বিশ্বকাপজয়ী সাকিবকে বরণ করে নিল সিলেটবাসী

  14-02-2020 12:41AM

পিএনএস ডেস্ক: যুব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য তানজিম হাসান সাকিবকে বরণ করে নিল সিলেটের ক্রীড়ামোদী থেকে শুরু করে সংসদ সদস্যসহ আপামর জনসাধারণ। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালে সাকিবকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ও সাকিবের বাবা-মাসহ ভক্তরা। এরপর বর্ণাঢ্য মোটরশোভাযাত্রা সহকারে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের তিলকচানপুর গ্রামে।

বিকেল ৪টায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগরের তাজপুর কদমতলায় সাকিবকে ফুলের তোরা দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর উপজেলাবাসী। বিকেলে ৫টার দিকে বিশাল গাড়িবহর ও মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে সাকিবকে নিয়ে যাওয়া হয় বালাগঞ্জ উপজেলা সদরে। যাওয়ার পথে রাস্তার দুই পাশে উৎসুক জনতা সাকিবকে অভিবাদন জানান।

সাকিবের গাড়িবহর বালাগঞ্জ বাজারে পৌঁছালে সেখানে উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারি আনহার মিয়া চেয়ারম্যান, বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাকিবের চাচাতো ভাই আব্দুল মুনিম, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এরপর সন্ধ্যায় নিজ বাড়ির আঙিনায় সাকিবকে এলাকার সর্বস্থরের মানুষ বরণ করে নিয়ে সংবর্ধিত করেন।

তাজপুর এলাকায় সড়কের পাশে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বৃদ্ধ আছকর আলী। কেন দাঁড়িয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলে বিশ্বজয় করছে। সে আজ আসবে। তাকে দেখতে আসছি।’

আছকর আলীর সাথে কথা বলার কিছুক্ষণ পরই মানুষের হৈ-হুল্লোড় আর মোটরসাইকেলের কান ঝালাপালা করা হর্ন শোনা গেল। শব্দের থেকে নাকি আলোর গতি বেশি। কিন্তু এখানে শব্দের পরই দৃশ্যমান হলো চিত্র। শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর আসছে সড়ক দিয়ে। এই বহরেরই একটি মোটরসাইকেলের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে সদ্য গোঁফ ওঠা এক কিশোর। গলায় ফুলের মালা আর হাতের বিজয় চিহ্নই জানিয়ে দিল- এই সেই বিশ্বজয়ী ছেলে। যে বেড়ে উঠেছে এই গায়েরই ধুলোমাটিতে।

সাকিবের বাড়িতে পৌঁছাতে বিকেল গড়িয়ে গেল। আগে থেকেই পাড়া-প্রতিবেশী জড়ো হয়েছেন বাড়িতে। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বাড়িতে পৌঁছাতেই করতালি আর সাকিব সাকিব স্লোগানে তাকে বরণ করে নেয়া হলো। বাংলাদেশের নামে স্লোগানও চলে।

সবাই নিজেদের মতো করে উদযাপনে ব্যস্ত। আলাদা করে কারও সাথে কথা বলার সুযোগ নেই। সাবিকের বাবা-মা তো শতশত অতিথির খাতির যত্ন করে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। তার ওপর আছে সেলফির আবদার। এত সব ডিঙিয়ে তাদের কাছে পৌঁছানোই দায়।

তার আগে এলাকাবাসীর কাছ থেকেই জেনে নেয়া গেল কিছু তথ্য। কাতার প্রবাসী গৌছ মিয়া আর গৃহিণী সেলিনা পারভীনের চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সাকিব। পড়েছেন স্থানীয় বালাগঞ্জ ডিএন স্কুলে। এরপর চলে গেছেন ঢাকায় বিকেএসপিতে। এলাকাবাসী আর সহপাঠীদের কাছ থেকে এ রকম খুঁটিনাটি তথ্য জেনে নেয়ার ফাঁকেই দেখা মিলল গৌছ উদ্দিনের। ছেলেকে বরণ করতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন তিনি।

গৌছ উদ্দিন বলেন, ছোটবেলায় খুব দুরন্ত ছিল সাকিব। সারাক্ষণ খেলাধুলা নিয়ে থাকত। এ জন্য অনেকসময় আমরা রাগ করেছি। বকা দিয়েছি। কিন্তু যখন দেখলাম খেলাধুলার প্রতিই তার সব আগ্রহ তখন বিকেএসপিতে ভর্তি করতে সম্মত হই। ছেলের বিজয়ে গর্বিত এই বাবা বলেন, আজ সাকিবরা পুরো দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। তারা পুরো দেশের সন্তান।

এদিকে যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে ধরাশায়ী করতে অনন্য অবদান রাখা বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটার সিলেটের বালাগঞ্জের কৃতিসন্তান সাকিব বিশ্বজয় করে প্রথমবারের মতো সিলেটের মাটিতে পা রাখেন। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সাকিব সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালে সেখানে এক আনন্দঘন পরিবেশের আবহ সৃষ্টি হয়।

বিমানবন্দরে তাকে বরণ করতে সেখানে উপস্থিত হন সাকিবের বাবা গৌছ আলী, মা সেলিনা পারভিন, পরিবারের অন্য সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও ভক্তসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ। তারা সাকিবকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
অনুভূতি ব্যক্ত করে সাকিব বলেন, আমরা ভারতকে না হারালে বুঝতে পারতাম না দেশের মানুষ ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের এত ভালোবাসেন। সত্যিই একটি অসাধারণ এক অনুভূতি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাকিবের এলাকা সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী। সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস জানান, বিজয়ী দলের সকল সদস্যকে সিলেট এনে সংবর্ধনা দেয়া হবে।

পিএনএস/হাফিজ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন