ফুটবলে আশা জাগাচ্ছে প্রতিবন্ধী ও নারীরা

  22-07-2018 07:09PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : কে বলে আমরা পারি না। বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর শেষ হতে না হতেই আমাদের দামাল ছেলেরা, তাও তাদের মধ্যে আটজন প্রতিবন্ধী। স্পেশাল অলিম্পিক ইউনিফাইড ফুটবলে বাংলাদেশ দল দুবারের বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্সকে হারায়। এর আগে মেয়েরা ভারত ও কাতারকে হারিয়েছে। প্রতিবন্ধী ও মেয়েরা পারলে সুস্থ-সবলরা কেন পারবে না।

খবরে প্রকাশ, ফ্রান্সের পর এবার যুক্তরাষ্ট্রকে হারাল ‘বাংলাদেশ ফুটবল দল’। ১৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে শুরু হয়েছে স্পেশাল অলিম্পিক ইউনিফাইড ফুটবল। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে হারলেও পরের দুই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ ইউনিফাইড দল।

১৯ জুলাই স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়েই সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের। আগের ম্যাচে ফ্রান্সের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় ছিল ২-১ গোলে। ইউনিফাইড ফুটবল দলটি প্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে সুস্থ ফুটবলারদের সমন্বিত দল। মোট ১৫ জনের দলে আটজন শারীরিক প্রতিবন্ধীর সঙ্গে সাতজন সম্পূর্ণ সক্ষম ফুটবলার খেলতে পারছেন। একাদশে খেলতে পারেন ছয়জন প্রতিবন্ধীর সঙ্গে পাঁচজন সক্ষম খেলোয়াড়।

যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই সোহানুর রহমান সোহানের গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুটি গোল করেন আতিফ ও আহসানুর রহমত। স্বাগতিকেরা বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল উরুগুয়ের বিপক্ষে ৩-০ গোলের হার দিয়ে। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই ফ্রান্সের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। গ্রুপের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি।

এর আগে আমাদের মেয়েরা ফুটবলে জাদু দেখিয়েছে। সাফ মহিলা কাপে বাংলাদেশের জাতীয় মহিলা ফুটবল দল চ্যাম্পিয়ন হয় ২০১৭ সালে। এএফসি অনূর্ধ্ব–১৬ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ স্বাগতিক কাতারকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল। ২০১৫ সালে সাফ অনূর্ধ্ব–১৫ ফুটবলে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ।

ভারতের অনূর্ধ্ব ১৫ নারী ফুটবল দলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে দক্ষিণ এশিয়ান অনূর্ধ্ব ১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব ১৫ নারী দল। এর আগেও এএফসি অনূর্ধ্ব ১৪ ফুটবলের আঞ্চলিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠে ২০১৫ সালে।

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রামের নাম এখন বাংলাদেশের অনেকেই চেনে। একদল কিশোরী ফুটবলার সেখান থেকে উঠে এসেছে। বাংলাদেশে যে দেশব্যাপী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টুর্নামেন্ট হয়, সেখানে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ময়মনসিংহের কলসিন্দুর বিদ্যালয়।

অনেক দূর থেকে মেয়েরা প্রতিদিন প্রশিক্ষণ নিতে আসত। তাদের কষ্ট লাগবে চ্যানেল আইয়ের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা, কৃষিতে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষকবান্ধব ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ তাদের প্রত্যেককে একটি করে বাইসাইকেল দেন। টিভিতে তাদের উৎসাহব্যঞ্জক সাক্ষাৎকার প্রচার করেন। উৎসাহ পেয়ে তারা ইতিহাস গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আশার আলো জাগাচ্ছে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে গড়া ফুটবল দল। সোনার ছেলেরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে গঠিত দল যদি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জিততে পারে, হারাতে পারে দুবারের বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্সকে, ক্ষুদে মেয়েরা দেখিয়েছে তাদের বীরত্ব, অবলা নারীরা পারলে সুস্থ-সবলরা কেন পারবে না? দায়িত্বশীলরা আন্তরিকভাবে এগিয়ে এলে ফুটবলে ঘুরে দাঁড়ানো এবং বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ঠাঁই পাওয়া কঠিন কিছু নয়।

লেখক : বার্তা সম্পাদক- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন