বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে ‘ঐক্যের ডাক দেবেন খালেদা জিয়া’

  19-03-2016 08:13AM


পিএনএস: ‘মুক্ত করবোই গণতন্ত্র’ এ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে আজ ১৯ মার্চ শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল।

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সকাল ১০টায় কাউন্সিলের উদ্বোধন করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এরই মধ্যে কাউন্সিল আয়োজনের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। গতকালও দলের সিনিয়র নেতারা একাধিকবার অনুষ্ঠানস্থল পরিদর্শন করেন। কাউন্সিলকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে উৎসাহের আমেজ।

শুক্রবার ঢাকার বাইরের কাউন্সিলর ও অতিথিরা রাজধানীতে এসে উপস্থিত হয়েছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশী-বিদেশী আমন্ত্রিত অতিথিসহ প্রায় চার হাজার ডেলিগেট উপস্থিত থাকবেন। তবে কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে উপস্থিতির সংখ্যা লক্ষাধিক ছাড়িয়ে যেতে পারে। কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানস্থলের সামনের দৃশ্যও পাল্টে গেছে। পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে আশপাশ। কারাবন্দী ও সিনিয়র নেতার ছবি দিয়ে কাউন্সিলকে স্বাগত জানিয়ে বিশাল ব্যানার টানোনো হয়েছে। অনুষ্ঠানে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া। তার বক্তব্যে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে দল সুসংগঠিত করার পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী দিনের দলীয় অবস্থানও তুলে ধরে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানাবেন। কাউন্সিলের শেষ পর্বে বিএনপির মহাসচিব নির্বাচন, স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচনসহ অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর আগে দলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখবেন কাউন্সিলররা।

সূত্র মতে, কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটি ও ১১টি উপকমিটি তাদের দায়িত্ব শেষ করে এনেছে। কাউন্সিলর কার্ড ও ডেলিগেট কার্ড বিতরণও শেষ। প্রায় তিন হাজার কাউন্সিলর থাকছেন অনুষ্ঠানে। কাউন্সিলর, ডেলিগেট, আমন্ত্রিত অতিথি ও উৎসুক নেতাকর্মী মিলিয়ে উপস্থিতির সংখ্যা লক্ষাধিক হতে পারে বলে দলটির নেতারা ধারণা করছেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আজ সকাল ১০টায় শুরু হয়ে কউন্সিলের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষ হবে মধ্যাহ্নভোজের মধ্য দিয়ে। দুপুর বেলা ৩টা থেকে শুরু হবে রুদ্ধদ্বার অধিবেশন। এতে আলোচ্য সূচিতে রয়েছে- শোক প্রস্তাব উপস্থাপন, দলের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির রিপোর্ট পেশ, মহাসচিবের সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা, দলের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংশোধন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছাড়াও লন্ডন থেকে ভিডিও বক্তব্য দেবেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

কাউন্সিল উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও ভিড় জমেছে নেতাকর্মীদের। কার্যালয়ের তৃতীয় তলা থেকে গতকালও বিতরণ করা হয়েছে কাউন্সিলর কার্ড। কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বরাদ্দের চেয়ে বেশি ডেলিগেট কার্ড সংগ্রহের জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলাপর্যায়ের নেতারা এবং বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা হন্যে হয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন। কার্ড বিতরণের দায়িত্বে থাকা নেতাদের কাছে তারা তদবির করছেন নানাভাবে।

কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের দৃশ্যও পাল্টে গেছে। পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে কার্যালয়ের আশপাশ। কারাবন্দী ও সিনিয়র নেতারা ছবি দিয়ে কাউন্সিলকে স্বাগত জানিয়ে বিশাল ব্যানার টানিয়েছেন। পাঁচতলা বিশিষ্ট কার্যালয় ঢেকে দেয়া হয়েছে কাউন্সিলের বিশাল ব্যানারে। এতে লেখা রয়েছে এবারের কাউন্সিলের মূল প্রতিপাদ্য- ‘মুক্ত করবোই গণতন্ত্র’। ব্যানারে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছোট প্রতিকৃতিও স্থান পেয়েছে। বিএনপির কাউন্সিলের এবারের মূল সেøাগান- ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’।

কাউন্সিল উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তৈরি করা হয়েছে লোগো, ওয়েবসাইট ও থিম সং। বিএনপির ১১টি সহযোগী সংগঠনও ভিন্ন ভিন্ন স্লোগানে পোস্টার তৈরি করেছে। যুবদল- ‘তারুণ্যে যারা অকুতোভয়, তারাই আনবে সূর্যোদয়’, কৃষক দল- ‘ফলাবো ফসল, গড়বো দেশ, গণতন্ত্রে বাংলাদেশ’, মুক্তিযোদ্ধা দল- ‘মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র, মুক্ত করো গণতন্ত্র’, শ্রমিক দল- ‘শ্রম দিয়ে শিল্প গড়বো, দেশের আঁধার ঘুচিয়ে দেবো’, মহিলা দল- ‘চেতনায় নারী, বিপ্লবে নারী, গণতন্ত্র ফেরাতে আমরাই পারি’, ছাত্রদল- ‘বাঁচতে চাই, পড়তে চাই, দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাই’, স্বেচ্ছাসেবক দল- ‘আলোর দিন দূরে নয়, করতে হবে আঁধার জয়’, জাসাস- ‘গাইবো মোরা গণতন্ত্রের গান, দুঃশাসনের হবেই অবসান,’ তাঁতী দল- ‘শক্ত হতে বাঁধো তাঁত, কাটাতে হবে আঁধার রাত’, মৎস্যজীবী দল- ‘জালের টানে ঘুচবে আঁধার, বাংলাদেশ সবার’ এবং উলামা দল- ‘জিয়ার আদর্শে দেশ গড়বো, ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় রাখবো’।

সরগরম আইইবি প্রাঙ্গণ: কাউন্সিলের আগের দিন গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই নেতাকর্মীতে মুখর হয়ে উঠেছে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন প্রাঙ্গণ। দফায় দফায় নেতারা এসে দেখে গেছেন প্রস্তুতিকর্ম। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ এসে সরকারকে ধন্যবাদ দিলেন। কারণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশও ব্যবহার করার অনুমতি পেয়েছে দলটি। আগত নেতাদের একজন অভিযোগ তোলেন, দেশের বাইরে থেকে আসতে চাওয়া কেউ কেউ ভিসা পাচ্ছেন না। এজন্য সরকারকে দায়ী করেন তিনি। প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্ট দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। মঞ্চ, মঞ্চের সামনের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অধিকাংশই দুপুরের মধ্যে এসে গেছে। নেতাকর্মীদের জন্য খাবার তৈরির প্রস্তুতি চলছে বড় বড় ডেকচিতে। পিকআপ ভ্যানে সোফা, চেয়ার, বাঁশ, কাপড়, দড়িসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আসে। জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙের কাপড়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে মঞ্চ। সামিয়ানা টাঙানোর কাজও শেষ। খালেদা জিয়া, তারেক রহমান। জিয়াউর রহমানের ছবির সঙ্গে নিজেদের ছবি জুড়ে পোস্টার, ব্যানার টানিয়েছেন দলের নেতারা ও তাদের ভক্তকর্মীরা। গাছ, সামিয়ানাসহ যেখানে যেখানে সেগুলো টাঙানো সম্ভব, কিছুই বাকি ছিল না। বিএনপির এ কাউন্সিলকে অনেকেই মিলনমেলা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, এতোদিন পর সারাদেশের নেতাকর্মীদের অনেকেই আজ এখানে আসবেন। দীর্ঘদিন যার সাথে দেখা হয়নি আজ সাক্ষাৎ হবে তার সাথে।

বিএনপির নেতাকর্মীদের আশা, এবারের কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে। বিশেষ করে যারা রাজপথের সাহসী যোদ্ধা তাদের দলে রাখা হবে। যারা এতদিন নিস্ক্রিয় ছিলেন তাদের দলের বাইরে রাখারই পক্ষে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা আন্দোলন সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাদের ভালো পদে রাখা হবে না। তবে যারা একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিলেন তারা এবার পদ পাবেন না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, আজ শনিবার দলের কাউন্সিলে লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতির পাশাপাশি তৃণমূল নেতাদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে। গতকাল বিকেলে জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতিক দলের দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

মাহবুবুর রহমান বলেন, স্থানীয় কমিটিসহ নির্বাহী কমিটিতে নতুন মুখ দেখা যাবে। যারা নিষ্ক্রিয় তাদের ঝরে পড়া উচিত। তারা পদ দখল করে কিছুই করতে পারেননি। কাউন্সিলের মাধ্যমে দল পুনর্গঠনের পর সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙা হবে। ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরিসহ সরকারের যেসব অগ্রহণযোগ্য কর্মকা- আছে, কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করে সেসবের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরালো করা হবে। এসময় অন্যদের মধ্যে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আহমেদ আলম খান, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, জাগপার চেয়ারম্যান শফিউল আলম প্রধান, ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মুস্তফা ভূঁইয়া, বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঐক্যবদ্ধের ডাক দেবেন খালেদা জিয়া : বিএনপির ৬ষ্ঠ কাউন্সিলে সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এর আগে সকাল ৯টার দিকে গুলশানের বাসা থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের উদ্দেশে রওনা করবেন তিনি। দলীয় কাউন্সিলে যোগদানের ব্যাপারে খালেদা জিয়ার সিডিউল বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত হয়েছে। জানা গেছে, এবারের কাউন্সিলে ক্ষমতাসীন সরকারের নানা অপকর্ম, দুর্নীতি দুঃশাসনের ফিরিস্তি উত্থাপনের পাশাপাশি দেশের হারানো গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানাবেন খালেদা জিয়া। তিনি তার সরকারের আমলে গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের বিবরণ দেয়ার পাশাপাশি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে তার দল কি করবে তারও একটি বিবরণ বক্তব্যে উল্লেখ করবেন। তার বক্তব্যের বেশীর ভাগ অংশই থাকবে ক্ষমতাসীনদের লুটপাট, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের চিত্র। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা লুটপাটের বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে। তিনি গত কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরবেন। তিনি দেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশবাসীকে এক হওয়ার আহবান জানাবেন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন