ইসলাম শান্তি ও ভালোবাসার ধর্ম, একে শ্রদ্ধা করতে হবে : পল পগবা

  27-10-2020 06:49PM


পিএনএস ডেস্ক: ফ্রান্সের জাতীয় ফুটবল দলের মিডফিল্ডার পল পগবা বলেছেন, তার সম্পর্কে যারা ভুয়া খবর ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তিনি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ইসলাম সম্পর্কে ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মন্তব্যের প্রতিবাদে তিনি ফ্রান্সের হয়ে আর আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলবেন না- এমন একটি খবর অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি এভাবেই তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার কথা জানান।

ইংলিশ ফুটবল ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ২৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার এই খবরটিকে "একেবারেই ভুয়া" খবর বলে উল্লেখ করেছেন।

ফ্রান্সের হয়ে ২০১৮ সালে রাশিয়ায় বিশ্বকাপ জয় করেছেন পগবা। তিনি একজন মুসলিম। জাতীয় দলের হয়ে মোট ৭২টি ম্যাচ খেলে তিনি ১০টি গোল করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপেও ফরাসী দলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।

ফ্রান্সে খৃস্টান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যার পরেই মুসলিমদের সংখ্যা। ধারণা করা হয় যে দেশটিতে প্রায় ৬০ লাখ মুসলিম বসবাস করেন।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে 'আন্তর্জাতিক ফুটবল ছাড়লেন পগবা', 'ফ্রান্সের জার্সিতে আর খেলবেন না পগবা'- এধরনের শিরোনামে খবরটি প্রকাশিত হয়। একই সাথে সোশাল মিডিয়াতেও এই খবর ভাইরাল হয়েছে।

শ্রেণিকক্ষে ইসলামের নবীর কার্টুন দেখানোর অভিযোগে শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে বাড়ি ফেরার পথে গলা কেটে হত্যা করার পর প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ইসলাম ধর্মের সমালোচনা করেন। ইসলাম ধর্মকে তিনি "আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের উৎস" হিসেবে উল্লেখ করেন।

তার এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে সারা বিশ্বে। এর পরেই ফরাসী সরকারের বিরুদ্ধে ঝড় উঠেছে মুসলিম বিশ্বের কিছু দেশে। কয়েকটি দেশে ফরাসী পণ্য বর্জনেরও ডাক উঠেছে। বিক্ষোভ হয় লিবিয়া, সিরিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো কয়েকটি দেশেও।

তুর্কী প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ফরাসী প্রেসিডেন্টের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষারও আহবান জানিয়েছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভুয়া খবরগুলোতে বলা হয়, মুসলিম বিশ্বের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে পল পগবা ফরাসী দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কিন্তু পরে পল পগবা বলেন, "আমার সম্পর্কে ১০০% ভিত্তিহীন খবর চারদিকে ছড়ানো হয়েছে। তাতে এমন জিনিস বলা হয়েছে যা আমি কখনো বলিনি, ভাবিনি।"

সোশাল মিডিয়া ইন্সটাগ্রামে তিনি এবিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে লিখেছেন, এই খবরে তিনি "স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ ও ধাক্কা খেয়েছেন।"

তিনি বলেন, কোন কোন সংবাদ মাধ্যম "ফরাসী জাতীয় দল ও আমার ধর্ম একসাথে মিশিয়ে ভুয়া খবর তৈরি করেছে।"

ইন্সটাগ্রামে পল পগবার অনুসারীর সংখ্যা চার কোটি ২০ লাখেরও বেশি।

ফরাসী প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের বিষয়ে পল পগবা কোন মন্তব্য করেননি। তবে ইন্সটাগ্রামে তিনি লিখেছেন, "আমি সব ধরনের সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে।"

ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমার ধর্ম শান্তি ও ভালোবাসার এবং এই ধর্মকে শ্রদ্ধা করতে হবে।"

পল পগবা মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন নি। তবে তার মা ছিলেন মুসলিম। ২০১৯ সালে পগবা জানান যে তিনি মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।

কেন তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি এর আগে বলেছিলেন, "আরো ভাল মানুষ হওয়ার জন্য তিনি মুসলিম হয়েছেন।"

মুসলিম বলতে কী বোঝায়- দ্য টাইমসের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, "এটা সবকিছু। এই ধর্ম আমাকে পরিবর্তন করেছে, জীবনের অনেক কিছু আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি। আমার ধারণা এটা আমার ভেতরে আরো বেশি শান্তি নিয়ে এসেছে।"

তিনি বলেন, "আমার জীবনে এটা একটা ভাল পরিবর্তন।"

"ইসলামকে প্রত্যেকে যেভাবে দেখে-সন্ত্রাস-ইসলাম সেরকম নয়। মিডিয়াতে আমরা যা শুনি সেটা ভিন্ন বিষয়। এটা খুব সুন্দর একটি ধর্ম। এবিষয়ে আপনাকে জানতে হবে।"

ফরাসী দল ছাড়ার ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পগবা লিখেছেন, "কিছু কিছু সংবাদ মাধ্যম আছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, যারা সংবাদ তৈরির সময় দায়িত্বশীল থাকে না। তারা সাংবাদিকতার স্বাধীনতার অপব্যবহার করে।"
"তারা যে খবরটি লিখে বা তৈরি করে তার সত্যতা যাচাই করে দেখে না। এই খবরটি মানুষের এবং আমার জীবনের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে সেটা না ভেবেই তারা গুজব ছড়িয়ে দেয়," বলেন তিনি।
পল পগবা বলেন, "যারা এই ১০০% ভুয়া খবরটি প্রকাশ করেছে এবং ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।"

২০১৩ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে পল পগবা ফরাসী জাতীয় দলে খেলা শুরু করেন।

বর্তমানে তিনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে খেলছেন। এর আগে খেলেছেন ইতালিয়ার ক্লাব ইওভেন্টাসে।

পল পগবা ছাড়াও আরো কিছু মুসলিম ফুটবলার আছেন ফরাসী দলে তাদের মধ্যে অন্যতম তারকা কিলিয়ান এমবাপে। এছাড়াও রয়েছেন ওসমান ডেমবেলে, এন'গোলো কান্টে, আদিল রামি, জিবরিল সিদিবে, নাবিল ফেকিরসহ আরো অনেকে। সূত্র: বিবিসি

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন