শিরোপা লড়াইয়ের দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্স ৪-২ ক্রোয়েশিয়া

  15-07-2018 10:33PM

পিএনএস ডেস্ক:আত্মঘাতী গোলে শিরোপা লড়াইয়ে এগিয়ে গিয়েছিল ফ্রান্স। খানিক বাদেই দারুণ গোলে ক্রোয়েশিয়াকে সমতা ফেরান ইভান পেরিসিচ। প্রথমার্ধেই পেনাল্টি থেকে ফ্রান্সেকে আবার এগিয়ে দেন অঁতোয়ান গ্রিজমান। দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান বাড়ান পল পগবা ও কিলিয়ান এমবাপে। তবে গোলরক্ষক উগো লরিসের মারাত্মক ভুল বল জালে পাঠিয়ে ক্রোয়েশিয়াকে আশা দেখান মারিও মানজুকিচ।

মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে শুরু থেকে বল দখলে রেখে আক্রমণে এগিয়ে ছিল ক্রোয়েশিয়া। তবে ভালো কোনো সুযোগ তৈরি হয়নি।

খেলার ধারার বিপরীতে ফ্রান্স এগিয়ে যায় মারিও মানজুকিচের আত্মঘাতী গোলে। ১৮তম মিনিটে ডি-বক্সের অনেক বাইরে থেকে অঁতোয়ান গ্রিজমানের ফ্রি-কিক হেডে বিপদমুক্ত করতে চেয়েছিলেন সেমি-ফাইনালের জয়সূচক গোলদাতা। বল তার মাথায় ছোঁয়া লেগে জালে ঢোকায় কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষক দানিয়েল সুবাসিচের।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে ফাইনালে এটাই প্রথম আত্মঘাতী গোল।

নক-আউট পর্বের তিনটি ম্যাচেই আগে গোল খেয়ে ম্যাচে ফিরেছিল ক্রোয়াটরা। এবারও ফিরতে দেরি হয়নি। ২৮তম মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর থেকে দুর্দান্ত শটে গোল করেন ইভান পেরিসিচ। ফ্রি-কিক থেকে ডি-বক্সে আসা বল জটলা থেকে দোমাগোই ভিদা কাটব্যাক করেছিলেন। ডান পা দিয়ে বল আয়ত্তে নিয়ে বাঁ পায়ের জোরালো শটে গোলরক্ষক উগো লরিসকে ফাঁকি দেন সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও সমতা ফেরানো পেরিসিচ। টুর্নামেন্টে এটি এই মিডফিল্ডারের তৃতীয় গোল।

দশ মিনিট পর আবার এগিয়ে যায় ফ্রান্স পেনাল্টি থেকে। কর্নার থেকে ডি-বক্সে আসা বলে লেগেছিল পেরিসিচের হাতের ছোঁয়া। রেফারি মাঠের বাইরে গিয়ে ভিডিও রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত দেন স্পট-কিকের। ঠাণ্ডা মাথায় টুর্নামেন্টে নিজের চতুর্থ গোলটি করেন অঁতোয়ান গ্রিজমান।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আবার সমতা ফিরতে পারতো। ইভান রাকিতিচের বাড়ানো বল ধরে আন্তে রেবিচের শট দুর্দান্তভাবে ঠেকান উগো লরিস।

৫২তম মিনিটে ম্যাচে প্রথমবারের মতো জ্বলে উঠেন কিলিয়ান এমবাপে। পাল্টা আক্রমণে পল পগবার বাড়ানো বল ধরে দুর্দান্ত গতিতে ভিদাকে পেছনে ফেলে ডি-বক্সে ঢুকে শট নিয়েছিলেন পিএসজির এই ফরোয়ার্ড। পা দিয়ে ঠেকান সুবাসিচ।

দ্বিতীয়ার্ধেও অনেকটা খেলার ধারার বিপরীতে গোল পেয়ে যায় ফরাসিরা। বাঁ দিক থেকে দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে ডি-বক্সে এমবাপের ক্রস ধরে গ্রিজমান বল পাঠান পেছনে থাকা পল পগবাকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই মিডফিল্ডারের ডান পায়ের প্রথম শট ফেরে রক্ষণে। ফিরতি বলে বাঁ পায়ের শট যায় জালে।

দুই দলই সেমি-ফাইনালের শুরুর একাদশ ফাইনালে রেখেছে। ক্রোয়েশিয়ার সামনে প্রথমবার ফাইনালে উঠে শিরোপা জয়ের হাতছানি। আর তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠা ফ্রান্সের লক্ষ্য দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়।

অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা ফ্রান্সের গ্রুপ পর্বের পারফরম্যান্স আশানুরূপ ছিল না। দ্বিতীয় ম্যাচে পেরুকে ১-০ গোলে হারানোর পর শেষ ম্যাচে ডেনমার্কের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে ফরাসিরা। তিন ম্যাচে দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপের সেরা হয় তারা।

শেষ ষোলোয় আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে এবং কোয়ার্টার-ফাইনালে উরুগুয়েকে ২-০ গোলে হারায় ফরাসিরা। আর ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সামুয়েল উমতিতির একমাত্র গোলে বেলজিয়ামকে হারায় ১৯৯৮ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

অন্যদিকে, ক্রোয়াটদের গ্রুপ পর্বের পথচলাটা ছিলা দারুণ। নাইজেরিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে শুরুর পর আর্জেন্টিনাকে ৩-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয় ক্রোয়েশিয়া। আর শেষ ম্যাচে আইসল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে তিন ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে ‘ডি’ গ্রুপের সেরা হয় জ্লাতকো দালিচের দল।

ফ্রান্সের তুলনায় ক্রোয়েশিয়ার নকআউট পর্বের যাত্রাটা ছিল তুলনামূলক কঠিন। নির্ধারিত সময়ে কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি তারা। শেষ ষোলোয় ডেনমার্ক ও কোয়ার্টার-ফাইনালে রাশিয়াকে টাইব্রেকারে হারায় মদ্রিচ-রাকিতিচরা। আর সেমি-ফাইনালে মারিও মানজুকিচের অতিরিক্ত সময়ের গোলে ইংল্যান্ডকে হারায় ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপে অভিষেক আসরেই সেমি-ফাইনাল খেলা ক্রোয়েশিয়া।

ফ্রান্স একাদশ: উগো লরিস, সামুয়েল উমতিতি, রাফায়েল ভারানে, লুকা এরনঁদেজ, বাঁজামাঁ পাভার্দ, এনগোলা কঁতে, পল পগবা, ব্লেইস মাতুইদি, অঁতোয়ান গ্রিজমান, কিলিয়ান এমবাপে, অলিভিয়ে জিরুদ।

ক্রোয়েশিয়া একাদশ: দানিয়েল সুবাসিচ, দোমাগোই ভিদা, দেয়ান লভরেন, ইভান স্ত্রিনিচ, শিমে ভারসালকো, লুকা মদ্রিচ, মার্সেলো ব্রজোভিচ, ইভান রাকিতিচ, মারিও মানজুকিচ, আন্তে রেবিচ, ইভান পেরিসিচ।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন