বিলের মাছেই মেলা

  17-01-2018 09:31PM

পিএনএস, তানোর (রাজশাহী) সংবাদদাতা : জেলার তানোর উপজেলা সদরে বিলটির নাম বিলকুমারী। আয়তন ১৫৭ হেক্টর। বর্ষায় বেড়ে হয় সাড়ে ৭০০ হেক্টর। জুলাই মাস থেকে কেউ মাছ ধরে না। ডিসেম্বর মাসে মাছ ধরে উদ্বোধন হয়। এবার জানুয়ারীর মাসে বিলের ধারে মেলা শুরু হয় আজ বুধবার( ১৭ জানুয়ারী)মেলা চলে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত।

তানোর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, দেশে এমন মেলা শুধু তানোরেই হয়। বিলের ধারে ডাকবাংালো মাঠেই বসে এ মেলা।

তানোর মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সাল থেকে মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই বিলের মাঝখানে দুই হেক্টর এলাকা নিয়ে দুটি অভয়াশ্রম করা হয়েছে। বিলকুমারী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ৪৬৮ জন সদস্য এই বিলের দেখভাল করেন। জুলাই মাস থেকে বিলের পুরো দুই কিলোমিটার জলসীমায় কাউকে নামতে দেওয়া হয় না। শুধু ডিসেম্বর মাসের যেকোনো এক দিন আনুষ্ঠানিকভাবে মাছ ধরার উদ্বোধন করা হয়।

বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিলকুমারী বিলের ধারে তানোরের ডাকবাংলা ফুটবল মাঠে মেলা বসেছে। মেলায় বসানো হয়েছে প্রায় ১৫টি আড়ত। জেলেরা বিল থেকে মাছ ধরে আড়তে আসছেন। প্রতিটি আড়ত ঘিরে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সেখানে নিলামে মাছ বিক্রি হচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষ ও স্থানীয় খুচরা বিক্রেতারা মাছ কিনছেন। খুচরা বিক্রেতাদেরও মেলায় মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে।

মেলার মাঠের প্রবেশপথে তৈরি করা হয়েছে ফটক। মাঠ ঘিরে রয়েছে প্যান্ডেল ও এক প্রান্তে মঞ্চ। সকালে ওই মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা: শওকাত আলীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ২৮৫জন মৎস্যজীবিদের পরিচয় কার্ড বিতরণ করা হয়।

মেলায় এবার বড় বোয়াল মাছের দাম উঠছে এক হাজার দুই টাকা কেজি। বিলুপ্তপ্রায় মধু পাবদাও একই দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রথম দিনে সবচেয়ে বেশি উঠেছে বিগ হেড মাছ। রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ মাছ কিনতে মেলায় ভিড় করেছেন।

রাজশাহী শহর থেকে মাছ কিনতে গেছেন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন জোনাল ম্যানেজার এসএম রফিকুল ইসলাম, জিএম রফিকুল আলম চৌধুরী, ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মোস্তাক রহমান। তিনি বলেন, পুকুরের মাছের চেয়ে বিলের মাছের স্বাদ বেশি। তা ছাড়া মেলায় একসঙ্গে অনেক রকমের মাছ পাওয় যায়। এ জন্যই তিনি মেলায় এসেছেন।

বেলা ১১টার দিকে বিলে কয়েক শ নৌকায় করে জেলেদের মাছ শিকার করতে দেখা গেছে। সেখানে উৎসুক জনতার ও মৎস্যপ্রেমী মানুষদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি করিম প্রামানিক বলেন, আগামী জুন মাস পর্যন্ত তাঁরা বিলের দুই কিলোমিটার এলাকায় মাছ শিকার করবেন। গত কয়েক বছরে তাঁদের সমিতির অনেক সদস্যই বেশ স্বাবলম্বী হয়েছেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শরিফ উল আলম বলেন, ২০০৮ সাল থেকে এই মেলা চলছে। বাংলাদেশে আর কোথাও বিলের মাছের এমন মেলা বসে না। এ বছর এই মেলায় ১৪৫ মেট্রিক টন মাছ পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন