরফান সেলিম ছাড়াও হাজী সেলিমের প্রোটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপু, মোহাম্মদ জাহিদ ও মিজানুর রহমানের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও তিনজনকে আসামি করা হয়।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন