মেয়েদের ফুটবলে নতুন দিনের গান

  10-01-2018 08:52AM


পিএনএস ডেস্ক: আমাদের মেয়েরা ধীরে ধীরে অন্তহীন প্রেরণার উৎস হয়ে উঠছে। তারা দারিদ্র্যকে জয় করছে, উপেক্ষা করছে সমাজের রক্তচক্ষু, অতি সম্প্রতি তো তারা ফুল ফুটিয়েছে ফুটবলের সবুজ জমিনে। ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৫ দলও সাফ জিতেছিল, তাদের আলাদা করে প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনা দেননি। প্রধানমন্ত্রী মেয়েদের দিয়েছেন, সেটা তাদের প্রাপ্যও ছিল। বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে এই মেয়েরা লড়ছে ঘরে ঘরে। সমাজের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে লড়ছে ময়দানে। হাততালি পাওয়ার আশায় শুধু নয়, তারা খেলছে দেশের জন্য। এর পরও এই খেলার অধিকার তাদের আদায় করে নিতে হয়; যে অধিকার ছেলেদের ক্ষেত্রে ঘোরে পিছু পিছু।

সম্প্রতি সাফে বাংলাদেশের মেয়েরা একরকম বলে-কয়ে শিরোপা জিতেছে। বাংলাদেশের কোনো পর্যায়ের ফুটবলেই এতটা দাপট দেখা যায়নি কখনো। মেয়েদের এই সাফ জয়ের মাহাত্ম্য তাই অনেক। ‘বাংলাদেশের মেয়েরাই দক্ষিণ এশিয়ার সেরা’ শিরোনামে। এই দাবিতে বাড়াবাড়িও নেই। টানা দুই আসরে ভারতকে চারবার হারিয়ে এই অঞ্চলের ফুটবলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বটা পাকাপোক্ত করেছে তারা।

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট নামে মেয়েদের একটি ফুটবল শেখার মঞ্চ গড়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। দূর পল্লী থেকে মারিয়া, মার্জিয়া, মনিকারা যে আজ সাফ শ্রেষ্ঠত্ব ঘরে তুলেছে, লড়ছে এশিয়ার ময়দানে; তার আঁতুড়ঘর ওই বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের মহিলা কমিটি সম্ভাবনার জায়গাটিকে এমন সুন্দরভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে, এর কৃতিত্ব তাদেরও প্রাপ্য। মেয়েদের লিগ-টুর্নামেন্ট নিয়মিত হয় না অর্থাভাবে। তারা বঙ্গমাতা থেকে উঠে আসা হীরেগুলোকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত রাস্তা ধরেছে। একঝাঁক কিশোরীকে নিয়ে তারা ক্যাম্প করেছে দিনের পর দিন। প্রথম সাফল্য আসে নেপাল থেকে।

সেই যে মেয়েরা বিশেষ বিমানে ভূমিকম্পের আতঙ্ক নিয়ে কাঠমাণ্ডু থেকে ফিরল, মনে আছে? সেবারই অনূর্ধ্ব-১৪ এএফসি রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। মেয়েদের ফুটবলের যেকোনো পর্যায়ে ওটাই প্রথম শিরোপা। ভূমিকম্পে দশরথ স্টেডিয়াম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ফাইনাল না খেলেই ফিরতে হয়েছিল মেয়েদের। হোটেল থেকে বেরিয়ে সারা রাত খোলা আকাশের নিচে কাটিয়ে পরদিন তারা দেশে ফেরে। নেপাল ভূমিকম্পের সেই ধাক্কা কিছুটা কাটিয়ে ওঠার পর সেই কাঠমাণ্ডু ফিরেই শিরোপা জিতে আবার ঘরে ফেরে বাংলাদেশের মেয়েরা। ফাইনালে নেপালকে হারিয়েছিল তারা ১-০ গোলে।

পরের বছর তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটটা ধরে রাখে তহুরারা। সেই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা তহুরা এবার সাফ শিরোপা জয়ের পথেও স্বাগতিকদের হয়ে করেছে সবচেয়ে বেশি গোল। তাজিকিস্তানের ওই আসরেই ভারতকে গ্রুপ পর্বে এবং ফাইনালে দুইবার হারায় বাংলাদেশ। ভারতীয়দের বিপক্ষে যেকোনো পর্যায়েই মেয়েদের সেটা প্রথম জয়। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশ যে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে, তা জানা হয়ে গিয়েছিল সেদিনই। এরপর এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা ছিল এর সদর্প ঘোষণা। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ওই আসরে কৃষ্ণা-সানজিদারা ফুটবলের ফুল ফুটিয়ে মাতায় স্বাগতিক দর্শকদের। মেয়েরা মন জয় করে নেয়। ছেলেদের ফুটবলের রুগ্ণ দশায় তাদের ওই আলোকচ্ছটা চোখে পড়ে বড় বেশি করে। ওই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েই বাংলাদেশ নাম লিখিয়ে ফেলে এশিয়ার এলিট আট দলে। এরপর ফুটবল ফেডারেশন তাদের যত্নে ত্রুটি করেনি এতটুকু। এশিয়ার চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি হতে তাদের পাঠিয়েছে জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন ও মালয়েশিয়ায়। শুধু প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে নয়, এশীয় মানের প্রশিক্ষণও নিয়েছে তারা সেখানে লম্বা সময় ধরে। থাইল্যান্ডে সেই আট দলের লড়াইয়েও বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে ছিল বিশ্বসেরাদের কাতারে নাম লেখানোর প্রতিশ্রুতি। কাজী সালাউদ্দিন সাফজয়ী মেয়েদের নিয়ে এখন অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখছেন, তার ভিতটাও তাই হুট করে গড়া নয়।

এমন লড়াকু যারা, যাদের হাত ধরে আসে সাফল্য একের পর এক, প্রধানমন্ত্রীর সান্নিধ্য তো তারা পাবেই। এ ছাড়া সামনেও তাদের রয়েছে অসীম সম্ভাবনা। কিশোরীরা তরুণী হয়েও যেন এমনই চ্যাম্পিয়ন থাকে, পরিপূর্ণ নারী হয়েও যেন উদাহরণ হয়ে থাকে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার। নতুন দিনটাকে সঙ্গে করেই তারা নিয়ে যাক উজ্জ্বল আগামীর পানে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন