ঝালকাঠির ফেসবুক প্রতারক মনিরের বিরুদ্ধে ঢাকায় সাইবার আদালতে মামলা

  15-04-2019 04:48PM

পিএনএস, ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ঝালকাঠির কুক্ষাত সাইবার সন্ত্রাসী ফেসবুক প্রতারক মনিরের বিরুদ্ধে ঢাকায় সাইবার আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে।১১ এপ্রিল ঢাকার সাইবার ট্টাইব্যুনালে মনিরকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫-১ (ক) এবং ২৯ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন শহরের বিশিষ্ট ঠিকাদার ছানাউল হক সানু গাজী।

নাম তার মনির। অনেকে কোরিয়া মনির আবার কেউ পাগল মনির হিসেবেও চেনেন। শহরের পূর্বচাঁদকাঠি এলাকার জেলেপাড়া খালপাড়ের কদম আলী লাহাড়ীর দ্বিতীয় সংসারের পুত্র। কিছুদিন কোরিয়ায় ছিল। ফেসবুক সন্ত্রাসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সেখান থেকে জেল খেটে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাকে। গামছা-জাল বিক্রি করা তৈয়বের ভাইজি জামাই (জালে হাপ বাজছে নামে অনেকেই তাকে চিনেন)। লাল ওরফে ঝোলা কারিকরের মেয়ে লিজাকে বিয়ে করার পর ঔরসে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। খালি হাতে বাড়ি ফিরে মনির প্রায়ই কলেজ খেয়াঘাট নদীর পাড়ে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় পড়ে থাকত। এরপর শুরু করে বিনা চালানে ফেসবুক প্রতারণা ব্যবসার প্রক্রিয়া। কোমরে কম হলেও দেড় থেকে দু’শ পেনড্রাইভ নিয়ে পুলিশ অফিস, ডিসি অফিস, হাসপাতাল এলাকায় মোবাইল নিয়ে ঘুরঘুর করেন মনির। প্রশাসনের লোকজন দেখলে নিজেকে ব্লগার-সাংবাদিক মনির পরিচয় দিয়ে চা-পানি খাবার কাজটা সেরে ফেলেন কৌশলে। বলে বেড়ায় আইটি সেকশনের কোন কাজ থাকলে আমাকে স্মরণ করবেন, এই নেন নাম্বার। বরিশালের ডিআইজি থেকে শুরু করে ঝালকাঠির ডিসি,সার্কেল এসপি,তাকে দিয়েই কাজ করান।

যদি কেউ এ ধরনের কাজটি ভুলেও করে ফেলেন তবে তার বারোটা না বাজিয়ে বাড়ি ফেরেনা মনির। কম্পিউটারের মধ্যে ডুকে অফিসিয়াল গোপনীয় ডকুমেন্ট কৌশলে পেনড্রাইভে নিয়ে চলে আসেন মনির।

শহরের সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি তেমন কেউ নেই যে ওর ছোবল থেকে বাদ পড়েছেন।

টানা বছর খানেক ফেসবুকে লিখেছেন প্রেসক্লাব তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আককাস সিকদার ও সদস্য মানিক আচার্য্যের বিরুদ্ধে। লিখেছেন ডেইলী অবজারভার প্রতিনিধি এসএম রহমান কাজল, সমকালের জিয়াউল হাসান পলাশ, চ্যানেল আই’র মানিক রায়, এনটিভির কেএম সবুজ, যায়যায়দিন’র এমদাদুল হক স্বপন, দৈনিক জনতার তৎকালীন প্রতিনিধি হাসনাইন তালুকদার দিবস, বাংলাদেশ প্রতিদিন’র এসএম রেজাউল করিম, নলছিটির যুগান্তরের তৎকালীন প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মনির, আমাদের সময়’র তৎকালীন প্রতিনিধি এসএম রাজ্জাক পিন্টু, এসএ টিভির অলোক সাহা, বাংলা টিভির নজরুল ইসলাম, একাত্তর টিভির তরুন সরকার, শাহনামার এইচএম দেলোয়ার, মানবজমিনের কায়কোবাদ তুফান, জাগো নিউজের আতিকুর রহমান, বিএমএসএফ জেলা সম্পাদক উপাধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু, মোহনা টিভির রুহুল আমিন রুবেল, ডিবিসি টেলিভিশনের আল আমিন তালুকদার, কাঠালিয়ার নির্যাতিত সাংবাদিক এইচএম বাদল ও ভোরের সময়’র বশির আহম্মেদ খলিফার বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, এসকল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ন মন্তব্য এবং গরু-ছাগলের সাথে ছবি দিয়ে ফেসবুকে ছেড়ে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। ওর কাছ থেকে রেহাই পায়নি ঝালকাঠির সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ্যাডিশনাল এসপি মাহমুদ হাসান। বাদ যায়নি পৌর মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার, জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর তরুন কর্মকার। প্রশাসনের মধ্যে ডিবির তৎকালীন ওসি কামরুজ্জামান মিয়া, সাবেক ওসি বর্তমানে রাঙ্গামাটির সার্কেল এসপি শীল মনি চাকমা, এসআই আমিনুল ইসলাম, এএসআই জালাল হোসেন।

এবার ওই মনির শহরের বিশিষ্ট ঠিকাদার ছানাউল হক সানু গাজীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ন মানহানীকর বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ফেসবুকে প্রচার করে মানহানী ঘটনায়। এ কারনে তিনি বাদী হয়ে গত ১১ এপ্রিল ঢাকার সাইবার ট্টাইব্যুনালে মনিরকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫-১ (ক) এবং ২৯ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি ঝালকাঠির ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবি মো: কাওসার হোসাইন।

মনিরের কবল থেকে রেহাই পায়নি পৌর কাউন্সিলর রেজাউল করিম জাকির, যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার ছগির হোসেন।

এ ব্যাপারে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার জেলা সভাপতি জিয়াউল হাসান পলাশ জানায়, মনির হোসেন নামে এই সংগঠনে কেউ নেই। যদি কেউ পরিচয় দেয় তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের জেলা সম্পাদক উপাধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু জানায়, মনির হোসেন নামে একজন সদস্য আছেন। তিনি সময়ের বার্তা প্রতিনিধি। এছাড়া আনন্দবাজার নামে কোন পত্রিকার মনির হোসেনকে আমরা সাংবাদিক হিসেবে চিনি না।

এদিকে ঝালকাঠি প্রেসক্লাব সভাপতি কাজী খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, মনির হোসেন নামের কোন সদস্য জীবিত নেই। তবে বিভিন্ন সংবাদকর্মীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে একজন মনির হোসেন ফেসবুকে লিখে অনেককে হয়রাণী করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মনিরের আক্রোশের শিকার মোহনা টিভি ও আলোকিত বাংলাদেশ’র প্রতিনিধি রুহুল আমিন রুবেল জানান, মনির টাকার বিনিময়ে একেক সময় একেক জনের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লিখে অর্থ হাতিয়ে নেয়। তার পাশে ২/৩জন চামচা থাকে। যারা লেখার পর ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির ধারে গিয়ে কিছু টাকার কথা বলেন। মাসিক চুক্তিতেও কেউ কেউ রেহাই পেয়ে থাকেন।

ঝালকাঠি টেলিভিশন সাংবাদিক সমিতির নির্বাহী সদস্য বাংলা টিভির প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম জানান, ওরমত একটা কুলাঙ্গার আমার বিরুদ্ধেও বারবার লিখেছে। বিভিন্ন সময় আমার কাছে টাকাও দাবি করেছে। চা-পানি খাইয়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলে ততক্ষনে লিখতোনা। যদি আবার মাথা গরম হতো তখন আবার কুরুচিপূর্ন লেখা শুরু করে মানহানী ঘটানোই এর নেশা ও পেশায় পরিনত হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষক, পুলিশ, অফিস স্টাফের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে উদ্বারের নামে টাকা পয়সা দাবি করে। যদি কেউ ওর চাহিদামত অর্থ দিতে না পারে তবে তার আইডিতে রাষ্ট্রবিরোধী ষ্টাটাস লিখে হয়রাণী করা ওর একমাত্র কাজ। ওর বিচার হওয়া জরুরী।

ঝালকাঠি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও দৈনিক আনন্দবাজার প্রতিনিধি এইচএম বাদল জানিয়েছেন, মনির নিজেকে ব্লগার দাবি করে বিভিন্ন সময় আমার কাছে টাকা পয়সা দাবি করত। বলতো তুমি কাঠালিয়া থেকে ঝালকাঠি এসে সাংবাদিকতা করবা, টাকা দিবেনা এটা হয় না। আমি তাকে টাকা পয়সা না দেয়ায় আমার বিরুদ্ধে চোর- ডাকাত বলে লিখেছে। আমি প্রতিবাদ করায় আমাকে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছে মনির।

আমাদের অর্থনীতির জেলা প্রতিনিধি মনিরের আক্রোশের শিকার এসএম রাজ্জাক পিন্টু জানায়, আমাকেসহ আমার মৃত পিতা জজ আলী মিয়াকে নিয়েও ওই মনির কুরুচিপূর্ন মন্তব্য লিখেছে। আমি চাই ওর মত কুলাঙ্গার নিপাত যাক। প্রচলিত আইনে ওর বিচার হোক।

এদিকে দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার বার্তা বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে মনির হোসেন নামে ঝালকাঠিতে কোন প্রতিনিধি নেই।

ঝালকাঠি থানার ওসিশোনিত কুমার সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মামলার কপি এখনও হাতে পাইনি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামির বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন