গ্রাম পুলিশের মানবেতর জীবন-যাপন

  16-05-2018 03:33PM

পিএনএস, গাইবান্ধা প্রতিনিধি: ২৪ ঘন্টা গ্রামীণপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতা ও সরকারের উন্নয়নে অবদান রাখলেও ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেনি গ্রাম পুলিশদের। যখনই ইউনিয়নের কোথাও সমস্যা দেখা দেয় তখনি ছুটে যেতে হয় তাদের। কাজ হিসেবে পর্যাপ্ত বেতন ভাতাদিসহ অন্যান্য কোন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না তারা। ফলে স্বল্প বেতনে গ্রাম পুলিশরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

গাইবান্ধা গ্রাম পুলিশ কর্মচারি ইউনিয়ন সুত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশ থাকেন ১০ জন করে। এদের মধ্যে দফাদার পদে থাকেন একজন ও নয়জন থাকেন মহল্লাদার। বর্তমানে দফাদাররা মাসিক তিন হাজার ৪০০ টাকা ও মহল্লাদাররা তিন হাজার টাকা করে বেতন পাচ্ছেন। এই বেতনের অর্ধেক দিচ্ছে সরকার ও অর্ধেক দিচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। ঈদ ও পূজায় বোনাস ছাড়া চাকরিকালীন সময়ে এর বাহিরে আর কোন অর্থ বা কোন সহযোগিতা পান না গ্রাম পুলিশরা। ফলে এই সামান্য বেতনে কষ্ট করে সংসার চালাতে হচ্ছে জেলার ৮২০ জন গ্রাম পুলিশকে। গত বছরের শেষের দিক থেকে অবসরপ্রাপ্ত দফাদাররা এককালীন ৬০ হাজার টাকা ও মহল্লাদাররা ৫০ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন।

সুত্রটি আরও জানায়, ইউপি সচিবকে জন্ম-মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করে প্রদান করা, ইউপি ভবন ও বিভিন্ন সড়কে রাত্রিকালীন ডিউটি, গ্রাম আদালত, গ্রামে কোন সংস্থার কর্মসূচি চলাকালীন ও সড়ক দুর্ঘটনার স্থানে তাৎক্ষণিক দায়িত্ব পালন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাল্যবিয়ে আয়োজনের তথ্য প্রদান, কোন অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর সংবাদ থানায় জানানো, মাদকদ্রব্য ও জুয়া প্রতিরোধে অভিযান চালনা, ট্রেন ও যানবাহনের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন সময়ে রেললাইন ও সড়ক পাহারা দেওয়া, নির্বাচনকালীন, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও ছিনতাইপ্রবন এলাকায় দায়িত্ব পালন এবং মানুষদের মধ্যে সংঘর্ষ রোধে ভূমিকা রাখাসহ আরও অনেক কাজে গ্রাম পুলিশদের দায়িত্ব পালন করতে হয়।

সাঘাটা উপজেলার পদুমশহর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ হিরালাল রবিদাস বলেন, তিন ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ যোগাতে গিয়ে আমাদের খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। শুধু ঈদ ও পূজা ছাড়া আমাদের আর নেই কোন বোনাস। ফলে স্ত্রী-সন্তানদের অনেক আশাই অপূর্ণ থাকছে। সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ রফিকুল ইসলাম রবি বলেন, সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের তথ্য সংগ্রহ করে প্রদান করাসহ গ্রামে গ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অবদান রাখলেও আমাদের দিকে দেখার কেউ নেই। আমরা যে টাকা বেতন পাই তা দিয়ে সংসারই চলে না। আজকের দিনে এই তিন হাজার টাকা দিয়ে কিছুই হয়না।
গ্রাম পুলিশ কর্মচারি ইউনিয়ন গাইবান্ধা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, কোথায় কখন কি ঘটে এটা ভেবে আমরা বাড়ী ফিরেও শান্তিতে ঘুমাতে পারি না। কোথাও কোন সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গেই ছুটতে হয়। বলা চলে ২৪ ঘন্টাই আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এতো সেবা দেওয়ার পরও আমাদের বেতন অতি সামান্য। তাই আমাদের পরিবার-পরিজনের কথা চিন্তা করে সরকারি চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারির ন্যায় সমস্কেল প্রদান, রেশন ব্যবস্থা চালু ও চাকরিকালীন সময়ে কেউ মারা গেলে তার পরিবারকেও একাকালীন টাকা দেওয়ার দাবি জানান এই গ্রাম পুলিশ নেতা।

পিএনএস/মো. শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন