কে দেবে মা-বোনের ইজ্জতের নিরাপত্তা?

  07-01-2018 05:04PM

পিএনএস (কাদের গনি চৌধুরী) : প্রতিদিন গড়ে তিন জন নারী ও শিশু ধর্ষিত হচ্ছে। এভয়ংকর তথ্য দিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। বাংলাদেশের ৪৬ বছরের ইতিহাসে বিদায়ী বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। একইসঙ্গে বেড়েছে নিষ্ঠুরতা ও ভয়াবহতা।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র -আসক জানিয়েছে ২০১৭ সালে সারা দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮১৮ জন নারী ও শিশু। এর আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৫৫৯। বিদায়ী বছরের তুলনায় গত বছর ২৫৭ জন নারী ও শিশু বেশি নির্মমতার শিকার হয়েছে। এ পরিসংখ্যান দিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

আসকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্যান্য বছরের মতো গত বছরও পুলিশ র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। বছরটিতে এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছে ১৬২ জন। যাদের মধ্যে সরাসরি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন ১৫৬ জন। আসকের এ পর্যালোচনায় ১৫টি ক্যাটাগরিতে বিগত এক বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এ ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন আসকের সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফয়জুল কবির। গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।


তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও সার্বিকভাবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল উদ্বেগজনক। ২০১৭ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম ও গুপ্তহত্যার ঘটনার পাশাপাশি এ বছরেও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের নিখোঁজ হওয়ার ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে নতুনমাত্রা। সাবেক রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রকাশক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক দলের নেতা, পৌর মেয়র কেউই বাদ পড়েননি গুম-নিখোঁজের তালিকা থেকে। বিগত বছরগুলোর মতোই এ বছর নীতিনির্ধারক মহলের বক্তব্যে গুম, গুপ্তহত্যাসহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিকে অস্বীকার করার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। আসকের পক্ষ থেকে এসব ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক তদন্ত নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদায়ী বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম ও গুপ্তহত্যার ঘটনার শিকার হয়েছেন মোট ৬০ জন। এরমধ্যে পরবর্তী সময়ে লাশ উদ্ধার হয়েছে ২ জনের। গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ৮ জনকে, পরিবারের কাছে ফেরত এসেছেন ৭ জন।

বাকিদের এখনো খোঁজ মেলেনি। এছাড়া বছরটিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ‘রহস্যজনক নিখোঁজ’ হয়েছেন ৩১ জন। রহস্যজনক নিখোঁজের পর ফেরত এসেছেন ৯ জন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ৬ জনকে। আসক বলছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে তাদের জনসম্মুখে হাজির করেছে বা গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে গুম হওয়া ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০১৭ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, গুলিবিনিময় এবং হেফাজতে মোট ১৬২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, গুলিবিনিময়ে নিহত হন ১২৬ জন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন ১২ জন, গ্রেপ্তারের আগে ও পরে গুলিতে মারা যান ১৮ জন, গ্রেপ্তারের পর আত্মহত্যা করেছেন একজন, অসুস্থ হয়ে মারা যান ৪ জন এবং একজনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৫৩ জন, যার মধ্যে হাজতি ৩৩ এবং কয়েদি ছিলেন ২০ জন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে ৫৭ ধারায় সাংবাদিক, লেখকসহ মোট ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন টকশো, সংবাদ মাধ্যমে লেখা ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের জন্য লেখক, বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকারকর্মীদের হুমকি ও হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। বিদায়ী বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, সন্ত্রাসী, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হাতে শারীরিক নির্যাতন, হামলা, মামলা, হুমকি ও হয়রানিসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১২২ সাংবাদিক। এছাড়া রাজনৈতিক সংঘাতের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এক সাংবাদিক। আসকের পরিসংখ্যান ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ২১২টি প্রতিমা, পাশাপাশি ৪৫টি বাড়িঘর ও ২১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় একজন নিহতসহ ৬৭ জন আহত হয়েছেন। সীমান্ত হত্যার ব্যাপারে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত বছরগুলোর মতো ২০১৭ সালেও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত ছিল। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর হাতে সীমান্তে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন আশ্বাস দেয়ার পরও সেটি ফলপ্রসূ হয়নি। বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে সীমান্ত থেকে বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে নির্যাতন, গুলি করে হত্যা, এমনকি বেআইনিভাবে অনুপ্রবেশ করে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৭ সালে নারী অধিকার পরিস্থিতি ছিল উদ্বেগজনক। এ বছরে বখাটেদের যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৫৫ জন নারী। এরমধ্যে ১২ জন আত্মহত্যা করেছেন।

যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী খুন হয়েছেন। এছাড়া বখাটেদের প্রতিবাদ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন ১৬৮ জন এবং ৪ জন মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। ২০১৬ সালে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন ২৪৪ জন নারী। এ বছর ধর্ষণের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বেড়েছে নিষ্ঠুরতা ও ভয়াবহতা। ২০১৬ সালে ৫৫৯ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। আর বিদায়ী বছরে এই ঘটনার শিকার হয়েছেন ৮১৮ নারী ও শিশু। যার মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৪৭ নারী আর আত্মহত্যা করেছেন ১১ জন। ২০১৭ সালে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩০৩ নারী। এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ১৪৫ জনকে আর আত্মহত্যা করেছেন ১০ জন। এসব ঘটনায় ১৮৮টি মামলা হয়েছে। এছাড়া এ বছর পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৪১ নারী। এদের মধ্যে স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের হাতে ২৭০ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। নিজ পরিবারের সদস্যদের হাতে খুন হয়েছেন ৩৪ নারী এবং নির্যাতনের ফলে আত্মহত্যা করেছেন ৫৭ জন নারী। ৪৩ জন নারী গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে বিভিন্ন কারণে গৃহকর্তার বাড়িতে মারা গেছেন ২৬ জন। এছাড়া বছরটিতে এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়েছেন ৩২ নারী। যার মধ্যে মারা গেছেন ১ জন। আসক তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের হিসাব মতে, ২০১৭ সালে ১৬৭২ শিশু বিভিন্নভাবে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ৩৩৯ জন, আত্মহত্যা করে ১১৭ জন এবং রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে ৩৭ শিশুর। এছাড়া শিশুর প্রতি যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, উত্ত্যক্ত করাসহ ৫৬৫টি ঘটনা।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের হিসাব অনুযায়ী গতবছর থেকে এই বছর নারী নির্যাতনের হার বেড়েছে ৫৮ শতাংশ। চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত নারী নির্যাতনের সংখ্যা ৯ হাজার ১৯৬ টি। এর মধ্যে ৬৮ ভাগ ঘটনাই নথিভুক্তই হয়নি। সব ধরনের নির্যাতনকে ছাপিয়ে গেছে ধর্ষণ ও ধর্ষণ পরবর্তী নিষ্ঠুরতার ঘটনাগুলো। চলতি বছরে সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ধর্ষণের ঘটনা ১ হাজার ৭৩৭ টি। শুধু তাই নয় শিশু ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পরে হত্যার ঘটনা এ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে ভয়ঙ্করভাবে। বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩৯৯ জন শিশুকে ধর্ষণ করা হয়, যাদের মধ্যে ৫৮ শিশু হয়েছে গণধর্ষণের শিকার এবং এদের মধ্যে ৩৭ জন প্রতিবন্ধী শিশু।

দেশজুড়ে ধর্ষণের যে মচ্ছব চলছে তা থামানোর কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে ধর্ষকদের বুকের পাঠা দিন দিন প্রশস্ত হচ্ছে। এসব পাষণ্ডদের হিংস্র থাবা থেকে দুগ্ধের শিশু শুরু করে ষাট বছরের বৃদ্ধা কেউ রেহাই পাচ্ছে না। ইজ্জত-আব্রু নিয়ে বেঁচে থাকা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। মায়ের সামনে মেয়ে, মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাসা,বাড়ি, কর্মক্ষেত্র, গণপরিবহন কোথাও নারীরা নিরাপদ নয়। নগর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত কোথাও না কোথাও প্রায় প্রতিদিনই ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। দিন যতই যাচ্ছে ধর্ষণ ও এর ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। এখন শুধু ধর্ষণই করছেনা, ধর্ষণের পর ধর্ষিতাকে হত্যার ঘটনা বেড়ে গেছে।

দিনরাত ধারাবাহিকভাবে একই স্টাইলে এ জাতীয় যৌন সন্ত্রাসের ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্ক নেমে এসেছে কর্মজীবী নারী-শিশু ও ছাত্রী-শিক্ষিকা ও গৃহবধূদের মাঝে। শুধু যে রাতের আঁধারে নির্জন রাস্তায় নারীর সম্ভ্রমই লুট করা হচ্ছে- তা নয়। কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্তচিন্তার নিরাপদ পরিবেশেও উচ্চ শিক্ষার্থী নারী নিরাপদবোধ করতে পারছেন না। আকস্মিক এ ধরনের যৌন সন্ত্রাসের দৌরাত্ম্যে উদ্বিগ্ন দেশবাসী।

আঁতকে উঠার মতো তথ্য দিয়েছে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন। সংস্থাটির এক রিপোর্ট বলা হয়েছে বাংলাদেশে প্রতিঘণ্টায় একজন করে নারী নির্যাতনের শিকার হয়।

গত মে মাসে মাগুরায় ঘটেছে এক নির্মম ধর্ষণের ঘটনা। তিন বছরের প্রতিবন্ধী শিশু পুজা। এখনও মায়ের দুধ খাওয়া ছাড়েনি। এমাছুম বাচ্চাটিও ধর্ষক নামের পশুদের হাত থেকে রেহায় পায়নি। ব্লেড দিয়ে কেটে গোপানাঙ্গ বড় করে তিন বছরের এ প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ করা হয়।

মাগুরা শহরের ঋষিপাড়ায় মানসিক প্রতিবন্ধী ওই কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন মেয়েটির গোপনাঙ্গ ধারালো ব্লেড দিয়ে কেটে নির্যাতন চালানো হয়েছে। সকালে মেয়েটিকে বাড়িতে রেখে মেয়েটির মা-বাবা মাগুরার মোহম্মদপুর উপজেলার মলগাতি এলাকায় এক নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে যায়। দুপুর তিনটার দিকে একাকী বাড়িতে মেয়েটিকে চিৎকার করতে দেখে প্রতিবেশীরা বাড়ির দেওয়াল ডিঙ্গিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে।

গতসপ্তাহে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে প্রতিবেশী এক বখাটে তরুণ এক নারী পোশাককর্মীকে ধর্ষণের পর যৌনাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কেটে রক্তাক্ত জখম করেছে। মেয়েটিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার রাত রাত ১০টার দিকে মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা জানান,ওই বখাটে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। প্রত্যাখ্যান করায় ক্ষুব্ধ হয়ে সে মেয়েটির ওপর এই ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে।

আগষ্টের প্রথম সপ্তাহে ছাত্রলীগের ৪ নেতা মিলে এক তরুণীকে রাতভর ধর্ষণের পর হত্যা করে। ওই তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার করে লাশ গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত চার ছাত্রলীগ নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।

এধর্ষণ ও হত্যায় জড়িতরা হলেন- পাথরঘাটা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহি আনান দানিয়াল (২২), সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ছোট্ট (২১), সাংগঠনিক সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম রায়হান (১৯) ও উপজেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মো. মাহমুদ (১৮)।

গত ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রূপা খাতুনকে চলন্ত বাসে পরিবহনশ্রমিকেরা গধর্ষণ করেন। পরে তাঁকে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে রেখে যায়।

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাদি ইউনিয়নে ধর্ষণের শিকার হয়ে লজ্জায় নিজের শরীরে কোরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছিল স্কুলছাত্রী সোনিয়া (১৩)। পাঁচদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১ জানুয়ারি রোববার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় সোনিয়ার।

সোনিয়া চরাদি ইউনিয়নের হলতা গ্রামের দুলাল খানের মেয়ে ও চরাদি বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

সোনিয়ার বাবা দুলাল খান জানান, গত বুধবার সকালে প্রতিবেশী পান্নু খানের বখাটে ছেলে যুবলীগ কর্মী আসাদ খান ডিম ভেজে দেয়ার কথা বলে শিশুটিকে তার নিজের ঘরে নিয়ে যায়। এসময় আসাদের বাবা-মা কেউ বাসায় ছিল না। এ সুযোগে আসাদ সোনিয়াকে ধর্ষণ করে।

পরে নিজ ঘরে গিয়ে ওই দিন বেলা ১২টায় সে লজ্জায় নিজের শরীরে কোরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তার চিৎকারে বাড়ির লোকজন উদ্ধার করে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেলের শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার দুপুরে তাকে ঢাকায় পাঠান চিকিৎসকরা। রোববার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশু সোনিয়ার মৃত্যু হয়।
শরীয়তপুরে ছাত্রলীগের এক প্রতাপশালী নেতার হাতে অসংখ্য মা-বোন ধর্ষিত হন। শুধু ধর্ষণই নয়, ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তা ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো। কেউ টাকা না দিলে ফেইজবুকে ধর্ষণের ভিডিও প্রকাশ করতো।ব্যাপক অভিযোগের পর সম্প্রতি ওই ধর্ষককে পুলিশ গ্রেফতার করে।

ছয় নারীকে ধর্ষণ ও অশ্লীল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে শরীয়তপুরের ওই ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হাওলাদার।

ভুক্তভোগী এক গৃহবধূর দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর সম্প্রতি তাকে শরীয়তপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।

অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মুজাহিদুল ইসলাম তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

এর আগে ১ মাস ১৫ দিন পলাতক থাকার পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪দিকে জেলার গোসাইরহাট উপজেলার সাইক্কা ব্রিজের কাছ থেকে তাকে গ্রেফতার করেন শরীয়তপুরের গোসাইরহাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) থান্দার খায়রুল হাসানসহ পুলিশের একটি দল।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন হাওলাদার ছয় নারীকে ধর্ষণ ও অশ্লীল ভিডিও করেন। ভেদরগঞ্জ ইউনিয়নের নারায়ণপুর ইউনিয়নের ইকরকান্দি গ্রামের আমিনুল হক মাদবরের ছেলে রাজিব মাদবরের ফেসবুক থেকে এসব ভিডিও ও ছবি পোস্ট করে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হাওলাদার গোপনে ছয় নারীর আপত্তিকর ছবি ভিডিও করে এবং ওই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের ধর্ষণ করে। আবার এসব ধর্ষণের চিত্র গোপনে মোবাইলে ধারণ করে।

লোকলজ্জার ভয়ে ধর্ষণের শিকার নারীরা এসব কথা কাউকে না বললেও সম্প্রতি ওসব ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওগুলোতে গৃহবধূ ও কলেজছাত্রীসহ ৬ নারীর সঙ্গে আরিফকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যায়।

এ ঘটনায় ১০ নভেম্বর সংগঠন থেকে আরিফকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগ।

বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) কলেজের ছাত্রী সাদিয়া আক্তার (২১)। প্রেমিক সিরাজুল ইসলাম তার বন্ধুদের নিয়ে গণধর্ষণের পর হত্যা করে সাদিয়াকে। হত্যার পর মরদেহ খালে ফেলে দেয় প্রেমিক ও তার সহযোগীরা।

সাদিয়া বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি কলেজের প্যাথলজি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী এবং বরিশাল নগরীর ডেফুলিয়া খান বাড়ির আলমগীর হোসেন খানের মেয়ে। ঘাতক সিরাজুল মঠবাড়িয়ার খেজুরবাড়িয়া গ্রামের ইব্রাহীম হাওলাদারের ছেলে। গত ২০ নভেম্বর সাদিয়া নগরীর বাসা থেকে কলেজের উদ্দেশে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় সাদিয়ার বাবা ২২ নভেম্বর কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

জিডির সূত্র ধরে এবং ওই ছাত্রীর মোবাইল নাম্বার ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতে গত শনিবার মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ সিরাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে সিরাজ স্বীকার করেছেন ঘটনার ১৫ দিন আগে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের কথা বলে গত ২০ নভেম্বর ওই ছাত্রীকে বরিশাল থেকে মঠবাড়িয়ায় এনে সহযোগীদের নিয়ে একাধিকার ধর্ষণ করা হয়।পরে ধর্ষণের বিষয়টি ওই ছাত্রী ফাঁস করার হুমকি দেয়ায় তাকে হত্যা করে মরদেহ খালে ফেলে দেয়া হয়।

কিছুদিন আগে রংপুর মহানগরীর মন্থনায় এক গৃহবধূকে ধর্ষণের পর তার মাথার চুল কেটে দেয় ধর্ষকের লোকেরা। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ওই গৃহবধূ বর্তমানে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

রাজশাহীতে স্বামীকে বেঁধে রেখে তার স্ত্রীকে সন্ত্রাসীরা ধর্ষণ করে। একই দিনে নোয়াখালির সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কর্তৃক এক তরুণী ধর্ষিত হয়। ধর্ষিতা প্রতারণার বিচার চাইতে গেলে উল্টো আটকে রেখে চেয়ারম্যান তাকে ধর্ষণ করে।

বগুড়ায় ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করায় ধর্ষিতা কিশোরী ও তার মাকে লাঠিপেটা করে মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে সরকারি দলের ক্যাডাররা। বগুড়া বাদুড়তলা এলাকায় বসবাসকারী চা বিক্রেতার কিশোরী কন্যা শহরের জুবলী ইনস্টিটিউিশন থেকে এবার এসএসসি পাস করে।

ওই কিশোরী কোথাও ভর্তি হতে না পারায় প্রতিবেশী আলী আজম দিপু তাকে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের মাধ্যমে সরকারি কলেজে ভর্তি করে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। দিপু ওই কিশোরীকে মোবাইল ফোনে তুফান সরকারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। এরপর তুফান সরকার দিপুর মাধ্যমে ওই কিশোরীকে চার হাজার টাকা দিয়ে একটি কলেজে ভর্তির জন্য পাঠায়। কিন্তু ওই কিশোরী ভর্তি হতে না পারার বিষয়টি দিপুর মাধ্যমে তুফান সরকারকে জানায়। গত ১৭ জুলাই তুফান সরকারের স্ত্রী-সন্তান বাসায় না থাকার সুযোগে ওই কিশোরীকে বাসায় ডেকে আনে। এরপর দিনভর তাকে আটকে রেখে তুফান সরকার কয়েক দফা ধর্ষণ করে। এতে ওই কিশোরী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

পরে তাকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ধর্ষণের ঘটনাটি ওই কিশোরীর মা জানতে পারে এবং প্রতিবাদ জানান। ঘটনাটি জানতে পেরে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা খাতুন তার বড় বোন পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি এবং তার মা রুমী বেগম ওই কিশোরীর বাড়িতে যায়।

তারা ধর্ষণের ঘটনার বিচার করে দেয়ার কথা বলে ধর্ষিতা ও তার মাকে পৌর কাউন্সিলর রুমকির অফিস চকসুত্রাপুরে নিয়ে আসে। সেখানে বিচারের নামে ধর্ষিতাকে পতিতা আখ্যায়িত করে এবং মেয়েকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করানোর উল্টো অভিযোগ আনা হয়। তুফান সরকারের কয়েকজন সহযোগী লাঠিপেটা করে মা ও মেয়েকে। নাপিত ডেকে এনে মা-মেয়েকে প্রথমে মাথার চুল কেটে দেয়। এক পর্যায়ে তুফান সরকারের স্ত্রীর নির্দেশে তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, ২০ মিনিটের মধ্যে তাদের বগুড়া শহর ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

গাজীপুরের শ্রীপুরে মেয়ের নির্যাতনের বিচার না পেয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে বাবা-মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। নিহতরা হলো গোসিংগা ইউনিয়নের কর্নপুর গ্রামের হযরত আলী (৪৫) ও তার কন্যা আয়েশা আক্তার (১০)।

নিহত হযরত আলীর স্ত্রী হালিমা বেগম জানান, গত মাস খানেক আগে একই এলাকার ফজলুল হকের পুত্র ফারুক শিশু আয়েশাকে তার বাড়ির পাশ থেকে সাইকেলে করে গভীর বনে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এসময় ফারুক ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে তাকে মারপিট করে আহত করে। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করলে শ্রীপুর থানার এ.এস.আই বাবুল মিয়া ঘটনাটি তদন্ত করেন। পরে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় মেম্বার আবুল হোসেন ও প্রভাবশালীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। এ ঘটনায় থানা পুলিশ কর্তৃক কোনো বিচার না পাওয়ায় তার স্বামী মানসিকভাবে চাপে ভুগছিল।

কিছু দিন আগের ঘটনা। বুড়িগঙ্গার ওপারে আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে যাচ্ছিল দুই যুবতী । মেয়ে দু'টি ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্রী আর ভাতিজা নবম শ্রেণীতে পড়ে। সেই নৌকায় দুজন যুবক উঠল। অন্য যাত্রীদের সামনেই যুবকগুলো যুবতী দুটিকে অত্যন্ত অশালীন আচরণে উত্ত্যক্ত করতে লাগল। তা দেখে ভাতিজা প্রতিবাদ করল।

যুবক দুজন ভাতিজাকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দিল। সে সাঁতার জানত না। সে পানিতে ডুবে গেল, তাকে উদ্ধার করা গেল না। মেয়েদুটি কাঁদতে লাগল। নৌকার যাত্রীরা ছেলে দুটিকে ধরে থানায় নিয়ে গেল। ছেলে দুটি ছাত্রলীগের নেতা জানতে পেরে ওসি সাহেব কেস তো নিলেনই না, তাদের উত্তম নাস্তা করিয়ে কেউ যাতে তাদের ওপর হামলা করতে না আসে তার জন্য দুজন সশস্ত্র সিপাইকে সঙ্গে দিয়ে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেন। ভাতিজার লাশটি চারদিন পর বুড়িগঙ্গায় ভাসতে দেখা যায়।

চট্টগ্রামে বাপ-ভাইকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে এক মেয়েকে যুবলীগের ৫ জনে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছিল বাপ ভাইয়ের সামনেই।

বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যাল্যে নির্লজ্জ ও বেহায়াপনার এমন এক ঘটনা ঘটেছিল যা পৃথিবীর আর কোন দেশে কখনো ঘটেছে বলে জানা যায়নি। তাহলো জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০০ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন করেছিল ছাত্রলীগের হীরার টুকরো ছেলেরা। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী।এত বড় জঘন্যাচারের জন্য ওই নরপশুদের সামান্য তিরস্কার পর্যন্ত করেনি।উল্টো ধর্ষক মানিককে উচ্চপদে চাকরি দিয়েছিল। কিন্তু কেবল ১০০ জন নয়, ঐ সময়ের সকল ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকগণ পড়েছিলেন চরম সংকটে। তারা লজ্জায় না পারছিলেন আত্মীয়স্বজন-বন্ধু-বান্ধব ও দেশবাসীকে মুখ দেখাতে, না পারছিলেন মেয়েদের বিয়ে দিতে। সরকার তাদের সান্ত্বনা দান ও সাহায্য কল্পে কোন উদ্যোগই নেয়নি।

ডিজিটাল সরকার গদীতে বসার ক'মাস পরেই পিরোজপুরে ছাত্রলীগ নেতা টাইগার মামুন দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। বন্ধুর সাহায্যে ধর্ষণরত নোংরা দৃশ্যের ভিডিও করে বাজারে ছাড়ে।এমন জঘন্য কাজ করার পরেও সরকারের তরফ থেকে তেমন কিছুই করা হয়নি ঐ নরাধমটিকে।

পত্রিকায় দেখলাম ইডেন কলেজ হোস্টেলে থাকা মেয়েদের দিয়ে জোর করে দেহব্যবসা করাচ্ছে, সরকারি দলের ছাত্রী নেত্রী জেসমিন শামীমা নিঝুম। বিশেষ করে তারা ১ম এবং ২য় বর্ষের ছাত্রীদের দিয়ে এ ব্যবসা চালাচ্ছে এবং প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। এদের খরিদ্দার হলো ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতারা ও এমপি, মন্ত্রী মহোদয়গণ। জেসমিন ছাত্রলীগের মেসে, যুবলীগের বাসায়, মন্ত্রী-এমপিদের বাড়ীতে মেয়ে সাপ্লাই দেয়। কয়েক দিন পূর্বে এক মেয়েকে এক মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের বাসায় যাবার জন্যে নির্দেশ দেয়। মেয়েটি রাজী না হলে এই বেয়াদবীর জন্য জেসমিন পতিতা রানীর মত তার দলবল নিয়ে মেয়েটিকে অনেক মারধর করে। আরেক মেয়েকে দেহ ব্যবসায় নামাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে তাকে শিবিরের ছাত্রী বলে হল থেকে বের করে দেয়।

মেয়েটির বক্তব্য হলো, আমি এবং আমার চৌদ্দগোষ্ঠী আওয়ামী লীগার। অথচ কুকাজে রাজী না হওয়ায় আমাকে শিবির বলে বের করে দিয়েছে হোস্টেল থেকে। এখন মেয়েদের মধ্যে দু'টি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। নেত্রীর সাথে আছে এক গ্রুপ মেয়ে, যারা মেয়েদের দ্বারা জোরপূর্বক দেহব্যবসা করিয়ে অর্থ উপার্জন করছে। আরেক গ্রুপ হলো যারা এই নোংরা কাজ মোটেই পছন্দ করে না। তারা নিজেদের সম্ভ্রম ও পবিত্রতা রক্ষার নিমিত্তে সংঘবদ্ধ হয়েছে। ছাত্রলীগের আয়ের বহুপথ রয়েছে। তারা ভর্তি বাণিজ্য, সীট বানিজ্য, চাঁদাবাজি, জবরদখল ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে।

মেয়েদেরও টাকার দরকার। তাদেরও ভর্তি বাণিজ্য রয়েছে। তা দিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। কিন্তু এতে বিরাট ধনী হবার চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। হাজার হলেও তারা ভদ্রলোকের মেয়ে। তারা তো আর ছাত্রলীগের মত চাঁদাবাজি, ছিনতাই করতে রাস্তায় নামতে পারে না, তাই একটা ভদ্র ব্যবসা বেছে নিয়েছে। কিন্তু একার আয়ে আর ক'টাকা আসে।

হলের সকল মেয়েকে দিয়ে যদি ঐ ব্যবসাটা করানো যায় তাহলে অতি দ্রুত অনেক টাকার মালিক হওয়া যাবে। তাই হোস্টেলের অধিকাংশ মেয়েকে জোর করে দেহব্যবসায় নামিয়ে প্রচুর টাকা আয় করে আসছিল। কিন্তু কয়েকটি বেরসিক মেয়ে এই বড় লাভের ব্যবসাটায় বাদ সেঁধে বসেছে।

কিছুদিন আগে ভিকারুন্নেসা নুন স্কুলে শিক্ষক পরিমল কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় দেশে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ধর্ষণতো বন্ধ হচ্ছেনা।

বাংলাদেশে ধর্ষণ নিয়ে চমকে উঠার মতো তথ্য দিয়েছে বিবিসি। এ সংবাদমাধ্যমটি জানায় ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ১ হাজার ৫০ জন শিশু ও নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ডাটা তৈরি করেছে মহিলা পরিষদ।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারীদের উপর নির্যাতনের 'নির্মম ও নিষ্ঠুর' ধরণকে 'উদ্বেগজনক' বলে বর্ণনা করেছে।

বাংলাদেশের ১৪ টি দৈনিক পত্রিকার খবর বিশ্লেষণ করে মহিলা পরিষদ বলেছে ২০১৬ সালে ১০৫০ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তারা বলছে, আগের বছরের তুলনায় এই সংখ্যা কিছুটা কম হলেও ধর্ষণ, নির্যাতনের ধরণ ছিলো নির্মম ও নিষ্ঠুর।

শুধু নারী নির্যাতনই নয় ইদানিং শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতন বেড়েছে আশংকাজনক হারে। সম্প্রতি দৈনিক ইত্তেফাকের এক রিপোর্টে শিশু ধর্ষণ ও খুনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।প্রতিবেদনটিতে বলা হয়,২০১৪ সালে ১৯৯ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। পরবর্তী বছর ২০১৫ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২১ এবং ২০১৬ সালে ৬৮৬ জন। গত ৫ বছরে পাশবিক নির্যাতন ও নির্মম হত্যার শিকার হয়েছে ১৩ হাজার ১২ শিশু। এরমধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ১ হাজার ৫২৬ শিশু। আত্মহত্যা করেছে ৭২৭ এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১ হাজার ৪৭৫ শিশু। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম ১৪টি জাতীয় দৈনিক থেকে প্রকাশিত ঘটনার সমন্বয়ে এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে। ২০১২ থেকে ১৬ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে এসব শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটে।

চলতি বছর জানুয়ারি থেকে অগাস্ট এই সময়কালে ৩৯৯ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যাদের মধ্যে ৫৮ শিশুকে গণধর্ষণ করা হয়েছে এবং ৩৭ প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

দেশে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হলেও ধাপে ধাপে প্রতিকূলতার জালে জড়িয়ে পড়ছে বিচার প্রাপ্তির আশা। ভয়-ভীতি অথবা অর্থের বিনিময়ে বাদী পক্ষের সঙ্গে মীমাংসা করে মামলা দুর্বল করে ফেলা হয়। সাক্ষী উধাও হওয়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক। এসব কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ধর্ষণের মামলা। বাংলাদেশে এক হাজারে মাত্র চারজন আসামি ধর্ষণের ঘটনায় সাজা পান। পুলিশ সদর দফতরের নথি অনুয়ায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে মোট ৪৩ হাজার ৭০৬টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার মামলায় এক লাখ আসামি খালাস পেয়েছেন। আর ধর্ষণ মামলায় খালাস পেয়েছেন ৮৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ আসামি। নারী নির্যাতনের মামলায় আসামি খালাসের পরিমাণ ৯৫ শতাংশ। ২০০১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পুলিশের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঁচ হাজার তিনটি ধর্ষণের মামলা হয়। এর মধ্যে রায় ঘোষণার হার ৩ দশমিক ৬৬ ভাগ এবং সাজার হার শূন্য দশমিক ৪৫ ভাগ।

হত্যা ধর্ষণসহ সকল ধরনের শিশু নির্যাতনের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া এবং রায় দ্রুতগতিতে কার্যকর করার সুপারিশ করেছে শিশু অধিকার ফোরাম। বলা হয়েছে, যে সকল নির্যাতিত দরিদ্র শিশুর পিতা-মাতার মামলা করার বা চালানোর সামর্থ্য নেই তাদের সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধান করার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শারীরিক শাস্তি কেন বন্ধ হচ্ছে না তা ক্ষতিয়ে দেখাতে হবে। জাতীয় বাজেটে শিশুদের জন্য যে বরাদ্দ রাখা আছে তা সঠিকভাবে ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া শিশু আইন ২০১৩ এর প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিতসহ আইনের বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনিস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, শিশু অধিকার রক্ষায় যে আইনগুলো আছে তা প্রয়োগ করা হয় না। এ বিষয়ে ব্যাপকভাবে সচেতনতা দরকার। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকা দরকার। তাছাড়া সমাজের মানুষ শিশু অধিকার সম্পর্কে সচেতন না। যেসব ঘটনা ঘটছে তার তাত্ক্ষণিক বিচারও হয় না। এসব ঘটনা প্রতিরোধে তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ পারিবারিকভাবে যদি শিশুর অধিকার ও শিশুর সুরক্ষায় আইনগুলো শেখান হতো; তাহলে শিশুর ওপর এ ধরনের নিষ্ঠুর নির্যাতন হতো না এবং তা কমে আসত।

শিশুদের ওপর নির্যাতনের বিভিন্ন দিক নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন এসমাজবিজ্ঞানী। তাই তার অভিজ্ঞতার ভান্ডারও অনেক সমমৃদ্ধ। তিনি বলেন,মুলত দরিদ্র শ্রেণীর শিশুরা বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। তাদের শ্রমজীবী বাবা-মায়েদের অনুপস্থিতিতে এইসব শিশুদের দেখার কেউ থাকে না। আরেকটি গ্রুপ যারা নিজেরাই কর্মজীবী তারা, এবং গৃহকর্মীরা বসদের ধারা ধর্ষণের ঝুঁকিতে থাকছে বেশি।

তিনি বলেন, অনেকে অজ্ঞতার কারণে আর বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে আদালত বা পুলিশের দোড়গোড়ায়া পৌঁছাচ্ছেন না। ফলে এসব অপরাধ ঘটছেই। " অনেকে শিশু বা অভিভাবকই জানে না কোথায় অভিযোগ জানাতে হয়। আর অনেকে দেখছেন অনেক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে কিন্তু বিচার তো হচ্ছে না। বাইরে মিটমাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। অনেক দেশে কিন্তু দ্রুত বিচার আইনে সাজা হয় এবং মানুষ তা দেখে সচেতন হয়"।

অধ্যাপক নাসরীন বলছেন, এসব ঘটনা শিশু মনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে।ভবিষ্যৎ জীবনে তারও এ ধরনের অপরাধ কর্মে জড়ানোর আশংকা থাকে। এইসব শিশুরা স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারেন না । সেও অন্যের প্রতি এমন আচরণ করে।

মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ তুলছেন, জামিন অযোগ্য অপরাধ হওয়ার পরও অনেক ক্ষেত্রে জামিন পেয়ে যাচ্ছে অভিযুক্তরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে বলেন, অপরাধ করে সহজে জামিন পাওয়া গেলে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়।অপরাধ করে সহজে জামিন পাওয়া গেলে হয়তো অপরাধের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তবে অপরাধী জামিন পাবে না -আইনজীবী হিসেবে তো সেটা বলা যায় না। সুতরাং শিশু ধর্ষণের ব্যাপারে যদি আলাদা সেল করা হয় , মামলার গতি তদারকি করা হয়, তাহলে এ ধরনের অপরাধ অনেকটা কমতে পারে।অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মনে করেন, এ ধরনের মামলার বিচারের দীর্ঘসুত্রতা দূর করতে উদ্যোগ নেয়া দরকার।

ধর্ষণ মামলায় সাক্ষ্য আইনের সাহায্য নিতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণের সন্নিবেশ ঘটাতে গিয়ে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, শিশু ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে আইন সংশোধন করা যেতে পারে, যেখানে শিশু ভিকটিমকে আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে হবে না।

আইন সংশোধন করা যেতে পারে এভাবে যে, এক্সপার্টদের কাছে ভিকটিমকে নেয়া হবে। এরপর তারা রিপোর্ট দেবে। এরপর আর কোনও প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে না। ওই চিকিৎসকদের রিপোর্টের ভিত্তিতে চার্জশিট দেবে পুলিশ। চিকিৎসকদের সাথে মানবাধিকার কর্মীও থাকতে পারেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা আছে, ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।কিন্তু এমন অনেক নজির আছে যে বছরের পর বছর ধরে মামলা চলছে। বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন শিশু অধিকার ।

এছাড়া মামলা ঝুলিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ডিফেন্স ল ইয়ারের মানসিকতারও পরিবর্তন আনা খুবই দরকার।দেখা যাচ্ছে নির্যাতনের শিকার হয়েও সামাজিক হেনস্থার ভয়ে কোণঠাসা থাকছে নির্যাতিত শিশুটির পরিবারটিই ।

দেশব্যাপী যে হারে ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না।উদ্বেগের কারণটা এখানেই এর প্রতিকারের কোন উদ্যোগ নেই? স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠে, এ কোন বর্বরতার মধ্যে আ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন