শহর রক্ষা বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে মৌলভীবাজার শহরে

  16-06-2018 06:07PM

পিএনএস ডেস্ক : মৌলভীবাজার জেলা শহরের পশ্চিমবাজার এলাকার দূর্গা বাড়ির পিছনের বন্যা প্রতিরক্ষা দেয়াল উপচে মনু নদের পানি দ্রুত বেগে শহরে ঢুকছে। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বন্যার কারণে আজ খুশির ঈদের দিনে মানুষের চেহারায় বিষাদের ছায়া। সারা জেলায় বন্যার স্রোতে ও পানিতে ডুবে ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। জেলা শহর রক্ষার বন্যা প্রতিরক্ষা দেয়ালের ওপরে বালু ভর্তি বস্তা দিয়ে শহরে পানি প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রায় টানা অর্ধ কিলোমিটার স্থানে বস্তার ফাঁক দিয়ে অবিরাম পানি শহরে দিকে গড়িয়ে পড়ছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরবাসীকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন থেকে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ ও প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনটিটিউটের অধ্যক্ষদের চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত রাখতে। সেনাবাহিনীর একটি প্রকৌশল দল শহর প্রতিরক্ষা দেয়াল রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কাজ করছেন।

জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম জানান, জেলার সব ক’টি নদীতে তো পানি বাড়ছেই। চারটি উপজেলায়ই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতি যাতে কম হয় তার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছি। জেলা শহরের বন্য ঠেকানোর জন্য সব ধরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদেরকে ৬৮ সদস্যের সেনাবাহিনীর একটি টিম সহযোগিতা দিচ্ছে। মৌলভীবাজার শহরে সেনাবাহিনী টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন মেজর। এছাড়া কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলায় সেনাবাহিনীর আরো তিনটি টিম পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার কাজ ও বন্যার্তদের কাছে শুকনো খাবার পৌঁছানোর কাজ করছে।

গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে আলীনগর, শমশেরনগর, পতনউষার, কমলগঞ্জ পৌরসভার একাংশ ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব গ্রামের উঠানে কোমর পানি ও বসত ঘরে ২ ফুট পরিমাণ পানি থাকায় বেশির ভাগ পানিবন্দী মানুষজন আজ শনিবার ঈদুল ফিতরের নামাজও আদায় করতে পারেননি। উদ্ধারের জন্য কোন নৌকা না থাকায় ও পানির স্রোতের কারণে বাবা ছেলেসহ ৬ জন বন্যার পানির স্রোতে ভেসে গেছে। এদের মধ্যে আজ শনিবার সকালে বাবা ও ছেলেসহ ৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। বাকি ৩ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

পানির স্রোতে ভেসে যান ইসলামপুর ইউনিয়নের সাত্তার মিয়া (৫৫) ও তার ছেলে করিম মিয়া (২০)। ঈদের দিন শনিবার সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে শমশেরনগর শিংরাউলী পানি অতিক্রম করে সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় জামাল মিয়া (৫৪) নামের এক মানসিক প্রতিবন্দী ভেসে যান। আজ শনিবার সকাল ৮টায় আলীনগর ইউনিয়নের হালিমা বাজার এলাকায় পানির মাঝে সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় স্রোতের টানে ভেসে যান সেলিম মিয়া (৪০) নামের এক প্ররিবহন শ্রমিক।

অন্যদিকে শনিবার সকালে কমলগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়কের মান্দারীবন এলাকায় সড়কে উঠা পানির মাঝ দিয়ে চলাচলের সময় গ্রামে যাত্রীসহ একটি সিএনজি অটো পানিতে ভেসে যায়। চালকসহ ৫ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা গেলেও অজ্ঞাত পরিচয়ের এক যাত্রীকে এখন ও উদ্ধার করা যায়নি।

এছাড়া শুক্রবার সন্ধ্যায় আলীনগর ইউনিয়নে লাঘাটা ছড়ায় পানিতে ভেসে গেছেন অজ্ঞাত পরিচয়ের আরেক নারী।

শনিবার সকালে আদমপুর ইউনিয়নে নিখোঁজ বাবা সাত্তার মিয়া ও তার ছেলে করিম মিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়।

অপরদিকে শমশেরনগর ইউনিয়নে জামাল মিয়া নামের মানসিক প্রতিবন্দীর লাশও উদ্ধার করা হয়।

রাজনগর উপজেলার করাইয়া গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে ইমন নামে দশ বছরের একটি শিশু মৃত্যু হয়েছে। কোনাগাও গ্রামে এক মহিলা পানির স্রোতে ভেসে গেছেন। কমারচাক ও মনসুরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, পানিবন্দী মানুষ আহাজারি করছেন। বাড়িঘরে চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। কিছু মানুষ আশ্রয় নিয়েছে নদী পাড়ের প্রতিরক্ষা বাধে খোলা আকাশের নিচে। সেনাবাহিনী সেখান থেকে তাদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিচ্ছে। বন্যা দূর্গতদের মধ্যে খাদ্য ও পানযোগ্য পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মোহাম্মদ গোলাম রাব্বী জানান, কুলাউড়ায় সেনাবাহিনীর ৬০ সদস্যের একটি টিম পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে ঠাঁই দিচ্ছে।

মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, প্রতিরক্ষা দেয়াল উপচে যে পানি শহরে ঢুকছে সেটা নিয়ে আমি তেমন ভয়ে নেই। ভয়ে আছি পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের সৈযারপুর এলাকার মাটির বাঁধ নিয়ে। এই এলাকায় কয়েক স্থানে বাঁধ চুঁইয়ে পানি ঢুকছিলো। সেগুলো বালুর বস্তা দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যে গতিতে মনু নদে পানি বাড়ছে কখন কি হয় বলা যায় না। শহর ডুবলে শহরে বসবাসকারী লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী শনিবার বেলা সাড়ে চারটায় জানান, মনু নদ মৌলভীবাজার শহরের কাছে চাঁদনীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু নদের পানি যে নদীতে গিয়ে পড়ে সেই কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১ মিটার উপরে রয়েছে। শহর প্রতিরক্ষা দেয়াল আটকানোর জন্য ইতিমধ্যে ৩০ হাজার বালু ভর্তি বস্তা দেয়ালের পাশে এবং উপরে দেওয়া হয়েছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন