বগুড়ায় শিশু সুমির হাত বিচ্ছিন্ন, টাকার বিনিময়ে দফারফার চেষ্টা

  23-04-2018 08:51PM

পিএনএস, বগুড়া প্রতিনিধি : পাথর বোঝাই ট্রাকের চাপায় হাত বিচ্ছিন্ন শিশু সুমির (৮) আশঙ্কামুক্ত নয়। মাথার আঘাত গুরুতর। বগুড়ার শেরপুরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে ট্রাক চাপায় ব্রাক স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী সুমির একটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আরেক হাতের আঙ্গুলও ভেঙে গেছে। অভিযোগ উঠেছে বিষয়টি টাকার বিনিময়ে দফারফার চেষ্টা করছে থানা পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী শ্রমিক নেতা। শিশুটি বর্তমানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছে। এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কেউ ওই শিশুটির খোঁজ নেননি বলে জানা গেছে।

এদিকে, টাকার বিনিময়ে দফারফার বিষয়টি অস্বীকার করে শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আহত শিশুটির চিকিৎসা খরচ বাবদ কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেছে ঘাতক ট্রাকের মালিক পক্ষ। সেই টাকা স্থানীয় এক শ্রমিক নেতাকে দিয়েছে। বিষয়টি মৌখিকভাবে জেনেছি, টাকার বিনিময়ে দফারফার কোনো সুযোগ নেই। মামলা হয়েছে, ঘাতক ট্রাকও আটক করেছি। তবে ট্রাকের চালক ও হেলপারকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুপুরে শেরপুরের শেরুয়া বটতলা এলাকায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে শিশু সুমিকে চাপা দেয় একটি পাথর বোঝাই ট্রাক। আহত শিশুকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যায় স্থানীয় জনতা। দুর্ঘটনার সময় ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় রুপান্তরিত ও ট্রমা সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। হাসপাতাল চত্বরে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান, বগুড়া বিএমএর সভাপতি ডা. মোস্তফা আলম নান্নু, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রীর উদ্বোধনী বক্তব্যের সময় আহত শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটাছুটি করলে বিষয়টি কারো নজরে আসেনি। হাসপাতালে চিকিৎসক পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। ব্যর্থ হয়ে শিশু সুমিকে বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিন বিকেলে শেরপুর উপজেলার মহিপুর স্কুল মাঠে উপজেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তবুও তার কানে শিশুটির খবর পৌছেনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মন্ত্রীর আগমণে হাসপাতালের চিকিৎসক ও ভিআইপি ডিউটিতে মহাব্যস্ত ছিল পুলিশ। সড়কে যানবাহন চলাচলে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে নেই ব্যবস্থা। যেকারণে সড়ক দুর্ঘটনায় হাত হারালো ব্রাক স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী সুমি। হাসপাতালে চিকিৎসাধিন সুমির অবস্থা আশংকাজনক।

জানা গেছে, রোববার দুপুরে শেরপুর উপজেলার ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরুয়া বটতলা এলাকায় সড়ক পারাপারের সময় ঢাকাগামী পাথর বোঝাই একটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে এসে শিশু সুমিকে চাপা দেয়। সুমি উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামের দুলাল খানের মেয়ে।

শেরপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, সুমি তার মা মরিয়ম বেগমের সঙ্গে দাওয়াত খেতে যাচ্ছিল। শেরুয়া বটতলা এলাকায় মহাসড়ক পার হওয়ার সময় ঢাকাগামী পাথর বোঝাই একটি ট্রাক তাকে চাপা দেয়। এতে তার বাম হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ডান হাতও আঘাত প্রাপ্ত হয়। তার অবস্থার অবনতি ঘটলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘাতক ট্রাকটি আটক করা হয়েছে।

ওসি জানান, ট্রাকের চালক স্থানীয় এক শ্রমিক নেতাকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে সেই চালক আরো ১০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়েছে শিশুটির চিকিৎসার জন্য।

শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, শিশুটির অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়। মাথার আঘাত গুরুতর। একটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আরেক হাতের আঙ্গুল ভেঙে গেছে। এখানে ভর্তি করার সময় শিশুটির জ্ঞান ছিলো না। বর্তমানে তার জ্ঞান ফিরেছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন