হঠাৎ স্বাদ-গন্ধ না পাওয়া করোনার প্রথম উপসর্গ! ‌

  17-05-2020 02:59PM

‌পিএনএস ডেস্ক : এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ (এনএইচএস) শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা এবং ঘন-ঘন কাশিকেই করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগের অন্যতম প্রধান দুই উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করছে। কিন্তু বেশ কিছু গবেষণার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে জ্বর বা কাশি শুরুর আগেই তারা স্বাদ-গন্ধ হারিয়ে ফেলছে।

ব্রিটিশ রিনোলজিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট এবং শীর্ষ নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ক্লেয়ার হপকিন্স বলছেন, জ্বর বা কাশির চেয়েও হঠাৎ স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া কোভিডের আরও ‘বিশ্বাসযোগ্য’ উপসর্গ হতে পারে। সরকার কেন এখনও এই উপসর্গকে গুরুত্ব দিচ্ছে না তা নিয়ে তিনি এবং তার অনেক সহকর্মী হতাশ।

গত প্রায় দুই মাস ধরে তিনি বলে চলেছেন, স্বাদ-গন্ধ কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখলেই মানুষকে দ্রুত আইসোলেশনে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া উচিৎ।

প্রফেসর হপকিন্স জানিয়েছেন, দুই মাস আগে তারা শুধু সন্দেহ করেছিল কিন্তু এখন এই সন্দেহ প্রমাণ হিসেবে বিবেচনার দাবি রাখে।

এদিকে, ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস হাসপাতালের ফিজিওথেরাপিস্ট ড্যানের নাক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হতে শুরু করলে, তিনি ধরেই নিয়েছিলেন তার হে-ফিভার অর্থাৎ ফুলের রেণু থেকে এলার্জি হয়েছে। ২৩ বছরের ওই যুবক পাউরুটির সঙ্গে টমেটো সসে সেদ্ধ শিমের বিচি খাওয়ার সময় কোনো গন্ধ না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তার মধ্যে সন্দেহ ঢুকলো, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা।

জরুরি স্বাস্থ্য হেল্পলাইন ১১১-এ ফোন করলেন তিনি, বললেন- ‘গায়ে জ্বর বা কাশি নেই’ কিছুই নেই তার। তারা বললো, ‘সমস্যা নেই, তুমি কাজে যেতে পারো।’ স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শে ড্যান বাড়িতেই আইসোলেশনে চলে যান। উদ্বেগের কথা শুনে তার ম্যানেজার করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করলেন। কিছুদিন পর ফলাফল আসে, কোভিড-১৯ পজিটিভ।

ড্যানের ভাষ্য, ‘আমি যদি সরকারের কথা শুনে কাজে যাওয়া অব্যাহত রাখতাম আর রোগীদের নিয়ে কাজ করতাম। তাহলে আমার কাছ থেকে অনেকের দেহে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তো।’

স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়া একমাত্র উপসর্গ

প্রফেসর ক্লেয়ার হপকিন্স বলছেন, কোভিডে আক্রান্ত হলে হঠাৎ করেই রোগীর স্বাদ-গন্ধ চলে যেতে পারে। সর্দিতে নাক বন্ধ না হলেও এটা ঘটতে পারে। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শুরুতেই এই উপসর্গ হাজির হতে পারে অথবা অন্য উপসর্গের সঙ্গে সমান্তরালভাবেও এটি দেখা দিতে পারে।

তিনি আরও বলছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বাদ-গন্ধ নষ্ট হওয়াটাই একমাত্র উপসর্গ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। রোগীরা খেতে পারছে না। ৪০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যাচ্ছে।

তবে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিভাগ এখনো খতিয়ে দেখছে স্বাদ-গন্ধ হারানোকে করোনাভাইরাসের উপসর্গের তালিকায় ঢোকানো উচিৎ কিনা। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (সিডিসি) সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ফ্রান্স এরই মধ্যে হঠাৎ স্বাদ-গন্ধ নষ্ট হওয়াকে কোভিডের উপসর্গের তালিকায় জায়গা দিয়েছে।

গবেষণায়ও মিলেছে এর প্রমাণ

কোভিডে আক্রান্তদের সিংহভাগই স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়ার কথা একের পর এক গবেষণায় বলা হয়েছে।

লন্ডনের কিংস কলেজের তৈরি একটি করোনাভাইরাস ট্র্যাকার অ্যাপের মাধ্যমে পাওয়া ফলাফলে দেখা গেছে, এই অ্যাপ ব্যবহারকারিদের মধ্যে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ৫৯ শতাংশই জানিয়েছেন তারা হঠাৎ করেই নাকে গন্ধ পাচ্ছেন না ও জিভে স্বাদ পাচ্ছেন না।

কিংস কলেজ ও ইংল্যান্ডের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ এক গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের অ্যাপ ব্যবহারকারিদের মধ্যে যে প্রায় সাত হাজার লোক পরীক্ষায় কোভিড পজিটিভ হয়েছেন, তাদের ৬৫ শতাংশই বলছেন তাদের স্বাদ-গন্ধ নেবার ক্ষমতা চলে গিয়েছিল।

উপসর্গ নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রফেসর হপকিন্স। চার হাজারেরও বেশি কোভিড রোগীর ওপর চালানো ঐ গবেষণায় দেখা গেছে, রোগীদের গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতা ৮০ শতাংশ কমে গেছে। স্বাদ নেয়ার ক্ষমতা কমে গেছে ৬৯ শতাংশ।

গন্ধ ফিরে পেতে দেড় বছর লাগতে পারে

ব্রিটেনের নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ক্লেয়ার হপকিন্স বলছেন, আক্রান্ত হওয়ার সাত থেকে ১৪ দিনের মধ্যে স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি ফিরে আসছে। কিন্তু ১০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতা চিরতরে চলে যেতে পারে। আবার কখনো কখনো তা ফিরে পেতে দেড় বছর লেগে যেতে পারে।

এ নিয়ে ইটালি, ফ্রান্স, স্পেন এবং বেলজিয়ামের কয়েকজন ডাক্তারের সঙ্গে কাজ করছেন প্রফেসর হপকিন্স। তারা সবাই একমত মাথায় আঘাত না পেয়েও বা সর্দিতে নাক বন্ধ না হলেও কেউ যদি হঠাৎ স্বাদ-গন্ধ হারিয়ে ফেলেন, তাহলে তার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

প্রফেসর হপকিন্স আরও বলেছেন, জ্বরই বরং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার খুব নির্ভরযোগ্য উপসর্গ নয়, নানা কারণে মানুষের জ্বর হতে পারে এবং কোভিডে আক্রান্তদের মধ্যে বড়জোর ৪০ শতাংশের জ্বর হচ্ছে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন