এখন প্রশ্ন হলো, সাংসদদের শক্তি আসলে কী?

  09-05-2020 11:14AM


পিএনএস ডেস্ক: সাংসদদের এই জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডকে আমি অতি মানবীয় বলবো। কারণ এসব কর্মকাণ্ড তারা করছেন সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে। রাষ্ট্রীয় ভান্ডার থেকে যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ হচ্ছে সেখানে সাংসদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকারের অধীন জনপ্রতিনিধিরা এসব বণ্টনের দায়িত্বে। আর জেলার ত্রাণ বিতরণ কর্মকাণ্ড সামগ্রিকভাবে সমন্বয় ও তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সচিবদের।

কোথাও কোনো পর্যায়ে সাংসদের সরকারি কোন ভূমিকায় রাখা হয়নি। সুকৌশলে সাংসদদের এভাবে আড়ালে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণকে যথার্থ মনে হতো। সরকারিভাবে কোনো দায়িত্ব না পেয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে সাংসদদের যে ভূমিকা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দৃশ্যমান তাকে ছোট করা ঠিক হবে না। দু’চারজন যদি নিশ্চুপ থাকেন বা অতিমাত্রায় সক্রিয় হতে না পারেন সেটি হয়তো তার ব্যক্তিগত অপারগতা। কিন্তু এটি তো সামগ্রিক চিত্র নয় মোটেও। আরো কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক।

করোনা সংকটের শুরু থেকেই নিজ নির্বাচনী এলাকা মাদারীপুরের শিবচরের প্রতিটি প্রান্তে নিজের শতভাগ কমিটমেন্টের নজির রেখেছেন চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন। এলাকার পাঁচশত স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে তার উদ্যোগে। উপজেলার প্রত্যেকটি গ্রামে তালিকা করে চিফ হুইপ ৩০ হাজার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্য সামগ্রী।

এমনকি এলাকার বিত্তবান দলীয় নেতাদেরও উদ্বুদ্ধ করেছেন যারা তাদের ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে আরও ১০ হাজার দরিদ্রকে খাবার পৌঁছে দেন। চিফ হুইপ শুরু থেকে যে কাজটি করেছেন তাহলো ইতালি ও অন্য দেশ ফেরতদের পুরো পরিবারকে হোম কোয়ারিন্টেইন নিশ্চিত করা এবং তাদের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সরবরাহ ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা। যা স্থানীয়দের মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

একইভাবে সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সাংসদ অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ২১ হাজার ৭৩১ জন দরিদ্রের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। এলাকার চিকিৎসকদের পিপিই দিয়েছেন, ২৫৭ সেট হাইজেনিক স্প্রে কিট, তিন হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ১০ হাজার সাবান বিতরণ করেছেন। প্রতিনিয়ত এলাকায় যাচ্ছেন এই সাংসদ। মানুষের খোঁজ নিচ্ছেন। সরকারি ত্রাণ বিতরণে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কঠোর তদারকিতে রেখেছেন।

সাংসদরা সর্বোচ্চ জনপ্রতিনিধি। এজন্যই তারা সবসময় সব মহলের মনোযোগের শীর্ষে থাকেন। সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই জনপ্রতিনিধিরা নেতিবাচক কিছু করলে নিশ্চয়ই আমরা সেসব কাজের সমালোচনা করবো। কিন্তু তারা যদি ভালো কাজ করেন তাহলে প্রশংসা কেনো করবো না! কিছু সমালোচক আর রাজনৈতিক বিশ্লেষক যদি একচোখা নীতি নিয়ে চলেন তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু যেখানে সাংসদরা প্রাসঙ্গিকই নন সেসব বিষয়েও সমালোচনার তীর তাদের দিকেই। এটিই অবাক করার মতো বিষয়।

সরকারি ত্রাণ বণ্টন কর্মকাণ্ড আমাদের আর দশটা মানুষের মতো চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া সাংসদের কিন্তু কিছু করার নেই। কিন্তু এজন্য মোটেও বসে নেই অধিকাংশ সাংসদ। তারা এলাকায় ছুটছেন প্রতিনিয়ত, অনেকে এলাকায় অবস্থান করছেন আর নিরন্তর মানুষের খোঁজ খবর করছেন। বিচ্ছিন্নভাবে দু’চারজন হয়তো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। অথচ সামগ্রিকভাবে টার্গেট এই সাংসদরাই। বিস্ময়কর!

আসলে যত দোষ নন্দ ঘোষ। আমাদের মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যই দায়িত্বে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাচ্ছেন না। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি অনেকের মধ্যে দায়সাড়া গোছের একটি মনোভাবও আছে। নিজের কাজটি তারা গুছিয়ে ঠিকমতো করতে পারছেন না। তাদের এই ব্যর্থতা নিয়ে আমরা কথা বলছি এবং বলতেই থাকবো। কিন্তু মন্ত্রী পদধারী কোন সাংসদ যদি ইতিবাচক কাজ করেন?

আমি মনে করি সেই কাজগুলোও আমাদের প্রশংসা করা উচিত। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী নিজস্ব অর্থায়নে রূপগঞ্জে করোনা টেস্টিং ল্যাব করেছেন। পাশাপাশি কয়েক হাজার দরিদ্র পরিবারকে খাদ্য পৌঁছে দিয়েছেন। মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম পিরোজপুর নিজ নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে আছেন নিরন্তর।

শুধু দরিদ্র মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়াই নয়- সংবাদকর্মী, অন্যান্য পেশাজীবীদের প্রতিও সমান নজর রাখছেন করোনা সৃষ্ট সংকটের শুরু থেকেই। তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান নির্বাচনী এলাকা জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে দুঃস্থদের তালিকা করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন নিজেই। পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্যসামগ্রী। প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, যতদিন বেঁচে আছেন সরিষাবাড়ীতে কাউকে না খেয়ে থাকতে দেবেন না।

মানুষের জন্য এই যে অঙ্গীকার, এই যে পাশে থাকার দৃপ্ত প্রত্যয় এটা কি অর্থহীন? মোটেও না। বরং এই অঙ্গীকারই প্রকৃত মনুষ্যত্বের পরিচয়। জামালপুরের মেলান্দহ মাদারগঞ্জ থেকে ছয়বার নির্বাচিত সাংসদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, হুইপ মির্জা আজম করোনাকাণ্ডে সরকারি ছুটির পর থেকে পড়ে রয়েছেন এলাকায়। খাদ্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীসহ সব ধরনের সহযোগিতা নিয়ে আছেন মানুষের পাশে।

মানিকগঞ্জের ঘিওর, শিবালয়, দৌলতপুর থেকে নির্বাচিত সাংসদ, সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার নাঈমুর রহমান দুর্জয় এলাকার দরিদ্র মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছেন প্রতিনিয়ত। সাধারণ মানুষসহ খেলোয়াড়, সংবাদকর্মী, পেশাজীবীদের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে দুর্বল তাদের সহযোগিতা করছেন নিরন্তরভাবে।

করোনাকাণ্ডে এইভাবে নিজ নিজ এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক অসামান্য কাজ করছেন নোয়াখালীর সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসনের নিক্সন চৌধুরী, বাগেরহাট সদরের শেখ সারহান নাসের তন্ময়, ফেনী সদরের নিজাম হাজারী, নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, কুষ্টিয়া সদরের মাহবুবুল আলম হানিফ, রাজশাহীর বাঘা চরঘাটের শাহরিয়ার আলম, ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জের সালমান এফ রহমান, মাদারীপুরের শাজাহান খান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও দিনাজপুরে বোচাগঞ্জ-বিরলের সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক রেলমন্ত্রী ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সাংসদ মুজিবুল হক, বাগেরহাটের ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারির সাংসদ শেখ হেলাল উদ্দীন, খুলনার সদর-সোনাডাঙ্গা আসনের সাংসদ শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, খুলনার রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়ার সাংসদ সালাম মুর্শেদী, সাতক্ষীরার জগলুল হায়দার, গাজীপুরের শ্রীপুরের ইকবাল হোসেন সবুজসহ অনেক সাংসদ। যদি শতাংশের হিসাব করি তাহলে হয়তো অন্তত ৬০ শতাংশ সাংসদ চেষ্টা করছেন নানাভাবে এলাকার মানুষের পাশে থাকার।

এখন প্রশ্ন হলো, সাংসদদের শক্তি আসলে কী? একদিকে নির্বাচনী এলাকার জনগণ ও জনগণের আস্থা এবং সরকারের ভেতর যে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শক্তি তার পুরোপুরি সমর্থন আর সহযোগিতা। এই মুহূর্তে সাংসদদের সেই সমর্থন আর সহযোগিতা করা হচ্ছে কি? না, হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না সেটি লাখ টাকার প্রশ্ন। কিন্তু যেভাবে সাংসদ এবং রাজনীতি আর রাজনীতিবিদদের ব্যর্থ তকমা সেটে দেওয়া হচ্ছে সেটি মোটেও শুভ লক্ষণ নয়।

লেখক: সম্পাদক, দৈনিক ঢাকা টাইমস, ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম এবং সাপ্তাহিক এই সময়।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন