কুমিল্লায় শিক্ষকের পিটুনিতে রক্তাক্ত নবম শ্রেণীর ছাত্রী

  21-03-2018 08:36PM

পিএনএস, কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের পিটুনিতে রক্তাক্ত হয়ে জ্ঞান হারালেন নবম শ্রেণীর ছাত্রী। ভয়ে কাঁদলেন ক্লাসের সকল ছাত্রীরা। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার গোমকোট বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মাওঃ নেছার উদ্দিন। তিনি উপজেলার তিলিপ গ্রামের বসিন্দা। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় অভিভাবক ও স্থানীয়রা সহ এক বৈঠকে বসেন। এতে ওই ছাত্রীকে মারধর করার কথা স্বীকার করে শিক্ষক নেছার ক্ষমা ছেয়েছেন।

আহত ছাত্রী ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে মাওঃ নেছার উদ্দিন নবম শ্রেণীর হাদিস বিষয়ে পড়াতে যান। এসময় পূর্বেকার পড়া না পারার অপরাধে ছাত্রী কাউছার আক্তারকে বেত ছুঁড়ে মারে। সেটি অপর এক ছাত্রীর মাথায় গিয়ে পড়ে। এরপর তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে আসন থেকে উঠে এসে ছাত্রী কাউছারকে বেশ কয়েকটি থাপ্পড় মারেন। এতে তার কানের দুলের আঘাতে কানের নিচ থেকে রক্ত পড়তে থাকে এবং অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এসময় তাঁর সহপাঠীরা ভয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলে শিক্ষক নেছার কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেয় ও এ বিষয়ে কোন কথা বললে তাঁদের টিসি দিয়ে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ফুঁসে স্থানীয়রা। অবস্থা বেগতিক দেখে একপর্যায়ে শিক্ষক নেছার উদ্দিন পালিয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নবম শ্রেণীর অন্তত ৫ জন শিক্ষার্থী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমাদের বন্ধু কাউছারকে তিলিপের হুজুর (শিক্ষক নেছার উদ্দিন) বেশ কয়েকটি থাপ্পড় মারার পর সে অজ্ঞান হারালে ভয়ে আমরা হাউমাউ করে কাঁদতে থাকি। এরপর তিনি ক্লাসের দরজা বন্ধ করে দিয়ে এ ঘটনা কাউকে না বলার জন্য আমাদের হুমকি দমকি দেন। এ শিক্ষক তাঁদের নিয়মিত মারধর করেন বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মাওঃ নেছার উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি তাঁকে বেত ছুঁড়ে মেরেছি তার গায়ে না পড়ায় তাঁকে একটি থাপ্পড় মারি এর বাইরে তাঁকে মাধর করা হয়নি। তাঁর মারধরের কারনে ছাত্রী কাউছার অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি তাকে মারধর করা ভুল হয়েছে বলেও জানান।

এ ঘটনায় গতকাল বুধবার স্থানীয়দের সাথে এক বৈঠকে এ প্রতিবেদকসহ উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশ্যে মাদ্রাসার সুপার মো, রফিকুল ইসলাম ওই ছাত্রীকে মারধরের কথা স্বীকার করে বলেন এটা ভুল হয়েছে। আর যেনো কখনো এ রকম ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। এছাড়াও তিনি বলেন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের মারধর খুব বেশী দোষের কিছু না। বিষয়টি এখানে শেষ বলে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।

এরপর মাদ্রাসার সুপার মো আবু হানিফ তাঁর বক্তব্যে কোরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা টেনে বলেন, আল্লাহর নির্দেশ অর্থাৎ কোরআন ও হাদিসের নির্দেশ মতে নামাজ পড়ার জন্য বেত্রাঘাতের নির্দেশ রয়েছে। অতএব তিনি (শিক্ষক নেছার উদ্দিন) হাদিসের পড়া আদায় করার জন্য তাঁকে (ছাত্রী কাউছারকে) মারতে পারেন। এসময় তিনি ওই ছাত্রী শিক্ষকের মারের কারনে নয় খালি পেটে থাকার কারনে জ্ঞান হারিয়েছেন বলেও দাবী করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোনাজের রশিদ বলেন, আমি এ বিষয়ে আপনার কাছ থেকে এইমাত্র জানতে পেরেছি। খোঁজ নিয়ে এ ঘটনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন