পাইকগাছার গাংরখী-শালুকখালী নদী উন্মুক্ত হচ্ছে

  12-07-2018 04:42PM

পিএনএস, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে খুলনার পাইকগাছা-কয়রার সীমান্তবর্তী আলোচিত গাংরখী-শালুকখালী নদী উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৪৮তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোঃ তাজুল ইসলাম মিয়া স্বাক্ষরিত স্বারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, দু’উপজেলার গড়ইখালী ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ৬০ একর আয়তনের ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ গাংরখী-শালুকখালী নদী গড়ইখালী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি কামরুল ইসলাম গাইন ইজারা নিয়ে দীর্ঘদিন মৎস্য চাষ করে আসছিল। এলাকাবাসীর অভিযোগ নদীর বিভিন্ন স্থানে নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। ফলে যার বিরুপ প্রভাব পড়ে এলাকার কৃষি উৎপাদনের উপর। পাশাপাশি যেসব পরিবার নদীর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো অসহায় হয়ে পড়েন এমন অসংখ্য পরিবার। ফলে এলাকাবাসী নদীটি অবমুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন দাবী জানিয়ে আসছিল।

এ নিয়ে স্থানীয়রা মানববন্ধন ও একাধিক প্রতিবাদ সমাবেশও করেন। এলাকাবাসীর দাবীর সাথে একমতপোষণ করে ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য অ্যাড. শেখ নূরুল হক নদীটি অবমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি এলাকার ৬টি নদী অবমুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ভূমি মন্ত্রণালয় বরাবর ডিও লেটার প্রদান করেন। যার প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের ২৯তম সভায় এলাকার পোল্ডার অভ্যান্তরে স্লুইচ গেইট যুক্ত মরা কুচিয়া নদী, নড়া নদী, গাছুয়া নদী, উলুবুনিয়া নদী, ঘোষখালী নদী ও শালিকখালী (গাংরখী) নদী উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সংসদ সদস্যের সুপারিশের আলোকে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তগৃহিত জলমহলগুলো লীজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে উন্মুক্ত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। মন্ত্রাণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৪২৪ সনের ৩০ চৈত্র ইজারার মেয়াদ শেষ হলে সংসদ সদস্য মোঃ নূরুল হক চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে নিজেই নদীতে নেমে নদীর সকল অবৈধ নেট-পাটা অপসারণ করে আলোচিত গাংরখী-শালুকখালী নদী অবমুক্ত ঘোষণা করেন।

এদিকে অবমুক্ত করার আড়াই মাস যেতে না যেতেই পুনরায় নদীটি ইজারা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠে। গত ১৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান সরকারি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে নদীটি পুনরায় ইজারা দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ বরাবর ডিও লেটার প্রদান করেন। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তোড়পাড় সৃষ্টি হয়। যদিও উপদেষ্টার আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা কালীন ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয় বরাবর ইজারা প্রদান সংক্রান্ত অনুরূপ আরেকটি ডিও লেটার প্রদান করেন।

এদিকে ইজারা সংক্রান্ত পূর্বের দেওয়া ডিও লেটার কার্যকার না করার অনুরোধ জানিয়ে গত ১০ জুলাই সর্বশেষ আরেকটি ডিও পত্র দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি। ডিও পত্রে মন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী গাংরখী-শালুকখালী বদ্ধ নদীর দুই পারে ২০ হাজার মানুষের বসবাস। নদী সংলগ্ন এলাকায় ১০ হাজার বিঘা ফসলী জমি রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভায় জলমহলটি উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। তাছাড়া দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী জনগোষ্ঠীর বসবাস ও ফসল উৎপাদন এবং পানি নিষ্কাসনের স্বার্থে জলমহলের স্লুইচ গেইটটি উন্মুক্ত রাখা বিশেষ প্রয়োজন। এমতবস্থায় জলমহলটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী বিশেষ অনুরোধ করেন।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন