এত্ত বড় আস্পর্দা!

  25-09-2017 04:31PM

পিএনএস (সারফুদ্দিন আহমেদ) : দেশটা কি মগের মুল্লুক হয়ে গেল নাকি! পুলিশ এই সব কী শুরু করল? আদব নাই, লেহাজ নাই। ময়মুরুব্বির সম্মান নাই। কথা নাই, বার্তা নাই; যত্রতত্র যার-তার গাড়ি দাঁড় করায়! এত্ত বড় আস্পর্দা; আবার মামলা দেয়! জরিমানা করে!

আরে বাবা, আমাদের অন্যায়টা কী ছিল? সোজা পথ ছেড়ে উল্টো পথে গেছি; এই তো! তাতে হয়েছেটা কী? একি আমরা আচানক করেছি? এটা কি আমাদের আনকোরা খাসিলত?

আমরা কি আমজনতা? আমরা কি হাত কচলানো আবদুল? রাম-শ্যাম-যদু-মধু? বাপু, বুঝতে হবে—যাঁরা ‘আবদুল’, তাদের জন্য সোজা পথ। উল্টো পথ হলো রাজরাজড়া, সাহেবসুবোর ব্যাপার। এই সোজা ব্যাপারটা বুঝবা না?

আহা জানি তো, এই দেশে সোজা পথে গাড়ি চালালে জ্যামে পড়ে থাকতে হয়। আধঘণ্টা-এক ঘণ্টা; কোনো সময় আধাবেলা। আবদুলরা বাসে-সিএনজিতে বসে সেদ্ধ হয়। এটাই নিয়ম। এটাই নিয়তি। যারা বুঝদার, তারা জানে আসলে সাধারণ মানুষের তেমন কাজকর্ম নেই। তারা এই জ্যাম আসলে উপভোগ করে। এই সময়টাতে তারা ঘুমায়। রং-ঢঙের খোয়াব দেখে।

রং সাইড, মানে উল্টো পথে ফকফকা রাস্তা। শাঁ করে টান দাও। শাঁই করে চলে যাও।

এখন কথা হলো, সোজা পথ এড়িয়ে ‘শাঁ করে টান দিয়ে শাঁই করে’ চলে যাওয়া সোজা ব্যাপার না। এ এক ডিগনিফায়েড ব্যাপার। মাথায় রাখতে হবে, উল্টো পথে যাঁরা যান, তাঁরা কাজের লোক। সাংঘাতিক জরুরি কাজ মাথায় নিয়ে তাঁদের চলতে হয়। তা ছাড়া আবদুল আর এলিট যদি এক পথে যায়, তাহলে তো তাঁদের পক্ষে ‘নালতের মিত্তির বলিয়া সমাজে আর মুখ বাহির করিবার জো রহিবে না।’ কিন্তু হঠাৎ করেই পুলিশ আশরাফ-আতরাফের এই ব্যাপার বেমালুম ভুলে গেল কেন, হঠাৎ পুলিশের আদব লেহাজ ‘নাই’ হয়ে গেল কেন, সেটাই মাথায় ঢুকছে না।

বর্ষাকালে বিলের মধ্যে বগা ধরতে যে রকম ফাঁদ পাতা হয়, সেই কায়দায় রমনা পার্কের উল্টো দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধার সামনে ফাঁদ পেতে বসে ছিল পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের একটি দল। সেই ফাঁদে ফেলে তারা আমাদের কী বেইজ্জতিটাই না করল! মামলা দিল। জরিমানা করল। ‘চোরের দশ দিন, গৃহস্থের এক দিন’—এই রকম জীবনমুখী বাগধারা পর্যন্ত পাবলিককে দিয়ে আমাদের শুনিয়ে দিল পুলিশ।

এই ‘আমরা’ মানে কারা? আমাদের মধ্যে আছেন প্রতিমন্ত্রী, এমপি, সচিব, প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদ, পুলিশ, সাংবাদিক, বিচারক আর ব্যবসায়ী।

এইবার একটু মাথা ঠান্ডা করে চিন্তা করে দ্যাখ দেখি বাপু! এদের বাদ দিলে রাষ্ট্র থাকে? সরকার থাকে? থাকে না। এরাই দেশ চালায়। এরাই সমাজের মাথা। দেশের মাথা।

মাথাই সব। হাত-পা চিরকাল কাজই করে এসেছে। তাদের চালায় কে? চালায় মাথা। এই কারণে হাত-পা চিরকাল মাথার নিচেই থাকে। এই সাধারণ বিষয়টা বুঝে আসে না? মাথা যেদিকে যাবে, বডি সেদিকে যেতে বাধ্য। নাকি? হিসাব তো সোজা!

বড় চিন্তার কথা, যার নির্দেশেই হোক, পুলিশ সবখানে না পারলেও আপাতত রাস্তায় ‘মাথা’ ঘোরানোর কাজ শুরু করেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা চালকদের দাবড়ে বলেছেন, ‘আইজকা কোনো মাফ নাই। দ্যাখেন না সব বড় বড় স্যারেরা আইসা পড়ছে। দুদকের চেয়ারম্যান স্যার আসছিলেন। প্রতিমন্ত্রীর গাড়িরেও আইজকা মামলা দিছি। প্রতিদিন তো উল্টো যান, আইজকা একটা মামলা নিয়া যান।’

দুর্জনেরা বলছে, এখন রাস্তা থেকে অফিস-আদালত; কোর্ট-কাছারি, সবখানে মাথাগুলো রং সাইড থেকে সোজা পথে ঘুরিয়ে দেওয়া দরকার। মাথা ঘুরলে বডি ঘুরবে।-প্রথম আলোর সৌজন্য

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন