রামপালে এনজিও চলন্তিকার নতুন প্রতারণার ফাঁদ, সর্বশান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার গ্রাহক

  23-04-2018 07:59PM

পিএনএস, স্টাফ রিপোর্টার (বাগেরহাট) : রামপালে চলন্তিকা যুব সোসাইটি নামের একটি এনজিও এর বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা প্রতারনার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ প্রতারণার ঘটনায় রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পাল ও রামপাল থানার ওসি বরাবর পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। হাজার হাজার গ্রাহক তাদের সহায় সম্বল বিক্রি করে অধিক মুনাফার আসায় ওই এনজিও চলন্তিকায় সঞ্চয় করেন।

ক্ষতিগ্রস্থ সর্বশান্ত হওয়া গ্রাহকদের অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৬ সালে উপজেলার সদর, ফয়লাহাট, গিলাতলা, পেড়িখালীসহ বেশ কিছু স্থানে চলন্তিকা যুব সোসাইটি নামের এনজিওটি কার্যক্রম শুরু করে। এদের ওইসব শাখায় দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে নওশের আলী, মানছুর শেখ, সন্তোষ মিস্ত্রি, কিংকর দেব, আতাহার আলী, ইউসুফ আলী, বিমান কুন্ডু, খালিদ হোসেন প্রমুখ। প্রায় এক মাস পূর্বে স্থানীয় শাখা ব্যবস্থাপক ও প্রতিনিধিরা কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে অফিস বন্ধ করে দেন। এরপর গ্রাহকরা ওই সব শাখা ব্যবস্থাপকদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা কোন সদুত্তোর না দিয়ে নানান তাল বাহানা করে ঘোরাতে থাকেন। অভিযোগ কারীদের অভিযোগ থেকে আরও জানা গেছে ছয় মাস পূর্বে ওই এনজিও টি বন্ধ হলেও কৌশলে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিতে থাকেন শাখা ব্যবস্থাপক ও মাঠ কর্মীরা।

গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া মাসিক, সাপ্তাহিক ও দৈনিক সঞ্চয়ের বেশ কয়েক কোটি টাকা এনজিওটির কর্ণধর চেয়ারম্যান, পরিচালক ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, একই চলন্তিকা যুব সোসাইটির একাধীক বহি তৈরি করে প্রতারক চক্র এখনও পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ের গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। দেখা গেছে, চলন্তিকা যুব সোসাইটি নামে প্রথমে একটি বহি খোলা হয়। এরপর চলন্তিকা সঞ্চয় ও ঋণ পাশ বই, সফল সঞ্চয় কার্যক্রম-সফল এবং প্রমিনেন্ট সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামে পৃথক তিনটি পাশ বইয়ে স্বাক্ষর করে এখনও পর্যন্ত প্রতারক চক্রটি কার্যক্রম অব্যহত রেখেছেন। শাখা ব্যবস্থাপক ও মাঠ কর্মীদের মধ্যে অধিকাংশ কৌশলে পালিয়ে বেড়ালেও বিমান কুন্ডু নামের এক কর্মকর্তা স্থাণীয় প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করে বহাল তবিয়াতে কার্যক্রম পরিচালনা করার সত্যতা পাওয়া গেছে।

শ্রীফলতলার গ্রাহক তুলসী অধিকারী ও তার স্ত্রী মৌসুমী অধিকারী, নাঈমা সুলতানা, হামিদা বেগমসহ বেশ কয়েকজনের উল্লেখিত ওই সব পাশ বইতে স্বাক্ষর করে সঞ্চয় ও কিস্তির টাকা গ্রহণ করতে দেখা যায়। গ্রাহকরা জানান, বিমান কুন্ডু বলেছেন চলন্তিকার টাকা মার গেলে বা খোয়া গেলে আমি তোমাদের টাকা ফেরত দেবো। অভিযোগের সত্যতা জানার জন্য একাধীকবার বিমান কুন্ডুর মুখোমুখি হলে তিনি প্রথমে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, চলন্তিকা এনজিও থেকে এক বছরের বেশী আগে চাকুরী ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু ওই তিনটি বইয়ে স্বাক্ষর করে সঞ্চয় ও কিস্তির টাকা উত্তোলনের বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, এটা আমার নিজস্ব তহবিল থেকে তাদের ঋণ দিয়েছি।

গত শনিবার সকাল সাড়ে সাত টায় শ্রীফলতলা আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে কিস্তি আদায় কালে বিমান কুন্ডুর মুখামুখি হয়ে চলন্তিকার বইয়ে কেন লেনদেন করছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এর কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি। বরং উল্টো সংবাদ কর্মীদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে বলেন, এখনই তোদের র্যাব দিয়ে ধরিয়ে দিবো। তোরা ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা চেয়েছিস আমার কাছে তোদের কে আছে ডাক। এমন কথা বলে ক্যামেরা কেড়ে নিতে উদ্দত হন। এসময় তার সাথে থাকা আনিচ শেখ ও জাহাঙ্গীর শেখ একইভাবে সাংবাদিকদের লাঞ্চিত করেন। এসময় জনৈক স্থানীয় এক নেতা সাংবাদিকদের সব জায়গায় সাংবাদিকতা না করার জন্য সতর্ক করেন। তাৎক্ষনিকভাবে সাংবাদিকরা বিষয়টি রামপাল থানার ওসিকে অবহিত করেন। এরপর রামপাল থানার ওসি শেখ লুৎফর রহমান বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন। এরপর বিভিন্ন কৌশলে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সাংবাদিকতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন।

এনজিওটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খবিরুজ্জামান, পরিচালক আলহাজ্ব সরোয়ার হোসাইন, স্থানীয় শাখা ব্যবস্থাপক নওশের আলী, সন্তোষ মিস্ত্রি, কিংকর দেব, মানছুর শেখসহ সকলের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। একমাত্র কিংকর দেবের ব্যবহৃত মুঠোফোনটি খোলা পাওয়া গেলে তিনি বলেন, কর্মকর্তারা সব পালিয়ে গেছেন এবং তাদের ফোন নম্বর ও বন্ধ রয়েছে। আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি কিন্তু তারা পলাতক থাকায় কারো কোন খোজ পাচ্ছি না। রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পাল এবং রামপাল থানার ওসি শেখ লৎফর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন