কোরবানি নিয়ে বুজরুকি বনাম বন্যার্তদের আহাজারি

  22-08-2017 11:40PM

পিএনএস: পৃথিবীতে যতগুলো মানবতাবাদী মতবাদ বিদ্যমান আছে সেগুলোর মধ্যে ধর্মীয় মানবতাবাদ নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মানে শীর্ষে অবস্থান করে। প্র্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলোর মধ্যে আবার ইসলামিক মানবতাবাদ সকল মানবাদী মতবাদের প্রতিনিধিত্ব করে। ইসলামের কোথাও বলা হয়নি প্রতিবেশীকে ভূখা রেখে তোমরা আহার করো। জ্ঞাতিকে বঞ্চিত রেখে তোমরা ভোগ করো কিংবা অন্যের কষ্ট দেখে তোমরা উল্লাস করো। বরং ইসলাম তার অনুসারীদের কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করেছে, ধর্মীয় হুকুম-আহকাম পালনের সাথে সাথে মানুষের মঙ্গলের জন্য নিবেদিত হতে। মানবতার মুক্তির দিশারী তার শ্রেষ্ঠ ভাষনে পবিত্র জবানে বলেছেন, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। কাজেই বিশ্বের যে প্রান্তেই হোক কোন মানুষ যদি কষ্ট পায়, আক্রান্ত হয় কিংবা নির্যাতিত হয় তবে সেটা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ঈমানের দাবীতে নিঃসন্দেহে কষ্টকর। এজন্যই ইসলামকে শুধুমাত্র মুসলিমদের ধর্ম হিসেবে এককভাবে দাবী করা হয়নি বরং বলা হয়েছে এটা সকল মানুষের জন্য কল্যানের। যারা এর ছায়াতলে আসবে তারা শ্রেষ্ঠ মানুষের স্বীকৃতি পাবে। সাম্য-ভ্রাতৃত্ব আর সৌহার্দ্যের বার্তা নিয়েই ইসলাম ধূলার পৃথিবীতে আগমন করেছে।

আমরা অনেক ভারাক্রান্ত হয়ে লক্ষ করেছি, দেশের প্রায় অর্ধেকভূমি ভারত থেকে নেমে আসার বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় প্রাণহানি ঘটেছে শতাধিক মানুষের। যারা জীবনে বেঁচে আছেন তারাও খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে ধুঁকছে। বন্যাকবলিত অঞ্চলের সর্বত্র পানি আর পানি। মানুষের বিশ্রামের জায়গাটুকু পর্যন্ত অবশিষ্ট নাই। যে যেদিকে পারছে আশ্রয় নিচ্ছে। সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতি সামলাতে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। বন্যাকবলিত কোন অঞ্চলেই সরকার পর্যান্ত সাহায্যের বন্দোবাস্ত করতে পারেনি। সত্যিকারার্থে এতোবড় দুর্যোগ মোকাবালের সামর্থ্য এককভাবে সরকারের না সরকার এবং জনগণের সম্মিলিত প্রয়াসেই বন্যাকবলিত মানুষগুলোর জন্য দু’বেলা আহারের সংস্থান এবং একটু আশ্রয়স্থল নির্মান করা সম্ভব। দেশের মধ্যে যারা মানবতাবাদী এবং বিত্তবান তারা তাদের সামর্থ্যানুযায়ী বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। দেশের ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে যে যার অবস্থান থেকে এককভাবে হোক কিংবা যৌথভাবে, শ্রমের মাধ্যমে হোক কিংবা আর্থিকভাবে, মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। বিগত দেড়যুগের অধিকালের মধ্যে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে যখন দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াচ্ছে বা দাঁড়ানোর জন্য আম্তপ্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছে তখন এক শ্রেণীর ধর্মবিদ্বেষীর ঘোষণায় গোটা দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমকূল ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে।

কোরবানি প্রদান থেকে বিরত থেকে সে অর্থে বন্যার্তদের সহায়তাদানের ঘোষণা যারা দিয়েছে সে সব কুলাঙ্গারের মুখোশ উম্মোচন হওয়া আবশ্যক । মানবতার প্রশ্নে মুসলমানদের দায়িত্ব মুসলামনের চেয়ে অধিক সচেতন কোন জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব পৃথিবীতে আছে কিনা অন্তত আমরা জানা নাই। ইসলামের অন্যতম নির্দেশনা তথা পশু কুরবানী থেকে বিরত থেকে সে অর্থ বন্যার্তদের কল্যানে যারা ব্যয় করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা নিঃসন্দেহে ইসলামের জঘন্যতম শত্রু। অতীতকালে যারা প্রাণীর প্রতি দরদ দেখাতে গিয়ে মানুষের মৃত্যু নিয়ে হাসাহাসি করেছে সেই শ্রেণীর বদদের এবার ইসলামিক নির্দেশনার প্রতি ভিন্ন ষড়যন্ত্ররূপেই এ ঘোষণা। দেশের মানুষ যে যেভাবে পারছে সে সেভাবে দুর্যোগগ্রস্থদের পাশে দাঁড়াচ্ছে কিন্তু কোরবানীর মত একটি আবশ্যকীয় নির্দেশণা পালন থেকে বিরত থেকে যারা ভিন্ন কিছু করার জন্য এবং ইসলাম ও মুসলামনদের বিরুদ্ধে তাদের দীর্ঘমেয়াদী ষড়যন্ত্র ভিন্ন কৌশলে বাস্তবায়নের নিমিত্তে এটা তাদের আরেক ছল । নিঃসন্দেহে এরা ভিন্ন দেশ এবং ভিন্ন মতবাদের এদেশীয় এজেন্ট।

দৈনন্দিন খরচের বিভিন্নখাত থেকে অর্থ সাশ্রয় করে বানবাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান তারা করতে পারতেন। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন তারা বন্যার্তদের জন্য দাবী করতে পারতেন। বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের সেবা ব্যবহারকারী থেকে এক-দুই টাকা বাধ্যতামুলক কেটে নেয়ার রাষ্ট্রীয় সিন্দান্তের জন্য তারা পরামর্শ দিতে পারতেন। আসন্ন ঈদ ও পুজার উদযাপনের জন্য নতুন পোশাক ক্রয়ের বাজেট থেকে কিছু টাকা তারা বন্যাকবলিতদের জন্য দাবী করতে পারতেন। এছাড়াও আরও বহুখাত থেকে তারা কোটি কোটি টাকার সাহায্য নিশ্চিত করার পরামর্শ তারা সরকার এবং এদেশের মানুষকে দিতে পারতেন। কিন্তু এসব কু-শীল(!)’রা এসবের ব্যাপারে কোন কথা না বলে সরাসরি কোরবানি না দিয়ে সে টাকা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যার্থে প্রদান করার কথা তারা কি জন্য বললেন ? এ শ্রেণীর অতীতেকৃত কার্যকলাপ এবং বর্তমান সময়ে কোরবানী সংক্রান্ত ঘোষণার দ্বারাই ইসলাম ও মুসলামনদের ব্যাপারে এদের মানসিকতা ও কামনার স্বচ্ছ প্রকাশ ঘটেছে। প্রায় ৯২% মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে যারা মুসলিমদেরকে কোরবানী বন্ধ রাখার জন্য বলে এদের সাথে মুসলিমদের ব্যবহার কেমন হবে সেটা নিশ্চয়ই সময় নির্দেশ করবে। এরা সেই ভদ্রবেশি মুখোশ যারা রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়ার পরেও মুখ খোলে না, রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির বিষবাষ্প ছড়ানোর পরেও যাদের ভাবান্তর হয়না। বরং এরা সর্বদা দালালি করে এবং দেশের সার্থকে কিভাবে বিদেশী প্রভূদের চরণে উৎসর্গ করে তাদের অনুকম্পা পাওয়া যায় এবং আয়েশী জীবন-যাপন করা যায় তার ধান্ধায় মাতোয়ারা।

কোন নায়ক আর নায়িকা এ বছর কোরবানী না দিয়ে সে টাকা বন্যার্তদের দিল সেটা দেখার দায়িত্ব প্রকৃত মুসলিমদের নয়। মুসলমানদের আদর্শ তো তারাই হবে যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশিত পথে জীবন ও জীবিকা পরিচালিত করে। এদেশের প্রত্যেক মুসলমান তার সামর্থ্য অনুযায়ী মুক্তহাতে বানবাসী মানুষের মঙ্গলার্থে সাহায্য করবেন। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে যাদের ব্যাপক পরিকল্পন ছিল সেখান থেকে কিছুট কর্তন করে বানবাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের প্রত্যেকের নৈতিক কর্তব্যে পরিণত হয়েছে। এক ঈদের নতুন পোশাক না পড়লে তাতে ঈদের সৌন্দর্য কমে যাবে না। মাঠে গিয়ে খেলার উল্লাসে মত্ত না হয়ে, দু’দিন সিনেমা না দেখে, দূরে কোথাও ভ্রমনে না গিয়ে, বন্ধুদের সাথে আড্ডায় না জড়িয়ে সে অর্থ বন্যার্তদের দিন। যাদের ওপর কোরবানী ওয়াজিব তারা কোনভাবেই কোরবানী বন্ধ রেখে সে অর্থ যদি অন্যকোন ক্ষেত্রে ব্যয় করে তাদেরকে নিঃসন্দেহে ইসলামের শিক্ষা থেকে বিচ্যূত হয়েই সেটা করতে হবে। সেসব ইসলামবিদ্বেষীদের চিন্তা-চেতনা ও সহচর্য থেকে বেঁচে থাকুন যারা স্বার্থবাদী এবং লুটেপুটে খাওয়াদের সাহায্যকারী। যাদের কাছে বিদেশী প্রভূদের সন্তুষ্টি দেশের স্বার্থের চেয়েও বেশি প্রাধান্য পায় তাদেরকে রুখে দিন। সবশেষ নিবেদন, যাতে ভুলে না যাই, মানুষ মানুষের জন্য।

লেখক: রাজু আহমেদ, কলামিষ্ট।



পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন