জীবন বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান সাংবাদিক ইমরান

  10-08-2018 05:49PM

পিএনএস, তানোর (রাজশাহী) সংবাদদাতা : একদিন যে নিজেই অন্যের সংবাদ লিখতেন আজ তিনি নিজেই সংবাদ হয়ে গেলেন। তিনি কখনও ভাবতে পারেননি একদিন নিজেই সংবাদ শিরোনাম হবেন।

শরীরজুড়ে থাকা ক্ষতচিহ্নও শুকাচ্ছেনা। টানা ব্যয়বহুল চিকিৎসায় সর্বশান্ত পরিবার। অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ জেলার তানোরের সাংবাদিক ইমরান হোসাইনের। বাধ্য হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে এখন বাড়িতেই বিনা চিকিৎসায় পড়ে রয়েছেন এই সাংবাদিক। তার চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছেন এই সাংবাদিক ও তার পরিবার।

ইমরানের বাম চোখ, হাত ও পা অচল হয়ে গেছে। এখন উঠে দাঁড়াতে পারছেন না। হাঁটাচলাও করতে পারেন না। তার সময় কাঁটছে শুয়ে ও বসে থেকে।

তানোর পৌর এলাকার জিওলচাঁনপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে ইমরান। তিনি দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক করতোয়া ও রাজশাহী থেকে প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক সোনারদেশ পত্রিকার তানোর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বপালন করছিলেন। পেশাগত দায়িত্বপালন শেষে গত বছরের ২০ সেপ্টম্বর সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে এক চায়ের দোকানে বসে ছিলেন ইমরান। এ সময়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে ছোট ভাই মওদুদ আহমেদ তার উপরে হামলা চালায়।

হাতুড়ি দিয়ে মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাত করে তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। ওই দিনই মুর্মূর্ষু ইমরানকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন স্বজনরা। দীর্ঘ অস্ত্রপাচার শেষে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয় তাকে। সেখানে ১১ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর জ্ঞান ফেরে তার। পরে দেড় মাস রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

চিকিৎসক চিকিৎসা চালিয়ে যাবার পরামর্শ দিলেও শেষ পর্যন্ত অর্থাভাবে তাকে বাড়ি নিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন। এখন বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই রয়েছেন এই সাংবাদিক।

ইমরান হোসেন তানোর পৌর যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। সর্বশেষ তিনি তানোর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দাায়িত্বপালন করছিলেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন ইমরান। তার এ দশায় চরম কষ্টে দিন কাটছে চার সদস্যের পরিবারের। বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে তার দুই সন্তানের লেখাপড়া।

সাংবাদিক ইমরান হোসাইন এই প্রতিবেদককে জানান, ওই হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মমতাজুল হক তাঁর চিকিৎসা করেছেন। তিনি এক মাস পরপর আবার চিকিৎসার জন্য যেতে বললেও টাকার অভাবে মাস পেরিয়ে গেলেও যেতে পারছেন না। তাছাড়াও এক চোখের সমস্যায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক দ্রুত বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যথায় চোখটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। বর্তমানে তার চিকিৎসা ও পরিবারের খরচ আসছে অন্যের সাহায্যে।

ইমরানের স্ত্রী তহমিনা বেগম জানান, কিছু জমি ও দুটি গরু বিক্রি করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটানো হয়েছে। পরে তৎকালীন ইউএনও মুহা. শওকাত আলীর অনুদান ও কয়েকজন মানুষ ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা দেন। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার কারণে সে টাকাও খরচ হয়ে গেছে। সরকারি হাসপাতালে থাকলেও প্রায় সব ওষুধ কিনতে হয়েছে। আর ওষুধ ও ইনজেকশনগুলো ছিল ব্যয়বহুল।

তিনি জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন ইমরান। কিন্ত আয় বন্ধ হওয়ার পর সংসারে তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ইমরানের চিকিৎসা করার মতো আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই। একমাত্র ছেলে নাগিব ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও মেয়ে বুশরা প্রাক-প্রাথমিকে শিশু শ্রেণিতে পড়ে। তাদের লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম। স্বামীর চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান তহমিনা বেগম।

এদিকে, ঘটনার পর (২৫ সেপ্টম্বর/১৭) ইমরানের স্ত্রী তহমিনা বাদী হয়ে ভাসুর মওদুদকে আসামি করে তানোর থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। গত ২৮ মার্চ মওদুদকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীণ তানোর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম। ঘটনার পর থেকেই আসামী মওদুদ পলাতক রয়েছে।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন