রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন, ‘রা.বি. ধান ১’

  18-04-2018 11:00AM


পিএনএস, রাবি: প্রচলিত ধানের তুলনায় ফলন হবে এক থেকে দেড় টন বেশি। শীষ থেকে খুব সহজে ঝরে পড়বে না। ধানটিতে ব্যাকটেরিয়াল ব্রাইট রোধক জিন বিদ্যমান। এমন আরও বেশ কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাংলাদেশে নতুন জাতের আরও একটি ধান উদ্ভাবন হয়েছে।

বিরি, হীরা, সোনার বাংলা ইত্যাদি কত জাতের ধানের নামই তো জানা। এবার নতুন উদ্ভাবন হওয়া ধানটির নাম দেয়া হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সাথে মিলিয়ে, ‘রা.বি. ধান ১’।

ধানটির উদ্ভাবক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরই অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল হক। ইতোমধ্যেই ‘রা.বি. ধান ১’ এর স্বীকৃতি দিয়েছে ন্যাশনাল সিড বোর্ড ও বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচার রিচার্স কাউন্সিল (বিএআরসি)। এখন বাজারজাত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে ধানটি। ১৮ এপ্রিল (বুধবার) সকালে ঢাকা বিএআরসি সেন্টারে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রদর্শন করা হবে ধানটি। সেখান থেকেই উদ্ভাবনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে।

ধানটির উদ্ভাবক অধ্যাপক আমিনুল হক বলেন, ‘২০১৪ সালে এই ধানের অরিজিন ফিলিপাইন থেকে আনা হয়। তখন থেকেই আমি গবেষণা চালিয়ে আসছিলাম। অনেক পরিশ্রমের ফলে ধানটি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। আশা করি এটির মাধ্যমে আমাদের কৃষকরা সফলতার মুখ দেখবেন।’

ধানের নাম ‘রা.বি ধান-১’ কেন দেয়া হলো জানতে চাইলে অধ্যাপক আমিনুল হক বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন ধান আবিষ্কারের ইতিহাস এটাই প্রথম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হওয়ার কারণেই আমার দ্বারা এটা সম্ভব হয়েছে। তাই যতদিন এই ধান থাকবে ততদিন তার সাথে রাবির নাম জড়িয়ে থাকবে। রাবির নামকে চিরস্মরণীয় করে রাখতেই ভালোবাসার জায়গা থেকে এমন নাম রাখা।’

তিনি বলেন, ‘আমন ধানের জাত ‘ব্রি৩৯ ধান’ এর কাছাকাছি জাত ‘রা.বি. ধান-১’। চিকন মিনিকেট চাউল উৎপন্ন হবে এই ধান থেকে। যার বাজার মূল্য উন্নত মিনিকেট চালের সমান। তবে ব্রি৩৯ এর থেকে ১৫ দিন আগেই রাবি ধান ১ এর আবাদ উঠবে। ব্রি৩৯ এর আবাদ উঠতে সময় লাগে ১৪৫ দিন। সেখানে ‘রা.বি. ধান ১’ এর আবাদ উঠতে সময় লাগবে ১৩০ দিন।’

অধ্যাপক আমিনুল বলেন, ‘নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করতে হলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে তা লাগিয়ে দেখা হয়। এবং ধানটির বৈশিষ্ট্য নীবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেন ন্যশনাল সিড বোর্ড ও বিএআরসি’র সদস্যরা। ফলাফল ও গুণ ঠিক থাকলে তবেই মেলে স্বীকৃতি। সেই হিসাবে ২০১৫ সালের আমন মৌসুমে প্রথমবারের মত ‘রা.বি.ধান ১’ দেশের ৪টি স্থানে ও ২০১৬ সাথে তিনটি স্থানে পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়। দুইবারই ব্রি৩৯ এর থেকে বেশি ফলন দেয়। সেই সাথে চাষাবাদে বেশি উপযোগী হিসেবে প্রমাণিত হয়। বর্তমানে এর স্বীকৃতি মেলে। এই ধান চাষ করে বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা পাবেন চাষিরা। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের আলু চাষিরা আমন মৌসুমে এই ধান ঘরে তুলে আলুর আবাদ শুরু করার সময় পাবেন।’

এই ধানের উদ্ভাবক আরও জানালেন, এই ধানের রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমন প্রচলিত জাতের থেকে অনেক কম হবে। এতে করে কৃষকের কীটনাশক খরচ অনেকটা সাশ্রয় হবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন