দর্শক-সমর্থকের কাতারে আর কতকাল !

  16-07-2018 08:54PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : নেমে গেল বিশ্বকাপ ফুটবলের পর্দা। বিশ্বকাপ ফুটবলের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মহারণ ছাড়াই এবারের ফাইনাল সম্পন্ন হয়েছে রাশিয়ায়। প্রিয় দল না থাকায় আনন্দ কম থাকলেও খেলা দেখা আগ্রহে মোটেও ভাটা পড়েনি বাংলাদেশজুড়ে। এবার কাপ জিতে নিল ফ্রান্স। আর আমরা? আমরা দর্শক আর সমর্থকের কাতারেই। কিন্তু আর কতদিন!

বাংলাদেশের দর্শকদের মধ্যে ৯০ শতাংশই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থক। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বিদায়ে খেলার প্রতি অনেকের আগ্রহ কমে যায়। তার পরও খেলা দেখার বিন্দুমাত্র কমতি ছিল না। যদিও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো পতাকা ছিল না ফাইনালে খেলা দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের।

ফুটবলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের প্রীতি কতটা গভীর, বিশ্বকাপ খেলার দিন ঢাকার রাস্তার চিত্রে সেটা ফুটে উঠেছে। এমনকি অনেক পয়েন্টে ট্রাফিকের দেখাও মিলেনি। যদিও সেটা তেমন প্রয়োজন পড়েনি। অন্যদিনের মতো এ দিন যানজটের নগরী হিসেবে চির পরিচিত সন্ধ্যার পরের ঢাকা অনেকটা ফাকা ছিল।

আগের বিশ্বকাপ বা যে কোনো খেলায় একটি গোলের পর যে টানটান উত্তেজনা ও চিৎকার-বেঁচামেচি শোনা যেত, এবার বিশ্ব ফাইনালে ছয়টি গোল মিলিয়ে তার সিকি ভাগও কানে আসেনি। কিন্তু দর্শকের কমতি ছিল না। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানী, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, স্পেন ফাইনালে না থাকার ফল নাকি এটি। বেলজিয়ামের খেলাটা মনে রাখার মতো ছিল।

বেলজিয়াম আর ইংল্যান্ডের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলাটা ছিল দারুণ উপভোগ্য। খেলা দর্শকদের মন ভরিয়ে দিয়েছে। যদিও অনেকের মতে, সারাসরি খেলা না হয়ে গোল ও হলুদ কার্ডের সংখ্যায় এটি নির্ণয় হওয়া উচিত। তবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ওই খেলাটি দর্শকদের মনে ভরিয়ে দিয়েছে।


এবারের খেলায় ক্ষণে ক্ষণে গতি থাকলেও ছন্দ খুব একটা চোখে পড়েনি। চোখে তেমন পড়েনি অহেতুক থুথু ফেলা। বল নিয়ে দর্শনীয় তেমনবক্যারিশমা খুব একটা চোখে পড়েনি। গত চারবারের বিশ্বকাপ ফইনালে ৬টি গোল হয় আর এবারএকটিতেই ছয়টি গোল হয়েছে। ফাইনালের একটি ছাড়া বাকি পাঁচটি গোলই ছিল দর্শনীয়। পেনাল্টি শর্টটির সিদ্ধান্ত ছিল বিতর্কিত।

আশির দর্শকে যে ক্রোশিয়া রেকিংয়ে বাংলাদেশের নিচে ছিল, আজ সে ক্রোশিয়া সেরা ৩২শে শুধু নয়, ফাইনালে। কাপ জেতার সব প্রস্তুতি তাদের ছিল বলে মনে করেন অনেক ফুটবল প্রেমিক। একের পর এক প্রতিটি খেলায় তাদের চমকও ফুটবল বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ফুটবলের অন্যতম সেরা দল ব্রাজিলকে হারিয়ে তারা ইতিহাস সৃষ্টি করে বৈকি।

এশিয়ার সৌদি আরব, ইরান, রাশিয়া, জাপান ও কোরিয়া বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলেছে। আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছে তারা। আগামী বিশ্বকাপে তারা একটা কিছু করতে পারার মতো অবস্থা দেখিয়ে দিয়েছে ফুটবল বিশ্বকে। আর আগামী খেলা তো এশিয়ার কাতারেই হচ্ছে। সৌদি আরব পাঁচ গোল হজম করলেও পরে কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেখিয়েছে তাদের ক্যারিশমা। হারলেও খেলা দেখিয়ে তারা মাঠ ছেড়েছে।

আগামী বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার দাবি উটছে ফুটবল বোদ্ধা মহলে। বিশ্বকাপ না হোক আপাতত সাফ ফুটবল জেতার জন্য দল গড়ার কাজ শুরু করতে বাধা কোথায়? অত্যন্ত অঞ্চল থেকে বাছাই করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে খেলোয়াড় তৈরির কাজ শুরু করতে হবে। বাছাইকৃতদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলবে হবে।

ফুটবল নিয়ে নাকি এখন মাঠে রাজনীতি হচ্ছে। ফলে ফুটবল মাঠ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। সেখানে রাজনীতি ঢুকে গেছে। জাতীয় স্বার্থে খেলার মাঠের রাজনীতি দূর করতে হবে। আর জেলা পর্যায়ে ডিসি-এসপিদের দায়িত্বে ফুটবল ছেড়ে দিলে এটি গতি পাবে সহজেই। তারা ডোনাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সহজেই এ কাজে সফল হতে পারেন।


বিশ্বকাপে যদি মেসি, রোনাল দো, নেইমার, হালের ফান্সের এম্বাপ্পের মতো খেলোয়ার সৃষ্টির কাজটা শরু করতে না পারি বাংলাদেশের কায়সার হামিদ, আসলাম, সাবির, এমেকা, আলফাজ, সালাম মোর্শেদী, বাদল দাশ তৈরির কাজটায় হাত দিই। এ জন্য ফুটবল খেলোয়াড় সৃষ্টির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি একাডেমি অন্যথায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তোলা সময়ের দাবি।

লেখক : বার্তা সম্পাদক- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন