এলিয়ান খুজতে যে নতুন পদক্ষেপ নিল নাসা!

  10-09-2018 03:02AM

পিএনএস ডেস্ক : ভিনগ্রহের প্রাণী খুঁজতে নতুন এবার পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। নাসা পরিকল্পনা করছে, ২০২১ সাল নাগাদ জেমস ওয়েব নামে একটি স্পেস টেলিস্কোপটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করবে তারা। যেটি পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরত্বে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবে। নাসা বিজ্ঞানীদের দাবি, এই দূরবীনটি মহাকাশ বিদ্যায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এমনটাই জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।

নাসার বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, পৃথিবীর কাছাকাছি অন্য কোন নক্ষত্রের অন্য কোন গ্রহের প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা, সেটি এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যাবে।

নাসা আরও বলছে, আক্ষরিক অর্থেই এটি অতীত সময়ে নিয়ে যাবে, যার মাধ্যমে বিশ্বব্রক্ষাণ্ডের প্রথম ছায়াপথ তৈরির বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে। যদিও সেসব দাবি এখন ততটা জোরালো নয়।

টেলিস্কোপটিকে সংক্ষেপে ডাকা হচ্ছে 'জেডব্লিউএসটি' নামে। ধারণা করা হচ্ছে, মহাকাশের কোন নক্ষত্রের কোন গ্রহে প্রাণের উপযুক্ত পরিবেশ আছে কিনা, সেটি এই দূরবীনের মাধ্যমে সনাক্ত করা যাবে।

ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের মহাকাশ বিজ্ঞানীদের একটি দল এই টেলিস্কোপ ব্যবহার করে মহাবিশ্বে প্রাণ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাবনা দিয়েছেন। ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের মহাকাশ বিজ্ঞানী জোসুয়া ক্রিসানসেন-টোটন এবং তার দল বোঝার চেষ্টা করছেন, প্রাণের চিহ্ন আছে, কাছাকাছি থাকা কোন নক্ষত্রের কোন গ্রহে এমন কোন নমুনা এই টেলিস্কোপটি সনাক্ত করতে পারে কিনা।

ক্রিসানসেন-টোটন জানান, পরবর্তী কয়েক বছর ধরে আমরা এই প্রাণ সনাক্তকরণ পর্যবেক্ষণটি চালাতে পারবো। কারণ এই টেলিস্কোপটি আলোর ক্ষেত্রে এতটাই সংবেদনশীল যে, গ্রহের আবহাওয়ার ভেতর রাসায়নিক কোন নড়াচড়া থাকলে, এই দূরবীন সেটি সনাক্ত করতে পারবে। যেমন পৃথিবীর আবহ মণ্ডলে বেশ কয়েকটি গ্যাসের আস্তরণ রয়েছে। এর অনেক কিছু পৃথিবীর প্রাণের কারণে তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখন সেসব গ্রহে এরকম গ্যাসের সন্ধান করবেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর জীবনের কারণে পৃথিবীতে একরকম গ্যাসের আবহ রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে যদি সব প্রাণ বিলুপ্ত হয়ে যায়, পৃথিবীর আবহও পরিবর্তন হয়ে যাবে।

এতদিন ভাবা হতো, প্রাণের অস্তিত্ব হিসাবে অক্সিজেন বা ওজোন থাকতে হবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে, সেখানে থাকা প্রাণের জীবধারণ আমাদের মতোই হবে।

কিন্তু সেটা হয়তো নাও হতে পারে। এ কারণে এখন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে আবহাওয়ায় রাসায়নিক অস্থিতিশীলতার ওপর-যেখানে নানা ধরণের গ্যাসের অস্তিত্ব থাকতে পারে এবং সেসব গ্যাস ওই গ্রহের জন্য কতটা স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করছে। এসব বিশ্লেষণ করে হয়তো ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধান মিলতে পারে। তথ্য বিশ্লেষণ করে মি. ক্রিসানসেন-টোটন বলছেন, এই টেলিস্কোপ দিয়ে তারা প্রথমে নজর দিতে চান ট্রাপিস্ট-১ নামের একটি নক্ষত্রের দিকে, যেদিন সূর্য থেকে ৩৯.৬ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে।

২০১৭ সালে এই নক্ষত্রটি বেশ আলোড়ন তৈরি করে, কারণ এটির পৃথিবীর মতো সাতটি গ্রহ রয়েছে। তার বেশ কয়েকটিতে তরল পানি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা প্রাণ থাকার জন্য বেশ আদর্শ।

এখন ওয়াশিংটনের বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ওই নক্ষত্রের ট্রাপিস্ট-১ই নামের চতুর্থ গ্রহটির মিথেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা এবং তার পরিবর্তনের কারণ বিশ্লেষণ করতে পারবে।

প্রাণ আসলেই আছে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য এগুলো হয়তো খুবই ক্ষুদ্র নমুনা বা সংকেত হতে পারে। তবে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাথন লুনাইন বলছেন, ''তারা যে ক্ষেত্রটি বাছাই করেছে, সেটি এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে সহজেই যাচাই করা যেতে পারে।''

অনেক সময় অজৈব অনেক কারণ, যেমন আগ্নেয়গিরির উৎক্ষেপণের কারণে গ্যাসের পরিবর্তন হয়ে থাকে। সুতরাং ওই গ্রহে প্রাণ আছে কিনা, সেটি নিশ্চিত হওয়ার আগে এরকম অজৈব প্রভাবের বিষয়টিও বিজ্ঞানীদের মাথায় রাখতে হবে।

তবে অধ্যাপক লুনাইন বলছেন, '' আমি মনে করি মহাবিশ্বকে বোঝা এবং আবিষ্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমরা রয়েছি এবং জেমস ওয়েব আমাদের সেই পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে।''

যুক্তরাজ্যের মহাকাশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক জিলিয়ান রাইট বলছেন, '' মহাকাশে এর আগে এত বড় কোন কিছুর সুবিধা আমরা পাই নি। একটি টেলিস্কোপের ক্ষেত্রে বলা চলে, সেটি মহাবিশ্বের একটি জানালা খুলে দেয়। জেমস ওয়েবের ক্ষেত্রে এটা পুরোপুরি সত্যি।''

প্রসঙ্গত, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি নাসার নেতৃত্বে তৈরি করা হচ্ছে, তবে এর সঙ্গে ইউরোপিয়ান এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সিও রয়েছে। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ২০২১ সাল নাগাদ মহাকাশে পাঠাতে চায় নাসা আর এটি তৈরি করতে প্রায় দশ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে বলে নাসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন