এরকম ‘ক্রসফায়ার’ আরও চাই!

  01-04-2018 05:44PM

পিএনএস ডেস্ক:দেশে ক্রসফায়ার নামের একটা ‘বস্তুর’ চল হয়েছিল একসময়। পত্রিকায় প্রতিদিন পড়তাম, অমুক জায়গায় র‍্যাবের সাথে ক্রসফায়ারে তমুক সন্ত্রাসী নিহত। সেইসব সন্ত্রাসীদের নামগুলোও সব বাহারী- মুরগী আসলাম, চায়নীজ কামাল, বাইট্টা জামাল বা এরকমের অদ্ভুত কিছু। সব ক্রসফায়ারের একই রকমের একটা ধরাবাঁধা গল্প থাকতো। জনৈক সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের পর তার দেয়া তথ্য অনুসারে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করতে গিয়েছিল আইনশৃঙখলা বাহিনী, তাদের জন্যে সেখানে ওৎ পেতে থাকতো গ্রেফতার হওয়া সন্ত্রাসীর সাঙ্গোপাঙ্গরা। দুই পক্ষের গুলি বিনিময় হতো, কেউ আহত-নিহত হোক বা না হোক, গ্রেফতার হওয়া সেই সন্ত্রাসী অবশ্যই নিহত হতো। ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ শব্দগুলো তখন আমাদের অতিপরিচিত। এটা কতটা আইনসিদ্ধ, বা মানবাধিকার এতে লুণ্ঠিত হচ্ছে কিনা সেসব আমরা বুঝতাম না, শুধু বুঝতাম যে, যারা গুলি খেয়ে মরছে তারা সন্ত্রাসী, তারা খারাপ লোক। সেই ক্রসফায়ার নিয়ে সময়ের প্রেক্ষিতে নানা প্রশ্ন উঠেছে, সেটিই স্বাভাবিক। আইনের শাসনে কোনোভাবেই ক্রসফায়ারকে সমর্থন করার জো নেই। কিন্তু যখন আইনের শাসন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে… আচ্ছা, সেই কথায় পরে আসছি।

গতকাল কক্সবাজারের চকরিয়ায় রহিম উদ্দিন নামের এক ধর্ষক র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে বলে র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এই অমানুষটার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে চার বছর বয়েসী একটা শিশুকে ধর্ষণ করেছে। চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজরা ইউনিয়নের অধিবাসী শিশুটির দাদা গত ২৮শে মার্চ রহিম উদ্দিনের নামে এই মামলাটি দায়ের করেন। বিশ বছরের তরুণ রহিম সেই শিশুটিকে নির্জন কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগপত্রে জানানো হয়েছে।

উদ্ধারের পরে চার বছরের এই শিশুটিকে প্রথমে চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্ত তার শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটায় সেখান থেকে চিকিৎসকেরা তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। এখনও সেখানেই ভর্তি আছে শিশুটি।

ধর্ষণ ব্যপারটা এখন ডালভাতের চেয়েও সস্তা হয়ে গেছে। পত্রিকার পাতায় কিংবা টেলিভিশনের নিউজ স্ক্রলে প্রতিদিন দু-চারটে ধর্ষণ আর হত্যার খবর থাকবে না, এরকম অবস্থা এখন আর নেই। আমি ভেবে পাই না, চার বছরের ছোট্ট একটা শিশু, যে এখনও ঠিকঠাক কথাই বলতে শেখেনি হয়তো, তার ছোট্ট শরীরটা একজন ধর্ষককে কিভাবে প্রলুব্ধ করতে পারে? দেড় বছরের একটা মেয়ে শিশুর শরীরে এমন কি আছে, যার জন্যে তাকে ধর্ষন করে মেরে ফেলাটা জরুরী হয়ে পড়ে? কতটা অসুস্থ মানসিকতার অধিকারী হলে কেউ এমনটা করতে পারে! একদল লোক ধর্ষণের পেছনে মেয়েদের পোষাকের দোষ দেয়, তাহলে দিন দুয়েক আগে আপাদমস্তক বোরখায় ঢাকা মেয়েটাকে কেন গণধর্ষণের পরে রেললাইনে ফেলে খুন করা হলো? ছিন্নভিন্ন শরীর, আলাদা হয়ে যাওয়া একটা পা আর একপাশে পড়ে থাকা পরীক্ষার প্রবেশপত্র সাক্ষী দিচ্ছিল কিছু অমানুষের অবিশ্বাস্য নির্মমতার। এদের শাস্তি দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, আদালতের। সেই দায়িত্ব কতটুকু পালন করতে পারছে তারা, এটা একটা বড় প্রশ্ন।

হাজার হাজার ধর্ষণের মামলা জমে আছে আদালতে, রায় হচ্ছে না; কোন কোনটায় বছরের পর বছর ধরে মামলার কোন অগ্রগতি নেই। প্রচলিত আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, আরেকটু সহজ করে বললে চৌদ্দ বছরের জেল। একটা মানুষের জীবনটা তছনছ করে দেয়া, একটা পরিবারের স্বপ্নগুলোকে নির্মমভাবে ভেঙে দেয়ার শাস্তি শুধু কয়েক বছরের জেল? একজন সভ্য নাগরিক হিসেবে এটা মেনে নিতে ভীষণ কষ্ট হয়। হাজারটা মামলার মধ্যে এক শতাংশেরও বিচার হয় না, ধর্ষিতার আর্তচিৎকার চাপা পড়ে যায় ধুলো জমা ফাইলের নীচে। কিন্ত এমন তো হবার কথা ছিল না!

একজন সন্ত্রাসী বা অপরাধীর বেঁচে থাকার অধিকার আছে কি নেই, তাকে ক্রসফায়ারে দেয়া উচিত কি অনুচিত, সেটা আইন-আদালতের বিষয়। তবে যেসব মানুষের জন্যে সাধারণ জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হয়, তাদের শাস্তি প্রাপ্য অবশ্যই। প্রচলিত আইন-কানুনের ফাঁক গলে এরা যখন বুক ফুলিয়ে দর্পভরে হেঁটে বেড়ায়, তখন নিজেকে মানুষ ভাবতে ঘেন্না লাগে। এই যে কক্সবাজারে রহিম উদ্দিন নামের ধর্ষকটা বন্দুকযুদ্ধে মারা গেল, শুনে একটুও খারাপ লাগেনি। প্রতিটা ধর্ষকামী একেকটা নর্দমার কীট, এই দেশের আলো বাতাসে এদের হেসেখেলে বেড়ানোর কোন অধিকার নেই। একটা মানুষের সাজানো জীবন যে নিজের হাতে যে ধ্বংস করতে পারে, বিকৃত মানসিকতা চরিতার্থ করতে যে একটা নিস্পাপ শিশুকে বেছে নিতে পারে, তার জন্যে বন্দুকের দুয়েকটা গুলি আসলে খুব কম শাস্তিই হয়ে যায়!

খবরটা শোনার পরে ভীষণ শান্তি লেগেছে। আমি মনেপ্রাণে চাই, এরকম বন্দুকযুদ্ধ বাংলাদেশে আরও হোক, হাজার হাজার রহিম উদ্দিন নিহত হোক এরকম বন্দুকযুদ্ধে। পত্রিকায় আসা একঘেয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধের গল্প’গুলো শুনতে আমার একটুও বিরক্তি লাগবে বা। বরং গর্ব হবে এটা ভেবে যে, ধর্ষকের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পেরেছি আমরা। ধর্ষণের এই মহামারীকে থামাতে হলে এরকম কিছুর কোন বিকল্পই নেই। যেমন কুকুর, মুগুরটাও তেমনই হওয়া উচিত। ধর্ষণ করে পার পেয়ে যাওয়া বরাহশাবকের দলকে এখন থেকে ওদের বিকৃত মাবসিকতার জবাবটা বুলেট দিয়েই দেয়া হোক।

আপনি আমাকে উগ্রবাদী ভাবতে পারেন, মানবতাবিরোধী ভাবতে পারেন, তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী একটা অপরাধকে ঠেকাতে যদি ধর্ষককে হত্যা করাটা অপরাধ হয়ে থাকে, তবে সেটাই করা হোক। হাজারটা প্রতিবাদে কোন কাজ হয়নি যখন, সেখানে তপ্ত সীসার দশটা বুলেট হাজারো ধর্ষকামী পুরুষের বিকৃত কামনার আগুনে জল ঢেলে দিতে পারে অনায়াসে। আমি ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই, সেই শাস্তিটা যদি উল্টোপথেও আসে, তাতে আপত্তি নেই আমার। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে সেটাকে তো বাঁকাতেই হয়!

লেখক: মুহাম্মদ সাইদুজ্জামান আহাদ

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন