ফাল্গুনী হাওয়ায় দুলছে আমের মুকুল

  24-03-2018 12:35PM

পিএনএস, গাইবান্ধা:আমের মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে মুখরিত এখন গাইবান্ধা। গাছে গাছে ফুটছে আমের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে সেই মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। বাতাসে মিশে সৃষ্টি হচ্ছে মৌ মৌ ঘ্রাণ। যে ঘ্রাণ মানুষের মনকে বিমোহিত করে। প্রকৃতির পালাবদলে শীতের শেষে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন ঘটেছে। কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতানে উত্তাল বাসন্তী হাওয়া দোলা দিয়ে নানা ফুলের সঙ্গে আমের মুকুলও সৌরভ ছড়াচ্ছে।

ফাল্গুনি হাওয়ায় থোকায় থোকায় দুলছে আমের মুকুল। শীতের শেষে আম গাছের কচি ডগা ভেদ করে সবুজ পাতার ফাঁকে হলদেটে মুকুলগুচ্ছ যেনো উঁকি দিয়ে হাসছে। বাগানের সুনসান নীরবতা চিরে একটানা গান শোনাচ্ছে মৌমাছি। মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মৌমাছির গুনগুন শব্দে মুখরিত আম বাগান ও উঠানের চারিপাশ। শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্র আমগাছ তার মুকুল নিয়ে হলদে রঙ ধারণ করে সেজেছে এক অপরূপ সাজে। কয়েক দিনের মধ্যে আমের মুকুল পরিণত হবে এক পরিপূর্ণ দানায়।

আমের এই মুকুলে কৃষকের আগামীর স্বপ্ন দোল খাচ্ছে। সেই সোনালি স্বপ্নকে বুকে ধারণ করেই বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত গাইবান্ধার আম বাগান চাষীরা। গাইবান্ধার সর্বত্র আমের মুকুল শোভা ছড়াচ্ছে নিজস্ব মহিমায়। মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে বাগানগুলো। প্রায় ৮০ শতাংশ গাছেই এসেছে মুকুল।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলার আম গাছগুলোতে মুকুল এসেছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে আমের ভালো ফলনের আশা করছেন চাষীরা। আর এ কারণেই বুকভরা আশা নিয়ে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

গাইবান্ধার কৃষকরা জানান, লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই আম বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। বারি আম-৪, বারি আম-৫, আম্রুপালি, ফজলি, খিড়সা, ল্যাংড়া, রাজভোগম গোপালভোগ, মোহনভোগ ও মল্লিকাসহ বিভিন্ন উন্নত জাতের আমের বাগান করেছেন তারা। এছাড়া গেল কয়েক বছরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হাড়ীভাঙ্গা নামে এক জাতের আম। এ আম আশবিহীন ও বেশ সুস্বাদু। এ জাতের আম সর্ব প্রথম রংপুরে উৎপন্ন হলেও সারাদেশে সারা ফেলে এখন গাইবান্ধাতেও এ আমের চাষ হচ্ছে। অনেকে আবার ছোট পরিত্যাক্ত জমি এবং বাড়ির আশেপাশের জায়গাগুলোতে স্বল্প পরিসরে গড়ে তুলছেন আম বাগান।

জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের ফেরদৌস মিয়া জানান, এরই মধ্যে অনেক গাছে মুকুল এসেছে। আশা করা হচ্ছে এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমের বাম্পার ফলন হবে।

তিনি বলেন, ‘কৃষি অফিসের পরামর্শে গাছে মুকুল আসার ১৫-২০ দিন আগেই পুরো গাছ সাইপারম্যাক্সিন ও কার্বারিল গ্রুপের কিটনাশক দিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করে গাছ ধুয়ে দিয়েছি। এতে গাছে বাস করা হপার বা শোষক জাতীয় পোকাসহ অন্যান্য পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। যদি সঠিক সময়ে হপার বা শোষক পোকা দমন করা না যায় তাহলে আমের ফলন কমে যায়।’

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার আম চাষী মোসলেম জানান, তিনিও পুকুর পাড়ে আম বাগান লাগিয়েছেন ভালো মুকুল দেখা যাচ্ছে। এ মুকুলের পর্যাপ্ত পরিচর্যা সে করছেন।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের উপ-পরিচালক আ খ ম রুহুল আমিন জানান, ‘আম চাষে কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। আম গাছে মুকুল আসার আগে এবং আমের গুটি হবার পর নিয়মিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া জৈব বালাইনাশক ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে আমসহ অন্যান্য ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় খুব একটা কিটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। তবে ছত্রাকজনিত রোগে আমের মুকুল-ফুল-গুটি আক্রান্ত হতে পারে।এ জন্য তিনি কৃষকদের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক দুই গ্রাম অথবা ইমিডাক্লোরিড গ্রুপের দানাদার প্রতি লিটার পানিতে দশমিক দুই গ্রাম, তরল দশমিক ২৫ মিলিলিটার ও সাইপারম্যাক্সিন গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আবার মুকুল গুটিতে রূপান্তর হলে একই মাত্রায় দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে। এছাড়া পাউডারি মিলডিউ নামের এক প্রকার ছত্রাকজনিত রোগেও আমের ফলনের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।’ গাছে ছত্রাকজনিত রোগের আক্রমণ দেখা দিলে অবশ্যই সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর দুইবার স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন