মহাদেবপুরে ঐতিহ্যবাহী হুর মেলা

  21-04-2019 04:54PM

পিএনএস, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় বয়ছে আনন্দের জোয়ার। বাড়ি বাড়ি চলছে বিভিন্ন উৎসব। উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের পল্লীগুলোতে সাজসাজ রব। গ্রামের জামাইদের দেয়া হচ্ছে দাওয়াত। করা হচ্ছে আদর-আপ্যায়ন। সেই সঙ্গে নাইওর আসছে গ্রামের মেয়েরা। এতো আয়োজন মূলত ঐতিহ্যবাহী হুর মেলাকে ঘিরে। প্রতি বছর বৈশাখের দ্বিতীয় সপ্তাহের রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার চেরাগপুর গ্রামে ঐতিহ্যবাহী এ মেলা হয়ে থাকে। গ্রামের বট গাছের নিচে অধাবেলা অর্থ্যাৎ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হুর হুর করে মেলা শুরু ও শেষ হয় বলে একে হুর মেলা বলা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে গ্রামের বটগাছের নিচে এ মেলা হয়ে আসছে। মাটির একটি ঘরের মধ্যে মন্ডব ও মাজার। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মন্ডবে আর মুসলমানরা মাজারে আসেন নিজেদের মনোবাসনা পূর্ণ করতে। মানত পুরণ হলে বৈশাখের দ্বিতীয় রবিবার তারা এসে মানত উদ্যেশে রান্না করে সবাইকে খাইয়ে থাকেন। একদিনের জন্য গ্রামে যেন আনন্দের জোয়ার বয়ে আসে। এটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় মেলা বলে দাবী করেন স্থানীয়রা।

মেলা উপলক্ষে মন্ডব ও মাজার প্রাঙ্গনে বসেছে বিভিন্ন দোকানপাট। বিশেষ করে কাঠের আসবাবপত্র, শিশুদের খেলনা, দৈনন্দিন পণ্যসামগ্রী, মেয়েদের সাজগোছের জিনিস থেকে শুরু করে তরমুজ, মুড়ি, দই, মিষ্টি, খৈসহ এমন কিছু নেই যা মেলায় উঠেনি। এসবই দরদাম করে কিনে নিয়ে যাচ্ছে ক্রেতারা। মেলায় শিশুদের জন্য রাখা হয়েছে নাগরদোলাসহ বেশকিছু আয়োজন। এসব দেখে শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও আনন্দে মেতে উঠেন।

বয়জ্যেষ্ঠ তাহের আলী বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে এ মেলা হয়। অনেকে তাদের মনোবাসনা পূরণ করতে মেলায় আসেন। আবার অনেকে এখানে পরিবারের সবাই দল বেঁধে এসে রান্না করে খান। এক কথায় মিলন মেলায় পরিনত হয়। তিনি আরো বলেন, মেলা বাংলার গ্রামীণ জীবনের সবচাইতে পুরানো ঐতিহ্য। মেলা মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি, মানবতাবাদী ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছে। আরেক বয়জ্যেষ্ঠ কফিল উদ্দিন বলেন, মেলাটি এ এলাকার ঐতিহ্য। ফলে মেলাকে ঘিরে বাংলার যে লোক ঐতিহ্য তা আরও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিবনাথ মিশ্র বলেন, এ মেলায় মাজার এবং মন্ডপ দুটোই আছে। মেলায় ধর্ম বর্ণ বির্নিশেষে বিভিন্ন এলাকা থেকে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের আগমণ ঘটে। আর আধাবেলা অনুষ্ঠিত এ মেলা থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে ওরুশে ছিন্নি ও তবারক উপস্থিত সবার মধ্যে বিতরণ করা হয়।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন