৩২২ তাড়া করার নেপথ্যের কারিগর যিনি

  19-06-2019 07:42PM

পিএনএস ডেস্ক : ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিতেছে বাংলাদেশ। যে দুজনের ব্যাটে চড়ে এসেছে অসাধারণ এই জয়, স্বাভাবিকভাবেই সেই সাকিব আল হাসান আর লিটন দাসকে সবাই ভাসাচ্ছেন প্রশংসায়। সেটিই স্বাভাবিক।

তবে সাকিব-লিটনদের মানসিকতায় আত্মবিশ্বাস এনে দিতে আরেকজনের কিন্তু দুর্দান্ত ভূমিকা আছে। তিনি অবশ্য বাংলাদেশের কেউ নন। দলের দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি কথা ভুলে গেলে কি হবে! বাংলাদেশের ৩২২ রান তাড়া করার নেপথ্য কারিগর যে তিনিই।

২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে দিয়ে তিনি যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের সঙ্গে। শ্রীলঙ্কান ব্যাটিং কোচ থিলান সামারাবীরা চলে যাওয়ার পর প্রায় বছর খানিক এ পদে কেউই ছিলেন না। ম্যাকেঞ্জি যে বিসিবির দারুণ এক নিয়োগ, সেটির প্রমাণ হাতেহাতেই পেয়ে গেছেন সবাই।

খেলোয়াড়ি জীবনে আহামরি কোনো প্রোফাইল ছিল না ম্যাকেঞ্জির। তারকাখচিত দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সদস্য হিসেবে ৫৮ টেস্টে ৩৭.৩৯ গড়ে ৩ হাজার রান ও ৬৪ ওয়ানডেতে ৩৭.৫১ গড়ে ১ হাজার ৬৮৮ রান ভালো হলেও আহামরি কিছু নয়। সেই ম্যাকেঞ্জির ছোঁয়াতে বদলে গেছে বাংলাদেশের ব্যাটিং, খেলোয়াড়দের মানসিকতায় এসেছে লড়াকু পরিবর্তন।

দায়িত্ব পেয়ে কিন্তু প্রথম সিরিজেই নিজের কার্যকারিতার প্রমাণ রেখেছিলেন ম্যাকেঞ্জি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে টেস্ট সিরিজে হারলেও ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দুটো সিরিজই জেতে বাংলাদেশ। দায়িত্ব পাওয়ার পর বেশ কয়েকবারই নিজের লক্ষ্যের কথা সরাসরিই জানিয়েছেন ম্যাকেঞ্জি। ভৌগোলিক কারণেই আন্দ্রে রাসেল-গ্লেন ম্যাক্সওয়েলদের মতো হার্ড হিটিং কোনো ব্যাটসম্যান নেই বাংলাদেশের। যা নেই, তা নিয়ে আক্ষেপ করতে রাজি নন ম্যাকেঞ্জি।

বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের তাই খেলাতে চেয়েছেন ‘স্মার্ট’ ক্রিকেট। বিশাল বিশাল ছয় না মেরেও যে দ্রুত রান তোলা যায়, মাথা খাটিয়ে খেলে বাউন্ডারি বের করা যায়, এই বিদ্যেটাই রপ্ত করাতে চেয়েছেন ম্যাকেঞ্জি। ফলাফল কেমন হয়েছে, সেটি তো চোখের সামনেই।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচের আগে টন্টনের মাঠের আকৃতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানরা একের পর এক বলে বাংলাদেশি বোলারদের বাউন্ডারির বাইরে আছড়ে ফেলেন কিনা, সে আলোচনা ছিল খুব জোরেশোরে। কিন্তু ম্যাচটা জিতল বাংলাদেশই।

পেশির জোরই সব নয়, মাথা খাটিয়েও যে বড় রান করা যায়, ম্যাচের ফল নিজেদের পক্ষে আনা যায়, সাকিবদের সেটিই বোঝাতে চেয়েছেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান। ম্যাচের আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও এই কথাগুলোই উঠে এসেছিল ম্যাকেঞ্জির কণ্ঠে, ‘একটা জিনিস আমি বুঝতে পেরেছি, আমাদের (বাংলাদেশের) ব্যাটসম্যানরা খুবই ক্লিন হিটার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের মতো বিগ হিট হয়তো করতে পারে না, তবে ওরা খুব স্কিলড হিটিং করতে পারে। আমাদের যেটা শক্তিমত্তার জায়গা, সেটা নিয়েই কাজ করছি আমি।’

ঠিক এই জিনিসটাই দেখা গেছে বাংলাদেশের ইনিংসে। কোনো ব্যাটসম্যানই তেড়েফুঁড়ে মারতে যাননি, কিন্তু তাই বলে রানের চাকাও থেমে থাকেনি এক মুহূর্তের জন্য। সিঙ্গেলস-ডাবলস যেমন এসেছে, নিয়মিত বিরতিতে বাউন্ডারিও তেমন এসেছে। সাকিবই যেমন বলেছেন, প্রথম ইনিংস শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩২১ তুলে ফেলার পরও নির্ভার ছিল বাংলাদেশ দল। এই রান তাড়া করার সামর্থ্য আছে দলের, এ বিশ্বাসটা ছিল সকলের মধ্যেই।

শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচেও বুদ্ধিদীপ্ত ক্রিকেট খেলেই ৩৩০ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ রান, আর সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়, দুটোই এল ম্যাকেঞ্জির সময়ে।

বিশ্বকাপ শেষেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকান এই কোচের। বিসিবি তাঁকে রেখে দেবে, না কি ছেড়ে দেবে, সেটি এখনো অজানা। তবে টুইটারে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটপ্রেমীরা যেভাবে ম্যাকেঞ্জির জন্য হাহাকার করছেন, সেটি দেখেই ব্যাটিং কোচ হিসেবে ম্যাকেঞ্জির কদর বোঝা যায়। বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টে যোগ দেওয়ার আগে ২০১৬ ও ২০১৮ সালে দুই দফায় দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন ম্যাকেঞ্জি। সেখান থেকে ছাঁটাই হওয়ার পরই তাঁকে নিয়ে আসে বাংলাদেশ।

গ্যারি লেমকে নামের একজন টুইট করেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড কেন ম্যাকেঞ্জিকে ছেড়ে দিল? বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ হিসেবে দুর্দান্ত কাজ করছে সে। আপনাকে শ্রদ্ধা। আমি বুঝে উঠতে পারছি না, দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ড কেন কোচিংয়ের ওপর আরও বেশি বিনিয়োগ করছে না। এ রকম কোচ থাকতে বিদেশি কোচের দরকার কি?’

রিচার্ডসন জাইডুমে নামের আরেক ব্যক্তি বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই যেন ম্যাকেঞ্জিকে ফিরিয়ে আনা হয়, ‘বিশ্বকাপের পরেই সে বাংলাদেশ ছাড়ছে। তাঁকে আবার দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সঙ্গে দেখতে তর সইছে না। নিল ম্যাকেঞ্জিকে আবার ফিরিয়ে আনা হোক।’ নিজেদের দুর্বলতা ও শক্তিমত্তার জায়গা বুঝে ম্যাকেঞ্জির মতো একজনকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় বিসিবির প্রশংসাও করেছেন আরেকজন।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন