পিএনএস, লালমনিরহাট :বিদ্যুতের খুঁটি, লাইন, মিটার ও সংযোগ কোনটাই নাই লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বহর গ্রামের একটি অংশে। বিদ্যুৎ ব্যবহার ছাড়াই ওই গ্রামের ৪৩ জন ব্যক্তির নামে ২ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৯ টাকার বিদ্যুৎ বিল এসেছে।
ওই সব ভূয়া বিদ্যুৎ বিল বাতিল করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত মঙ্গলবার বিকেলে মহিষাশ্বহর বাজরে বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষুপ্ত এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানান, জেলার আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বহর গ্রামের বিদ্যুৎবিহীন ৩৩ পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ৩ বছর আগে আবেদন করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কালীগঞ্জ শাখায়। আবেদনের পর স্থানীয় বিদ্যুতের দালাল সাইফুল ইসলাম গ্রাহকদের কাছ থেকে মিটার প্রতি ১২/১৫ হাজার টাকা বুঝে নেন। তাদের ৩ মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন ওই দালাল।
কিন্তু ৩ বছর তিন মাস চলে যাবার পরও খুঁটি, লাইন বা মিটার কোনটাই পাননি তারা। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বেসরকারি খাতে চলে যায় এবং বিধি মতে পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় তাদের নতুন সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতেই বিপাকে পড়েন বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা ও দালাল চক্রটি।
এদিকে গ্রাহকদের চাপের মুখে গত বছর ওই গ্রামের ৩৩টি পরিবারের জন্য ৩৩টি মিটার পাঠান দালাল সাইফুল ইসলাম। খুঁটি বা লাইন না পেয়ে গ্রাহকরা মিটারগুলো বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এরই মধ্যে গত জুন মাসে ওই গ্রামের ৪৩টি পরিবারের প্রত্যেকের নামে ৫ হাজার ৯৩ টাকা হারে ২ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৯ টাকার বিদ্যুৎ বিল পাঠায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিবিডিবি)।
বিদ্যুৎ বিল দেখে হতভম্ব পরিবারগুলো বিলের কাগজপত্র নিয়ে কালীগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিস গিয়ে এর সমাধান দাবি করলেও কোনো কাজ হয়নি। তাই এসব ভুয়া বিল বাতিল করে দ্রুত লাইন সংযোগ করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।
ওই গ্রামের লুৎফর রহমান ও জসির মিয়া জানান, তিন মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে তার প্রতিবেশী বিদ্যুৎতের দালাল সাইফুল ইসলাম তাদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে নেন। বিদ্যুৎতের জন্য কেউ কেউ গরু-ছাগল বিক্রি করেও দালালকে টাকা দিয়েছিল। কিন্তু ৩ বছর পার হলেও তাদের ঘরে বিদ্যুৎ আসেনি। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না পেলেও ৫ হাজার ৯৩ টাকার বিদ্যুৎ বিল এসেছে তাদের নামে। বিল পরিশোধ না করলে মামলায় জড়ানোর আতঙ্কে ভুগছেন তারা।
মহিষাশ্বহর গ্রামের আব্দুল হাই, মতিন, জহুরুল, মজমুল ও বাবুল জানান, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সবাই আবেদন করে ঘুষ দিলেও তারা আবেদন করেননি। অথচ তাদের ১০ জনের নামেও ৫ হাজার ৯৩ টাকা হারে বিদ্যুৎ বিলেএসেছে। ব্যবহার না করেও বিদ্যুৎ এ ভূয়া বিল বাতিল করে দ্রুত সংযোগ ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।
ওই এলাকার বিদ্যুৎতের দালাল সাইফুল ইসলাম জানান, আবেদনকারীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা বিদ্যুৎ অফিসের ঠিকাদার রেজাউলের মাধ্যমে অফিসে জমা দিয়েছেন। তবে সংযোগ না দেয়া সত্ত্বেও বিল আসায় তিনিও হতভম্ব হয়েছেন। তারও জানা নেই বিলগুলো কেন পাঠানো হয়েছে বা পরিশোধ না হলে কি হবে এসব পরিবারের।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কালীগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী শাহানুর ইসলাম জানান, এসব গ্রাহকের নামে ১৫ সালের জানুয়ারি মাসে কাগজ কলমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেখানোর কারণে তাদের নামে নূন্যতম হিসাব অনুযায়ী বিল পৌঁছেছে, যদিও বাস্তবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু তারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করেনি তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তাদের এসব বিল মওকুফ করা হতে পারে।
তবে এসব গ্রাহক আদিতমারী উপজেলা তথা পল্লী বিদ্যুৎ অঞ্চলের আওতায় পড়ায় তাদের পিবিডিবির সংযোগ দেয়ার কোনো নিয়ম নেই বলেও জানান তিনি।
পিএনএস/এএ
বিদ্যুতের খুঁটি, লাইন, মিটার ও সংযোগ না থাকলেও বিল ২ লাখ টাকা!
12-07-2018 11:21AM