বাবার লাশও দেখতে দেওয়া হয়নি

  03-11-2017 03:03PM

পিএনএস ডেস্ক: ‘বাবার হত্যার খবর পাই পত্রিকার মাধ্যমে। আমরা তখন কলকাতায়। খবরটি শুনে আমি ও আমার ছোট ভাই কান্নায় ভেঙে পড়ি। তখন কলকাতায় আমাদের কোনো অভিভাবক ছিল না। বাসায় আসতে চাইলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ জীবনের কথা ভেবে ঝুঁকি নেয়নি; দেশে আসার অনুমতি দেয়নি। পরে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে লাশ নিয়ে এসে দাফন করা হয়। তখনো আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়নি। হত্যার পর বাবার লাশটাও দেখতে পারিনি আমরা।’ আমাদের সময়ের কাছে কথাগুলো বলছিলেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামানের ছেলে এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর কামরুজ্জামানসহ চার নেতাকে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে হত্যা করা হয়েছিল।

রাজশাহী উপশহরে নিজ বাসভবনে একান্ত সাক্ষাৎকারে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, জেলহত্যার খুনিদের বিচার সম্পন্ন করার মধ্য দিয়েই কলঙ্কমুক্ত হবে দেশ। আদালতে হত্যার বিচারটি প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি দ্রুততার সঙ্গে সে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার সম্পন্ন করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের বিচার করেছেন। জেল হত্যার বিচারও এ সরকার সম্পন্ন করবে বলে আশাবাদ লিটনের।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও রাজশাহী মহানগরের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন অবশ্য বলেন, বহু আগেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যা ও জেলহত্যার বিচার সম্পন্ন হতো; কিন্তু এ দেশের ঘাড়ের ওপর চেপে বসা পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা তা হতে দেয়নি। বরং দীর্ঘ ২১ বছর ধরে এ দেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস ও জেলহত্যার ইতিহাস নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলেছে। এ দীর্ঘ সময়ে বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে, পাকিস্তানি মৌলবাদী শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যার মধ্য দিয়ে দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার চক্রান্ত চলেছে। বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আবার সঠিক পথে চলতে শুরু করে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক এ মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ২০০১ সালে দেশবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় এসে সে বিচার প্রক্রিয়া নস্যাৎ করে। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে যে রায় দেয়, তা মেনে নেওয়া হয়নি। ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেন।

ঘটনার স্মৃতিচারণ করে শহীদ কামরুজ্জামানপুত্র বলেন, ১৯৭৫ সালে আমি নবম শ্রেণির ছাত্র। দেশের সব খবর পেতাম পত্রপত্রিকার মাধ্যমে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকেই দেশ একটা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। তখন পাকিস্তানপন্থিরা দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের ধরে ধরে হত্যা শুরু করে। আমার বাবা শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান ধানম-ির একটি বাসায় আশ্রয় নেন। কিন্তু আমার বাবা মানুষের সঙ্গে কথা না বলে থাকতে পারতেন না। তাই খুব দ্রুত পাকিস্তানের দোসররা তাকে খুঁজে পায়। জাতীয় চার নেতাকেই তখন জেলে নেওয়া হয়। পরে খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে জেলকোড ভেঙে কারাগারের ভেতরেই তাদের হত্যা করা হয়।

লিটন বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর থেকেই আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার চক্রান্ত শুরু হয়। এ জন্য ৪৭ সালের পর থেকে দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ভেঙে পড়েনি। অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। সব সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বিকশিত হয়েছে। এখন বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশকে উন্নতির শিখরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেশে সঠিক ইতিহাসচর্চার স্বার্থে আওয়ামী লীগ শাসনামলের বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পিএনএস/কামাল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন